- ভূমিকা (Introduction)
বিংশ শতাব্দীর সূচনায় শিক্ষিত ভারতবাসীর জীবনে যখন নতুন চিন্তা ও নতুন উৎসাহ দেখা দিল, ঠিক সেই সময় 1898 খ্রিস্টাব্দে বড়োলটি হয়ে ভারতবর্ষে এলেন লর্ড জন্ম নাথানিয়েল কার্জন। তিনি ছিলেন বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ও একজন দক্ষ প্রশাসক। কিন্তু উদ্ধত, জবরদস্ত, গোঁড়া, সাম্রাজ্যবাদী মনোভাবের জন্য তিনি তৎকালীন ভারতীয়গণের নিকট খ্যাতি ও বিশ্বাস অর্জন করতে পারেননি। তাঁর সর্বাধিক সংস্কারের পিছনে মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল ভারতের নবজাগ্রত জাতীয়তাবোধকে ধ্বংস করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত্তিকে সুদৃঢ় করা। এদেশের জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দের বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি তাঁর শিক্ষানীতিকে কার্যকর করতে বদ্ধপরিকর হয়েছিলেন। ভারতবর্ষের শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে কার্জনের শাসনকাল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
* সিমলা শিক্ষা সম্মেলন 1901 (Simla Conference – 1901)
কার্জনের আমলে এদেশে জাতীয়তাবাদী মনোভাব ভীষণ উগ্ররূপ ধারণ করেছিল। জাতীয় আন্দোলনের সঙ্গে জাতীয় শিক্ষার আন্দোলনও জোরদার হয়ে উঠেছিল। কার্জন সেই জাতীয়তাবাদী চেতনাকে ধ্বংস করার জন্য সুকৌশলে শিক্ষা সংস্কারের কথা ঘোষণা করেন। 1901 খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি সিমলায় ভারতের শিক্ষাসমস্যা আলোচনার জন্য এক সম্মেলন আহ্বান করেন। তাঁর সেই শিক্ষাসম্মেলনে কোনো ভারতীয়
প্রাথমিক শিক্ষা:
1) শিক্ষাখাতে সরকারি বরাদ্দ অর্থের বেশিরভাগই প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ব্যয় করা হবে।
2) বরাদ্দ অর্থ নিয়ে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠানগুলাে তাদের নিজ নিজ এলাকায় কেবলমাত্র প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে ব্যয় করবে।
3) প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রম হবে সহজ সরল। পাঠক্রমের মধ্যে দুটি পর্যায় থাকবে। শহরাঞ্চল এবং গ্রামাঞ্চলের প্রয়ােজন অনুযায়ী পৃথক পৃথক পাঠক্রম রচনা করতে হবে।
4) প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যম হবে মাতৃভাষা। পাঠক্রমের মধ্যে থাকবে শারিরশিক্ষা, প্রকৃতিপাঠ ও কৃষি বিদ্যা।
5) প্রাথমিক শিক্ষকদের শিক্ষাগত মান ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত সংখ্যক শিক্ষক শিক্ষণ বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে এবং শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির কথাও বলা হয়।
6) প্রাথমিক শিক্ষার মধ্য দিয়ে সমাজে গণ শিক্ষা বিস্তার করার কথা বলা হয়।
7) প্রাথমিক শিক্ষাকে আকর্ষণীয় করে তােলার জন্য নতুন নতুন শিক্ষা পদ্ধতি প্রযােগ করার কথা বলা হয়েছি।
৪) প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মানের উন্নতির জন্য যাকিছু করণীয় তা করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অঙ্গীকার দেওয়া হয়েছিল।
9) প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নের জন্য সরকার বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে অর্থ বরাদ্দ করবে, বেসরকারি বিদ্যালয় গুলি অনুদান পাওয়ার যােগ্য কিনা তা বিচার করা হবে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষার ফলাফলের উপর নির্ভর করে।
মাধ্যমিক শিক্ষা :
1) মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিকে সরকারি অনুমােদন নিতে হবে। এরফলে সমাজে যেমন অবাস্থিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমবে তেমনি বিদ্যালয় স্তরে নিয়ম-শৃঙ্খলা কঠোর হবে। ফলে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অনেকটাই সমস্যা কম হবে।
2) সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্তন্য সমস্ত ধরনের বিদ্যালয়কে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় উভয়ের থেকে অনুমােদন নিতে হবে বাধ্যতামূলকভাবে।
3) বিদ্যালয় গুলিকে বিশ্ববিদ্যালযের কঠিন নিয়ম মেনে চলতে হবে।
4) অনুমােদিত সরকারী ও বেসরকারী বিদ্যালয় গুলিকে প্রচুর আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে।
5) মাধ্যমিক শিক্ষার মাধ্যম হবে মাতৃভাষা তবে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার যথােপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
6) পাঠক্রমের মধ্যে আরাে নতুন নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যাতে পাঠক্রমে বৈচিত্র আছে। মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রম গুলিকে অধিকতর বাস্তবমুখী ও উপযােগিতা মূলক করার চেষ্টা করা হবে।
7) বিদ্যালয়গুলিতে পরিদর্শন ব্যবস্থা চালু করা হয় এবং কেবলমাত্র সরকারি স্বীকৃত বিদ্যালয় গুলির প্রবেশিকা পরীক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।
৪) মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা :
1) লর্ড কার্জনের প্রস্তাবে সিনেটের পুনর্গঠন করে তাকে কর্ম উপযােগী করতে সুপারিশ করা হয় এবং সিন্ডিকেটকে আইনগত মর্যাদা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
2) বেসরকারি কলেজগুলির মান উন্নত যাতে হয় তার জন্য কলেজগুলিকে সরকারি সাহায্যের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
3) নতুন কলেজ অনুমােদন করার পূর্বে ওই কলেজে শিক্ষার মান রক্ষিত হবে কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত করতে হবে এবং পুরাতন অনুমােদিত কলেজগুলি পরিদর্শনের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে।