গিলফোর্ডের SOI মডেল বা বুদ্ধির ত্রিমাত্রিক তত্ত্ব

বুদ্ধি হল এক ধরনের মানসিক শক্তি যার সাহায্যে ব্যক্তি সুক্ষ, জটিল, বিমূর্ত বিষয়ে চিন্তা করতে পারে এবং ব্যাক্তি নতুন পরিবেশের সাথে অভিযােজন করতে পারে, বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান, দক্ষতা ও কৌশল আয়ত্ত করতে পারে।

বুদ্ধির বিভিন্ন তত্ব রয়েছে। এই তত্বগুলির জটিলতা, অস্পষ্টতা অসম্পূর্ণতার কারণে মনােবিদ জে. পি. গিলফোর্ড বুদ্ধির ওপর গবেষণায় উৎসাহিত হন। গিলফোর্ড ও তাঁর সহযােগীরা 1966 সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্বের পরীক্ষাগারে একাধিক অভীক্ষায় প্রাপ্ত ফলের Factor Analysis পদ্ধতির মাধ্যমে একটি তত্ব প্রকাশ করেন।

তিনি বুদ্ধির 150 টি উপাদানের কথা বলেছেন (5 × 5 × 6 = 150) এই উপাদান গুলির মধ্যে থাকা মিলের ওপর ভিত্তি করে গিলফোর্ড একে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করেছেন। এটিই বুদ্ধির ত্রিমাত্রিক তত্ব বা ধী-শক্তির গঠন তত্ব নামে পরিচিত।

গিলফোর্ডের মতে, প্রতিটি বিষয়বস্তুর সঙ্গে প্রত্যেক প্রকার প্রতিক্রিয়া যুক্ত হয় এবং তার ফলে যে কোন উপজাত ধারণা বা উৎপাদন গঠিত হতে পারে বুদ্ধির ত্রিমাত্রিক তত্বকে একটি ছকের মাধ্যমে ব্যক্ত করা হয়েছে। ঘনকের এক দিকে আছে প্রতিক্রিয়ার মাত্রা, অন্যদিকে আছে বিষয়বস্তুর মাত্রা এবং তৃতীয় দিকে আছে ফলশ্রুতি বা উৎপাদনগত মাত্রা। প্রতিক্রিয়ার মাত্রার 5টি শ্রেণি, বিষয়বস্তুগত মাত্রার 4টি শ্রেণি এবং উৎপাদনগত মাত্রার 6টি শ্রেণি। অর্থাৎ, মােট 5 × 4 × 6 = 120 টি বুদ্ধির উপাদান আছে।

বর্তমান বিষয়বস্তুগত মাত্রার প্রতীকরুপি বিষয়কে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে – দৃষ্টিগত ও শ্রবণজাত। ফলে বিষয়বস্তুর মাত্রার 4টির পরিবর্তে পাঁচটি শ্রেণি হয়েছে এবং বুদ্ধির মােট উপাদান হয়েছে 5 × 5 × 6 = 150। গিলফোর্ড উপাদান বিশ্লেষণের সাহায্যে এখনাে পর্যন্ত মােট 90 টি বুদ্ধির উপাদান আবিষ্কার করেছেন। অবশিষ্ট উপাদানগুলি আগামী দিনে আবিষ্কৃত হবে বলে গিলফোর্ডের ধারণা।

বুদ্ধির এই তিনটি মাত্রা হল – 1) প্রক্রিয়াগত মাত্রা (Operational Dimension) 2) বিষয়বস্তুগত মাত্রা (Content Dimension) 3) উৎপাদনগত মাত্রা (Product Dimension)। 

1) প্রক্রিয়াগত মাত্রা (Operational Dimension) :

যে সমস্ত মানসিক ক্রিয়া আমাদের বৌদ্ধিক আচরণ সম্পন্ন করে তাই হল প্রক্রিয়ার মাত্রা। গিলফোর্ড প্রক্রিয়ার মাত্রার পাঁচটি শ্রেণীর কথা বলেছেন। এগুলি হল – 

i) প্রজ্ঞা (Cognition): প্রজ্ঞা হল শিখন প্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক প্রক্রিয়া যার দ্বারা জ্ঞানগত বিষয় অনুধাবন করা যায়। 

ii) স্মৃতি (Memory): এটি একটি প্রাথমিক মানসিক প্রক্রিয়া যার দ্বারা জ্ঞানের বিষয়কে সংরক্ষণ করা যায় ও চেনা যায়। 

iii) কেন্দ্র প্রসারী চিন্তন (Divergent Thinking): কেন্দ্রপ্রসারী চিন্তনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল অভিনব সমাধান অনুসন্ধান। এই ধরনের চিন্তনের ফলে আমরা বিভিন্ন ভাবে চিন্তা করি যার ফলে আমাদের চিন্তা প্রসার ঘটে এবং নতুন কিছু অন্বেষনের প্রসার ঘটে। সৃজনশীল কাজের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া খুবই কার্যকরী।

iv) কেন্দ্রানুগ চিন্তন (Convergent Thinking): কেন্দ্রানুগ চিন্তনের মূল বৈশিষ্ট্য হল নির্দিষ্ট সমাধান অনুসন্ধান করা। অনেকগুলি তথ্যের ভিত্তিতে একক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘটে। 

v) মূল্যায়ন (Evaluation): আমরা যা জানি, যা ভাবি, যা স্মরণ করি, যা উৎপাদন করি তার নির্ভুলতা, নৈর্ব্যক্তিকতা, উপযুক্ততা, যথার্থতা বিচার করাই হল মূল্যায়ন। অর্থাৎ, কতকগুলি সমাধানের মধ্যে কোনটি সঠিক তা বের করা হয় মূল্যায়নের মাধ্যমে। 

