মেঘনাদবধ কাব্যের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।

রামায়ণ এ যেভাবে রাম রাবণের যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিলো এখানেও সেই কাহিনী ই বর্ণনা আছে। কিন্তু রামায়ণে রাবণ ছিলো রাক্ষস, অত্যাচারী, পাষন্ড টাইপের আর মেঘনাদবধ কাব্যে লেখক মুল কাহিনী কে অক্ষুন্ন রেখে রাবণ কে মানবিক গুণে গুণান্বিত করেছেন। কাব্যের রাবণ হলো আদর্শ স্বামী, দেশপ্রেমিক, সাহসী বীর, পুত্র বাৎসল্য ইত্যাদি। কাব্যের প্রধান চরিত্রগুলো হলো-

১। মেঘনাদ (যে কিনা দেশকে রক্ষা করার জন্য যুদ্ধ করেন রাম লক্ষণ এর সাথে। সে ইন্দ্রজিৎ নামে পরিচিত। ঘরের শত্রু বিভীষণ এর জন্যে মেঘনাদের মৃত্যু হয়।)
২। রাবণ ( তিনি এই কাব্যের নায়ক। তার মতো সাহসী বীর যখন পুত্র শোকে কাতর হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে অসহায় হয়ে যায় তখন তার দুঃখে পুরো লঙ্কাপুরি, দেবতারা এমন কি রাম লক্ষণ ও শোক প্রকাশ করে।)
৩। প্রমীলা (সাহসী নারীর ভূমিকায় অনন্য। এমনকি স্বামীর প্রতি অগাধ ভালোবাসায় সে সহমরণ এ যায়)

আমার কাছে রাম লক্ষণ থেকে রাবণ আর মেঘনাদ কে ভালো লেগেছে । লক্ষণরা অন্যায় ভাবে যুদ্ধ করেছে আর দেবতাদের সাহায্য নিয়ে রাবণদের পরাজিত করেছে। মেঘনাদকে যখন লক্ষণ হত্যা করতে যায় তখন সে বলেছিলো, আমি তো নিরস্ত্র। আর আমাকে মারতে হলে পিছন দিক দিয়ে আঘাত না করে সম্মুখে যুদ্ধ করো । কিন্তু লক্ষণ নিরস্ত্র মেঘনাদ কে হত্যা করে।

মেঘনাদবধ কাব্যটি যে-ভাষায় যেমনভাবে লেখা হয়েছে তা আজকের গতানুগতিক সাধারণ পাঠকের পক্ষে বোঝা প্রায় অসম্ভব। এই কাব্য পড়ে আনন্দ পেতে হলে পাঠককেও অন্তত কিছুটা পণ্ডিত হতে হবে। তা না হলে এ-কাব্যের রস উপলব্ধি করা সম্ভব নয়।

মাইকেল মধুসূদন দত্তের এ-রচনাটি বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ কয়েকটি বইয়ের মধ্যে একটি। পাঠকরা ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ না পড়ুক, অন্তত বইটির কাহিনী জানুক। সাধারণ পাঠকের জন্য মোটামুটি সহজ ভাষায় গদ্য আকারে ‘মেঘনাদবধ কাব্য’টি নতুনরূপে প্রকাশ করেছেন হায়াৎ মামুদ।

গদ্য ভার্সনটিতে কিছু কিছু অসুবিধে হয়তো পাঠকের হবে। কেননা প্রায়শই একই লোককে বোঝানো হয়েছে অনেক নাম দিয়ে, তাই লোকটিকে চিনতে অসুবিধে হতেই পারে। যেমন যিনি দেবী দুর্গা, তিনিই পার্বতী, তিনিই আবার উমা, তিনিই শিবানী—এরকম আর কি। এই অসুবিধে দূর করার জন্য বইয়ের শেষে তিনি এরকম একটি তালিকা দিয়ে দিয়েছেন। চরিত্র বুঝতে পাঠকের গণ্ডগোল হলে ঐ তালিকা দেখে নিলেই আর সমস্যা থাকবে না।

