রাধাকৃষ্ণের লীলারসের বর্ণনায় সার্থক ভূমিকারূপে যে পদগুলিতে চৈতন্য বর্ণনা ও রাধাকৃষ্ণ লীলারস যুগপৎ প্রকাশ পায় তাকেগৌরচন্দ্রিকা বলে। গৌরাঙ্গ বিষয়ে যে পদগুলি গৌরাঙ্গদেবের পার্থিব জীবনের ছবি মাত্র, যে পদগুলিতে তাঁকে কৃষ্ণের অবতার ঈশ্বর প্রতিমরূপে দেখা হয়েছে সেগুলি বিশুদ্ধগৌরচন্দ্রিকানয়। গৌরচন্দ্রিকার ক্ষেত্রটি হল স্বতন্ত্র। গৌরচন্দ্রিকার অর্থ সেখানে যোগারূঢ়।
কেবলমাত্র পালাবদ্ধ রসকীর্তনের ক্ষেত্রেই এর বিশেষ অধিকার। বিভিন্ন পদকর্তা রচিত সমরসের পদাবলী ক্রমানুসারে সাজিয়ে কীর্তনীয়রা বিভিন্ন রাগে ও লয়ে যে গান পরিবেশন করেন তাকে বলা হয় পালাকীর্তন। পদকীর্তন ও পালাকীর্তন শুরু হবার পর থেকে রাধা-কৃষ্ণ লীলাকে পূর্বরাগ, অনুরাগ, অভিসার, মান, মাথুর প্রভৃতি পর্যায়ে শ্রেণী বিন্যস্ত করা হয়েছে, লীলার বিবর্তন ও উদ্বর্তন ভালো করে অনুভব করার জন্য। এই জাতীয় কীর্তনের শুরুতে পালার রসদ্যোতক যে গৌরপদ ভক্তিসহকারে শ্রোতাদের কাছে নিবেদিত হয়। তাই প্রকৃতপক্ষে গৌরচন্দ্রিকা।
গৌরচন্দ্রিকে কেন্দ্র করে রচিত পদমাত্র গৌরচন্দ্রিকানয়। গৌরাঙ্গের বহিরঙ্গ ও অন্তরঙ্গ জীবনের যে কোনো প্রসঙ্গ অবলম্বনে রচিত পদকে গৌরাঙ্গ বিষয় পদরূপে চিহ্নিত করা হয়। সব গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদগুলি রাধা-কৃষ্ণ লীলার পালাকীর্তনে মুখবন্ধ হিসাবে গীত হবার যোগ্য নয় ।
যেমন- ‘পতিত হেরিয়া কাঁদে’– ইত্যাদি পদে যে চিত্র অঙ্কিত হয়েছে তা ‘বরণ আশ্রম কিঞ্চন অকিঞ্চন’ – নির্বিশেষে প্রেম বিতরণকারী পতিত পাবন গৌরচন্দ্রের। এটা গৌরচন্দ্রিকা নয়। বস্তুত রাধা-কৃষ্ণ লীলার সঙ্গে যে গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদগুলি ভাবগত ও রসগত ঐক্য থাকে সেই গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদগুলি গৌরচন্দ্রিকা হিসাবে গীত হয়। যেমন-
নীরদ নয়নে নীর ঘন সিঞ্চনে
পুলক মুকুল অবলম্ব।
স্বেদ মকরন্দ বিন্দু বিন্দু চুয়ত