অষ্টাঙ্গযোগ বা রাজযোগ (Astanga Yoga or Raja Yoga) যোগশাস্ত্র মতে চিত্ত পাঁচ প্রকার। যথা—ক্ষিপ্ত, মূঢ়, বিক্ষিপ্ত, একাগ্র ও নিরুদ্ধ। রাজযোগের প্রবর্তক ঋষি পতঞ্জলির মতে চিত্ত নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আত্মোপলব্বিই মুক্তি লাভের উপায়। কিন্তু চিত্তকে সর্বাত্মক চেতনার অভিমুখে আনা সহজ কাজ নয়। পতঞ্জলি এই চিত্তকে শুদ্ধ, শান্ত স্থিরীকৃত করে আত্মোপলব্ধির অতিচেতন অবস্থায় পৌছানোর জন্য আটটি সোপানের নির্দেশ দিয়েছেন। তার এই যোগসাধনার সূত্রগুলি অষ্টাঙ্গযোগ (Eight Limbled Yoga) বলা হয়। মহর্ষি পতঞ্জলির অষ্টাঙ্গযোগের অঙ্গ বা সাধনগুলি হল যম (Yama), নিয়ম (Niyama), আসন (Asana), প্রাণায়াম (Pranayama), প্রত্যাহার (Pratyahara), ধারণা (Dharana), ধ্যান (Dhyana) এবং সমাধি (Samadhi)। এগুলি দেহের প্রত্যঙ্গ অর্থাৎ তারা সবাই একই দেহশিক্ষার অন্তর্গত ও প্রতিটি অপরিহার্য। প্রত্যেকটির বিজ্ঞানসম্মত ও নির্দিষ্ট যুক্তিসম্মত ধাপ বিদ্যামান। পতঞ্জলি তার যোগসূত্রে দর্শন এবং যোগশিক্ষার সারমর্ম জুগিয়েছেন অত্যন্ত বৈজ্ঞানিক ও শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে। আত্মশক্তি উপলব্বিই যোগের মূল উদ্দেশ্য। যে নিরাকার শক্তির উপস্থিতিতে আমরা জীবিত থাকি, যে শক্তি সমস্ত জীব ও জড়ের মধ্যে বিরাজমান, যে শক্তি সমস্ত বিশ্বব্ৰত্মাণ্ডে প্রকাশিত, সেই অনাদি ও অনন্ত শক্তি জীবদেহে আত্মা হিসেবে, পৃথিবীতে ঈশ্বর হিসেবে, বিশ্বব্ৰত্মাণ্ডে পরমাত্মা হিসেবে অভিহিত। এই শক্তির সম্যক উপলব্ধি ও নিয়ন্ত্রণই যোগের লক্ষ্য। এই পরম লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য যোগী বাইরের জগৎ ছেড়ে তার নিজের মধ্যেই আত্মোপলব্বির নিবিড় সাধনা করেন। আত্মার উপলব্বি হলে ঈশ্বর ও পরমাত্মার উপলব্বিও সম্ভব হয়। এরজন্য বিভিন্ন যোগী বিভিন্ন পদ অবলম্বন করেন।