কঠিন-কঠিন বেশ কিছু শব্দও এ- বইয়ে পাওয়া যাবে। দুরূহ শব্দের জায়গায় সহজ শব্দ নিশ্চয়ই ব্যবহার করা যেত, কিন্তু তাতে গল্পের যে-পটভূমি, গুরুগম্ভীর আমেজ, ভারিক্কি চাল—সব নষ্ট হত। ভুলে গেলে চলবে না যে মাইকেল কেবল কোনো দীর্ঘ কাহিনীকাব্য লিখতে চান নি, তিনি লিখেছিলেন ‘মহাকাব্য’। যা হোক, বোঝার সুবিধের জন্য অপরিচিত ও কঠিন শব্দাবলির অর্থ ও পরিচিতিও দেওয়া আছে বইয়ের শেষে।

তারপরেও এখানে এমন অনেক শব্দ হয়তো পাওয়া যাবে, যেগুলো পাঠকের কাছে দুরূহ বলে মনে হতে পারে। সে-ক্ষেত্রে লেখক অনুরোধ করেছেন সঙ্গে সঙ্গে অভিধান দেখে ঐ শব্দগুলোর অর্থ জেনে নিতে। ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ সম্পূর্ণ হয়েছে নয়-টি সর্গে। গদ্য ভার্সনটিতে গল্প বলার সুবিধার্তে আঠারটি পরিচ্ছেদে ভাগ করেছেন।

l মূল কাহিনীর আসল ঘটনার কোনো কিছু বাদ না দিয়েও পরিসর অনেকখানি ছোট করা গেছে। এই বইটিতে কেবল ‘পূর্বকাহিনী’ অংশটি যোগ করেছেন। কারণ গল্পের শুরুর এই দিকটা না-জানলে পরের কাহিনী বুঝতে অসুবিধে হতে পারে। এরপরও যদি কারও মনে হয়, এই নতুন করে গদ্যে লেখা ‘মেঘনাদবধ কাব্যে’র ভাষা তেমন সহজ নয়, তাহলে লেখকের উত্তরঃ “দুধ হজম হয় না বলে ঘোল দিচ্ছি; ঘোলও না দিলে তো পানি দিতে হয়! কিন্তু দুধের বিকল্প কি পানি? স্বাদও এক নয়, গুণেও আসমান-জমিন ফারাক।”

গদ্যরূপের প্রধান উদ্দেশ্য হলো বইটি পড়ে যেন পাঠক মাইকেল মধুসূদন দত্তের মূল গ্রন্থ পড়তে উৎসাহ পায়। তাই প্রথমে গদ্যরূপটি দিয়ে শুরু করে তারপর মাইকেল মধুসূদন দত্তের মূল ‘মেঘনাদবধ কাব্য’টি পড়তে পারেন। এই লেখাটির নিচে সবগুলো বইয়ের পিডিএফ সংযুক্ত করা আছে। আপনার ইচ্ছেমত যেটা ভালোলাগে সেটাও পড়ে ফেলতে পারেন এখনি।

‘মেঘনাদবধ কাব্য’ বাংলা সাহিত্যের সর্বপ্রথম মহাকাব্য এবং মাইকেল মধুসূদন দত্তের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি ও অক্ষয় অবদান। ১৮৬১ সালে দু’টি খণ্ডে এই বই প্রকাশিত হয়। মধুসূদনের (১৮২৪-৭৩) জীবন খুব নাটকীয়। অত্যন্ত ধনাঢ্য পরিবারে জন্মেছিলেন। নিজেও কম টাকাকড়ি উপার্জন করেন নি। তবু আর্থিক কষ্ট ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী । দু-বার পত্নী গ্রহণ করেছিলেন—দু-জনই বিদেশিনী। হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিষ্টান হয়েছিলেন। জীবনযাপন ছিল সম্পূর্ণ ইউরোপীয় ধাঁচে, একেবারে সাহেববাবুর মতো। বাংলা প্রায় বলতেনই না, চিঠিপত্রও সবই ইংরেজিতে।

