ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন বা রাধাকৃষ্মন কমিশনের (1948-1949) Indian University Commission or Radhakrishnan Commission: (1948-1949)

পটভূমি (Background)

1947 খ্রিস্টাব্দের পরবর্তী সময় ভারতীয় শিক্ষা উদ্দেশ্যগতভাবে পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়। বৈদেশিক শাসনের পরিবর্তে দেশীয় শিক্ষা কোন্ পথে তার নির্ধারণ জরুরি হয়ে পড়ে। 2.0 ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় উচ্চশিক্ষার স্পষ্ট কোনো নীতি ও কৌশল ছিল না। উচ্চশিক্ষায় সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারণ, তার কাঠামো, আদর্শ, উদ্দেশ্য, আধুনিকতা সমস্ত কিছু মিলিয়েই ড. সর্বপল্লি রাধাকৃয়নের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠিত হল যেটি ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন বা রাধাকৃল্পন কমিশন হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত।

রাধাকৃষ্মন কমিশনের কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু:

(i) বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য,

(ii) বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত সংস্কার:

(a) গঠনতন্ত্র।

(b) কার্যক্রম।

(c) আইনগত পরিধি।

(d) কার্য পরিচালনা।

(iii) অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণ।

(iv) বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়ন।

(v) বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মাধ্যম।

(vi) সাহিত্য, বিজ্ঞান এবং সমাজবিজ্ঞানের মাধ্যমে উন্নত শিক্ষার ও ভারতীয় সংস্কৃতির বিকাশ।

(iii) আরও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের চেষ্টা।

(viii) উচ্চতর গবেষণা।

(ix) শিক্ষকদের বেতন-সংক্রান্ত উন্নতির ব্যবস্থা।

(x) কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি। (xi) শিক্ষার্থীদের Support Service বৃদ্ধি করা।

 

* উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য (Alms and objectives of Higher Education)

(i) স্বাধীনতা-উত্তর পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে জাতি গঠনে শিক্ষিত সমাজের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিমত প্রকাশ করেছে কমিশন।

(ii) গণতান্ত্রিক ভারতবর্ষের উন্নয়ন বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন প্রকার শিক্ষার প্রসারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। যেমন- প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, বৃত্তিমূলক শিক্ষা।

(iii) শিক্ষার মধ্য দিয়ে মূল্যবোধ, জাতিকল্যাণ ও মানব কল্যাণকে উন্নততর করতে হবে। (iv) শিক্ষা আমাদের জ্ঞানকে বিকশিত করে এবং জ্ঞান আমাদের প্রাজ্ঞ বা প্রকৃষ্টরূপে জ্ঞানী করে তোলে। কমিশনের মতে “Education is both a training of minds & training of souls, it should give both knowledge and wisdom. ”

(v) শিক্ষার মাধ্যমে Equality, Social Justice অর্থাৎ সমতা বা ন্যায়বিচার প্রসঙ্গে সচেতনতা বৃদ্ধি উচ্চশিক্ষার একটি বিশেষ উদ্দেশ্য।

(vi) বিশ্ববিদ্যালয়গুলি হবে স্বশাসিত। উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে বিশ্বনাগরিকতাবোধ জাগ্রত করা হবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য। (vii) শিক্ষায় সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় কোনো বৈষম্য থাকবে না।

(viii) সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস বা জাত/ধর্ম বা অন্য কোনো বিভাজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষায়

গ্রহণ করা হবে না।

* পাঠ্যক্রম (Curriculum)

(i) পাঠক্রম হবে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে চিন্তা করার একটি মাধ্যমে। উচ্চশিক্ষা গতানুগতিক হবে না। সৃজনশীল এবং আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন হবে।

(ii) বৃত্তিমূলক শিক্ষায় পাঠ্যক্রম বিশেষ গুরুত্ব পাবে।

(iii) প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কৃষিবিদ্যার ব্যবস্থা রাখতে হবে। (iv) কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের জন্য 12 বছর বিদ্যালয় শিক্ষার ব্যবস্থা থাকবে।

(v) পাশ ও অনার্স কোর্সের সময়সীমা থাকবে 3 বছর করে। পাশ কোর্সের ছাত্ররা 2 বছর পর এবং অনার্স কোর্সের ছাত্ররা 1 বছর পরে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করবে।

(iii) শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য Refresher Course সহ অন্যান্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

(iv) বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও বিজ্ঞান বিভাগ-সহ 300-র বেশি শিক্ষার্থী নেওয়া চলবে না। কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সর্বোচ্চ 1500 হবে।

(v) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে working days হবে সারা বছর 180 দিন। পরীক্ষার দিনগুলি এর মধ্যে বিবেচিত হবে না।

(vi) গ্রন্থাগারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের শিক্ষণ প্রক্রিয়াগুলিকে পরিচালনা করবে। Reading facility, Lending facility ও অন্যান্য বিভিন্ন কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের পঠনপাঠনে সহযোগিতা করবে। গবেষণার জন্য গ্রন্থাগার বিশেষ ভূমিকা নেবে।