2) বিষয়বস্তুগত মাত্রা (Content Dimension):

বৌদ্ধিক ক্রিয়া উদ্দীপিত হওয়ার জন্য এবং বৌদ্ধিক ক্রিয়া সম্পন্ন করার মাধ্যম হিসেবে যে উপাদানগুলি দরকার হয় সেগুলি হল বিষয়বস্তু। গিলফোর্ড বিষয়বস্তুগত মাত্রার চারটি শ্রেণীর কথা বলেছেন। এগুলি হল – 

i) চিত্রগত বা মুর্ত বিষয়বস্তু (Figural Content): গিলফোর্ড মুর্ত বিষয়বস্তু বলতে ইন্দ্রিয়ের দ্বারা অনুধাবন করা যায় এমন বিষয়বস্তু সমূহকে বােঝাতে চেয়েছেন। এখানে বস্তু ছাড়া অন্য কিছুকে বােঝানাে যায় না।

ii) প্রতীকরুপি বিষয়বস্তু (Symbolic Content): প্রতীকরুপি বিষয়বস্তু হল অক্ষর, সংখ্যা এবং অন্যান্য প্রথাগত সংকেত যা বিন্যস্ত থাকে। যেমন—বর্ণমালা, সংখ্যা শ্রেণি, আঙ্কিক চিহ্ন ইত্যাদি। 

iii) বিমূর্ত বিষয়বস্তু (Sementic Content): বিমূর্ত বিষয়বস্তু হল ভাষাগত বা ভাবগত অর্থ। যেমন- বিভিন্ন ধরনের প্রবাদ। 

iv) আচরণমূলক বিষয়বস্তু (Behavioural Content): আচরণমূলক বিষয়বস্তু বলতে বােঝায় পারস্পরিক ক্রিয়ায় ব্যবহৃত ভাষাহীন তথ্য, মানসিক বৈশিষ্ট্য, অনুভূতি ইত্যাদি উপলব্ধি করা। যার সাহায্যে নিজেদের ও অন্যান্যদের বােঝাবার এবং মেলামেশার ক্ষমতাকে বােঝায়। 

3) উৎপাদন বা ফলশ্রুতি :

বৌদ্ধিক ক্রিয়ার ফলে যে ধারণাগুলি উৎপন্ন হয় তাই হল উৎপাদন। গিলফোর্ড বলেছেন যখন কোন বিষয়বস্তুর ওপর প্রক্রিয়া কার্যকারী হয় তখন 6 ধরনের ফলশ্রুতি দেখা যায়। সেগুলি হল –

i) একক (Units): বিষয়কে কেন্দ্র করে দৃষ্টি, শ্রুতি এবং প্রতীকসহ জ্ঞান অর্জন করার ক্ষমতা হল একক। 

ii) শ্রেণি (Class): কোন শব্দ বা ভাবধারাকে শ্রেণীবদ্ধ করার ক্ষমতা। এর মাধ্যমে সাধারণ বৈশিষ্ট্য নির্ণয় করা যায়। 

iii) সম্পর্ক (Relations): বিভিন্ন বিষয় বস্তুর মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয়ের ক্ষমতা এবং ধারণাগত বিষয়বস্তুর মধ্যে সম্পর্ক আবিষ্কারের ক্ষমতা। এর সাহায্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য নির্ণয় করা যায়। 

iv) ব্যবস্থাপনা (System): বিষয়বস্তুর সংগঠন, প্রতীকধর্মী বিষয় সংগঠন এবং সমাধানের জন্য সমস্যা সংগঠন করার ক্ষমতা। এটি বিভিন্ন অংশের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন ও বিন্যাসকরণে সহায়তা করে। এর দ্বারা সূত্র গঠন করা যায়।

v) পরিবর্তনশীলতা (Transformation): কোন বস্তুর রূপান্তর ঘটলে কি অবস্থা হয়, বর্তমানে কোন ঘটনার পরিবর্তন ঘটলে কি হবে তা অনুমান করার ক্ষমতা এই অংশের অন্তর্ভুক্ত। 

vi) তাৎপর্য বিচার (Implications): তাৎপর্য বিচারের মূল বৈশিষ্ট্য হল প্রদত্ত তথ্য থেকে প্রত্যাশা মূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। কোন প্রত্যাশার ব্যাপকতা, বর্তমানের প্রেক্ষিতে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করার ক্ষমতা এর অন্তর্গত।

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

The site is not registered with quic. Wordpress › error. 二、新北市:healthy new taipei 社群.