সংক্ষিপ্ত কাহিনী

মেঘনাদবধ কাব্যে রামের পিতা দশরথের নির্দেশে রাম-সীতার বনবাস শুরু হয়, সাথে আসে ভ্রাতৃভক্ত লক্ষ্মণ।
রাবণ ভগ্নি (রাবণ বোন) সূর্পণখা প্রথমে রামের সাথে প্রেম করতে চায়, রাম লক্ষ্মণ কে দেখিয়ে দেয়। সূর্পণখা লক্ষ্মণকে বিরক্ত করা শুরু করে তখন লক্ষ্মণ সূর্পণখার নাক-কান ছেদন করে অপমান করে। রাবন তার বনের অপমানের শোধ নিতে সন্ন্যাসী বেশে পন্ঞ্চবটী বনে গিয়ে সীতাকে হরন করে লঙ্কার রাজবাড়ী অশোকবনে নিয়ে আসে। রথে আসতে সীতা অলঙ্কার খুলে পথে পথে ছড়িয়ে রাখে। সেই চিহ্ন ধরে রামের বিশাল বাহিনী লঙ্কায় প্রবেশ করে।

সীতা উদ্ধারের জন্য লঙ্কায় রাম-লক্ষন আর রাবণের যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধে রাবণ পুত্র বীরবাহু সহ লঙ্কার লাখ লাখ বীর সন্তান অকাতরে প্রাণ দেয়। এ সংবাদ পেয়ে ইন্দ্রজিৎ (মেঘনাদ) যুদ্ধে আসবে। যুদ্ধে যাওয়ার আগে পিতার নির্দেশে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগানে পূজার জন্য যায়। ঐ সময় বিভীষণের সহযোগিতায় লক্ষ্মণ যঙ্গাগারে প্রবেশ করে। তখন লক্ষ্মণ কাপুরুষের মতো নিরস্ত্র মেঘনাদকে পেছন দিক দিয়ে ছুরিকাঘাত করায় মেঘনাদ মারা যায়। এখানে বিভীষণ কে ঘরের শত্রু বলা হয়। মেঘনাদ এর সাথে তার স্ত্রী প্রমীলা সহমরণ হয়।

তখন সেই খবর শুনে রাবণ শোক সীমাহীন প্রান্তে পৌছে। সে বের হয় যুদ্ধে। রাবণকে দেখে রাঘব সৈন্যরা ভয়ে পথ ছেড়ে দেয়। কিন্তু রাম তার সাথে যুদ্ধের জন্য আসে। বীর রাবণ তারই পুত্রের হন্তা লক্ষ্মণ কে খুঁজছে। তার শিকার হচ্ছে লক্ষ্মণ। ফলে সে রামকে বলেছে যে আগে লক্ষ্মণ কে বধ করবে। ফলে রাম ঘরে ফিরে যাক। লক্ষ্মণ কে মেরে তারপর রাবণকে মারবে।

তারপর রাবণ লক্ষ্মণ কে বধ করলে রাম শোকাকুল হয়ে দেবতার কাছে লক্ষ্মণের প্রাণভিক্ষা চায়। পরে তার বাবা দশরথ এর কাছে নিয়ে গেলে সে বলে গন্ধমাদন নামক গিরির শৃঙ্গদেশে বিশল্যকরণী নামক হেমলতা রয়েছে, সেই লতা সংগ্রহ করে আনতে পাড়লে লক্ষ্মণ প্রাণ ফিরে পাবে। তখন সে প্রাণ ফিরে পায়। সেই খবর শুনে রাবণ তার নিজের ভাগ্য কে দোষ দেয়। তখন রাবণ রামের কাছে ৭ দিনের সময় নিয়ে মেঘনাদের অন্তস্টিক্রিয়া সম্পন্ন করে, এবং মেঘনাদ এর সাথে প্রমীলা সহমরন হয়।

মুলতো এই কাব্য সুর্পনাখাকে নিয়েই হয়েছে, সুর্পণাখা প্রেম বিনিময় না করলে লক্ষ্মণ নাক কান ছেদন করতো না আর তার এই অপমানের জন্য রাবন সীতাকেও হরন করতো না, আর বীরবাহুর মেঘনাদ মারাও যেত না। ইত্যাদি।
ধন্যবাদ। এইটুকু জাস্ট একটা নির্যাস। পুরো কাব্যটি পড়ে বাংলা সাহিত্যের এই মহাকাব্যের স্বাদ আস্বাদন করুন।

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Why national building regulations. Gpj nxtgen infrastructure private limited. Dm developments north west.