আধুনিক জীবনশৈলী ও যোগের দ্বারা সুস্বাস্থ্য—আধুনিক মানুষের জীবনশৈলী তার স্বাস্থ্যরক্ষার ক্ষেত্রে একাধিক চ্যালেঞ্জ এনেছে। বিশ্বের সর্বত্রই আধুনিক
জীবনশৈলী অসংখ্য মানুষের নানারকম রোগব্যাধির অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে। উদ্বেগ-উত্তেজনা, বেঠিক
খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রম বিমুখ জীবনযাত্রায় ডেকে আনছে স্বাস্থ্য ও কর্মক্ষমতার অবনতি এবং মানুষকে ডায়াবেটিস, হাঁপানি, হৃদরোগ, বিপাকীয় অসুস্থতা এবং ক্যান্সারে আক্রান্ত করছে। প্রশ্ন হল এসব আধুনিক স্বাস্থ্য সমস্যার
সমাধানসূত্র কী যোগে নিহিত রয়েছে? যেহেতু এসব সমস্যার মূলে রয়েছে ভ্রান্ত জীবনশৈলী, তাই এগুলির প্রতিরোধে যোগের ভূমিকা খুব মূল্যমান। সেইসঙ্গে এটাও প্রমাণিত হয় যে, বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতাকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখা ঠিক নয়। জীবনশৈলী
ও মানসিক চাপজনিত বিভিন্ন সমস্যার সমাধানসূত্র যোগে রয়েছে। রোগ প্রতিরোধ, বিশেষ করে
মানসিক চাপজনিত ব্যাধিগুলির সুষ্ঠু পরিচালনা এবং সুস্বাস্থ্যের বিকাশে যোগের বৈজ্ঞানিক অবদান নিয়ে বিশ্বের
বিভিন্ন স্থানে গবেষণা-সমীক্ষা সম্পাদিত হয় স্বাস্থ্যের ওপর যোগের কল্যাণকর প্রভাব কতটা সেটা জানার জন্য শারীরবৃত্ত
সম্পর্কিত, জৈব রাসায়নিক, মানসিক ও ক্লিনিক্যাল ভেরিয়েবল বা ভেদগুলিকে নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার
সাহায্যে খতিয়ে দেখা হয় গবেষণার ফলাফল প্রমাণ করেছে যে অনুশীলনকারীর স্নায়ুতন্ত্র ও অন্তঃক্ষরা ব্যবস্থাকে চালিত
করে তারস্বাস্থ্যের কোশঘটিত ও আণবিক দিকগুলির ওপর যোগ অনুকূল প্রভাব ফেলে থাকে।
যোগের সাহায্যে যে ভারসাম্য অর্জিত হয় তা অনুশীলনকারীর প্যারাসিমপ্যাথেটিক ব্যবস্থা শক্তিশালী করে শারীরবৃত্তের ক্ষয় রোধ করে এবং বার্ধক্যগ্রস্ততাকে মন্থর করে দেয়। যোগচর্চায় দেহে যে আপেক্ষিক হাইপো মেটাবলিক অবস্থা সৃষ্টি হয় তা মানসিক চাপ সহ্য করার ক্ষমতাকে বহুলাংশে বর্ধিত করে। গবেষণা-সমীক্ষাগুলি আরও প্রমাণিত করেছে। যে যোগের দ্বারা দৈহিক ও বোধশক্তির বিকাশ ঘটে, উন্নতি ঘটে দেহের তাপনিয়ন্ত্রণকারী ব্যবস্থায়, বৃদ্ধি পায় দেহের নমনীয়তা ও মানসিক চাপ সহনের ক্ষমতা। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা মজবুত হয়ে ওঠার দরুন রোগ সংক্রমণের আশঙ্কাও হ্রাস পায়। হাইপারটেনশন, হৃদযন্ত্রের রক্ত সঞালক ধমনি বা করোনারি আর্টারির ব্যাধি এবং ডায়াবেটিসের প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির আনুষঙ্গিক হিসেবে যোগের কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। এসব রক্তব্যাধির চিকিৎসায় ওষুধ প্রয়োগের মাত্রা যোগের প্রভাবে হ্রাস পেয়ে থাকে এবং কার্ডিও ভাসকিউলার বা হৃদরোগের জটিলতা দূর করতেও যোগের ইতিবাচক ভূমিকা স্বীকৃতি পেয়েছে। যোগের কল্যাণকর ভূমিকা ত্রিস্তরীয়। দৈহিক স্তরে যোগ স্বাস্থ্য ও সুস্থতার অন্যতম অবলম্বন; দ্বিতীয় স্তরে মনের একাগ্রতাকে সুনিশ্চিত করে, মানসিক চাপ থেকে রেহাই দেয় ও কর্মক্ষমতা বাড়ায়; এবং তৃতীয় আত্মিক স্তরে যোগের দ্বারা মানবিক গুণাবলির বিকাশ ঘটে, জীবনে শান্তি ও স্বস্তি এনে দেয়