ভারতের জাতপ্রথা হিন্দুসমাজের ইস্পাত কাঠামো’ হিসাবে সুচিহ্নিত। অতীতে হিন্দুধর্ম সমস্ত হিন্দুদের মধ্যে সাংস্কৃতিক একতা প্রতিষ্ঠা করেছিল। কিন্তু তা সামাজিকভাবে হিন্দুদের ক্রমবর্ধমান হারে গোষ্ঠী অথবা উপগোষ্ঠীতে বিষক্ত করে ফেলেছিল। জাতপ্রথা হল অগণতান্ত্রিক ও কর্তৃত্বপরায়ণ। বুটের (Buch) জন্ম অভিজ্ঞতা স্বীকৃত গুণগত স্বীকৃতি এতে নেই। জাতপ্রমার ফলে ব্যক্তির মেধা ও যোগ্যতা সহদে ও স্বাভাবিকভাবে বিকাশলাভ করতে পারে না। ……. জাতীয়তাবোধের বিস্তার ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগঠন প্রচেষ্টা জাতপ্রথার দ্বারা ব্যাহত হয়। এই প্রথাই অস্পৃশ্যতা সমস্যার সৃষ্টি করেছে।
স্বাধীনতা লাভের পর বর্তমানে ভারতে জাতিব্যবস্থা অধিকতর শক্তি অর্জন করেছে। সামাজিক শক্তি হিসাবে জাতিব্যবস্থার প্রভাব কমে এসেছে, একথা মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে জাতিব্যবস্থা অধিকতর শক্তিশালী হয়েছে। নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন, দলীয় প্রচারকার্য পরিচালনা, মন্ত্রীসভার সদস্যবাস্থাই সরকারের নীতি ও সিদ্ধান্ত প্রভৃতি ভারতীয় রাজনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতিগত বিচার-বিবেচনার প্রাধান্য পরিল
বস্তুত, অবচেতনভাবে ভারতের রাজনীতি বহুলাংশে জাতিগত রূপ ধারণ করেছে। ভারতীয় রাজনীতিতে হাত-পাতের ভূমিকা সম্পর্কে নিম্নোক্ত বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ
(১) জাতিব্যবস্থা হল সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতীক। সাময়তান্ত্রিক সমাজব্যবস্থাতেই সাবেকী জাতিব্যবহার দাপট দেখা যায়। ভারতে এখনও সামন্ততন্ত্রের মূলোচ্ছেদ ঘটেনি। গ্রামাঞ্চলে এর প্রভাব স্পষ্ট। এ. আর. দেশাই মন্তব্য করেছেন যে শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলের রাজনীতিক জীবনেই জাত-পাতের প্রভাব অধিক। জাত- পাতের বিবেচনার দ্বারাই গ্রামাঞ্চলে নির্বাচনী প্রচার ও রাজনীতিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ হয়। শহরাঞ্চলের তুলনায় নাঞ্চলে অশিক্ষা, দারিদ্র, কুসংস্কার বেশী। ঐ সমস্ত বিষয় জাতিব্যবস্থাকে গ্রামাঞ্চলে স্থিতিশীল করেছে। আবার সেখানে বিভিন্ন জাতির মধ্যে বিরোধও দেখা যায়।
(২) বিগত কয়েক দশকে ভারতের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে এবং জাত-পাতের আকৃতি-প্রকৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন সুচিত হয়েছে। জানিতামার মালিকানা অনভিজ্ঞ জাতির হাত থেকে ক্রমশ কৃষিজীবীদের কাছে যাচ্ছে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষিজীবী জাতির রাজনীতিক প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়ছে এবং এইভাবে মহারাষ্ট্রের মারাঠা, উে পশ্চিমাংশে ও হরিয়ানার জাঠ এবং অন্ধ্রের রেড্ডি সম্প্রদায়ের প্রভাব বাড়ছে।
(৩) ধর্মনিরপেক্ষতা, সার্বজনীন ভোটাধিকার, রাজনীতিক সংগঠনে সর্বজনীন চেহারা, চরিত্র, পঞ্চায়েত ব্যবস্থা পেশাগত প্রতিষ্ঠানের বিস্তার, অর্থনৈতিক ক্ষমতা প্রভৃতি জাতিব্যবস্থাকে প্রভাবিত ও পরিবর্তিত করেছে।
। জাতিগত বিবাদ-বিসংবাদ সৃষ্টির কারণ :
(১) একদিক থেকে বিচার করলে ভারতে জাতিগত বিরোধের পিছনে সরকারী নীতি ও সিদ্ধান্তের দারিত্ব বা নয়। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য, উভয় পর্যায়ের সরকারকে দায়বদ্ধ করা যায়।
মূল্যায়ন ভারতের সমাজব্যবস্থায় জাত-পাতের সমস্যা দূর করা দুরূহ ব্যাপার। যাইহোক ভারতীয় রাজনীতির বহু ও বিভিন্ন নির্ধারক আছে। জাতিব্যবস্থা সেইসমস্ত নির্ধারকের মধ্যে একটি। বর্তমানে কোন কর্তৃত্বকারী জাতির হাতে এককভাবে রাজনীতিক ও অর্থনীতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত নেই। ভারতের সামাজিক ও রাজনীতিক ক্ষেত্রে জাতিভেদ ব্যবস্থার অবসান অভিপ্রেত। এ বিষয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। কিন্তু কবে এই বাসনা বছরে পরিপূর্ণতা পাবে তা আমাদের অবগতির আগোচরে।