★ শিক্ষক (Teacher)

(i) রাধাকৃষ্মন কমিশনের মতে, “The teacher is the corner stone of the arch of education; he is no less if not more than books & curricula, learning and equipment, administration and the…” কমিশন সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রে শিক্ষকের নেতৃত্বকেই চূড়ান্ত বলে মনে করেছে, শিক্ষার আনুষঙ্গিক উপাদান নয়, শিক্ষকের ভূমিকাই শিক্ষাক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। (ii) শিক্ষক হবেন উন্নত চরিত্র, জ্ঞানী এবং বিভিন্ন গুণের অধিকারী।

(iii) জাতি ও রাষ্ট্র গঠনে শিক্ষকের ভূমিকার কথা কমিশন স্বীকার করেছে। (iv) শিক্ষাগত যোগ্যতার বিচারে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে— (a) প্রফেসর (b) রিডার (c) লেকচারার (d) ইনস্ট্রাকটর (v) শিক্ষকদের পদোন্নতি তাদের দক্ষতা ও কর্মসম্পাদনের ক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল। (vi) শিক্ষকদের অবসরের বয়স হবে 60 বছর। কর্মদক্ষতার ওপর নির্ভর করে আরও

চার বছর বৃদ্ধি করা সম্ভব।

শিক্ষার মাধ্যম (Method of Education)

(i) সর্বভারতীয় ভাষা হবে হিন্দি । (ii) ভাষার ক্ষেত্রে তিনটি ভাষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হবে। একটি অঞ্চলিক ভাষা, অন্য দুটির মধ্যে একটি হবে রাষ্ট্রীয় ভাষা এবং অন্যটি হবে ইংরেজি।

(iii) বৈজ্ঞানিক পরিভাষার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ভাষাকে অবলম্বন করতে হবে। (iv) উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ইংরেজির পরিবর্তে একটি ভারতীয় ভাষাকে গ্রহণ করতে হবে।

 

মূল্যায়ন (Evaluation)

  • মূল্যায়ন পদ্ধতির আমূল সংস্কারের কথা কমিশন বলেছেন।

(ii) প্রচলিত পরীক্ষার ত্রুটিবিচ্যুতি সম্পর্কে কমিশন বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেরচনাধর্মী প্রশ্নের পরিবর্তে বিষয়মুখী প্রশ্নকেই পদ্ধতির প্রাধান্য হিসেবে গ্রহণ করে বলা হয়েছে।

(iii) বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মূল্যায়ন পদ্ধতির মধ্যে সমতা আনতে হবে। (iv) Internal marks-এর মাধ্যমে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ নম্বর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

(v) মৌখিক পরীক্ষা চালুর সুপারিশ করা হয়।

(vi) তিনটি বিভাগে সামগ্রিক মূল্যায়নের নম্বর ধার্য হন-প্রথম বিভাগ= 70%দ্বিতীয় বিভাগ =55% তৃতীয় বিভাগ =40%

 

* ধর্মশিক্ষা (Religious Education)

(i) রাধাকৃষ্মণ কমিশন ধর্মশিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছিল। দৈনন্দিন প্রাতিষ্ঠানিক কাজ শুরু করার আগে ধ্যান করতে হবে মানসিক সংযমের জন্য। (ii) ডিগ্রি কোর্সের প্রথম বছরে ধর্মগুরুদের জীবনী পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা থাকবে।

(iii) ডিগ্রি কোর্সের দ্বিতীয় বছর শ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থগুলি থেকে সর্বজনীন আবেদনপূর্ণ বাণী পাঠ্যক্রমে আলোচিত হবে। (iv) ডিগ্রি কোর্সের তৃতীয় বছরে ধর্মতত্ত্বের মূল বিষয়গুলি পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হবে।

 

ছাত্র কল্যাণ (Student Welfare)

(i) শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক কল্যাণের একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হবে। (ii) শিক্ষার্থীদের নানারকম সমাজকল্যাণমূলক কাজে উৎসাহিত করতে হবে।

(iii) সমাজকল্যাণের পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের শরীরচর্চার ওপর বিশেষ যত্নবান হতে

হবে। (iv) উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলিতে স্বাস্থ্যপরীক্ষার ব্যবস্থা থাকা দরকার।

(v) বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে শারীরশিক্ষা ও খেলাধুলার বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষাদানের উপযুক্ত ব্যবস্থা ও কাঠামো বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে রাখতে হবে।

নারীশিক্ষা (Women Education )

(i) উচ্চশিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এবং নারীশিক্ষার সুযোগ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়স্তরে বৃদ্ধি করতে হবে।

(ii) Coeducational College-এ মেয়েদের সুযোগসুবিধা, স্বাচ্ছন্দ্য ও তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Why national building regulations. Burhani traders pen raigad. About us dm developments north west.