মন্ত্রীপরিষদের গঠন-
ব্রিটেনের অনুকরণে বারতে মন্ত্রীপরিষদ পরিচালিত শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে। সংবিধানের ৭৪ (১) নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্রপতিকে তাঁর শাসনকার্য পরিচালনার সাহায্য ও পরামর্শদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি মন্ত্রীপরিষদ থাকবে। লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতাকেই রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন। অন্যান্য মন্ত্রীগণ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি দ্বারা নিযুক্ত হন। মন্ত্রীপরিষদের সদস্যগণকে পার্লামেন্টের যে কোনো কক্ষের সদস্য হতে হয়। পার্লামেন্টের সদস্য নন, এমন কোনো ব্যক্তি যদি মন্ত্রীপদে নিযুক্ত হন তাহলে তাকে ৬ মাসের মধ্যেই পার্লামেন্টের যে কোন কক্ষের সদস্য হতে হয়, নতুবা তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়।
সাধারণ ভাবে মন্ত্রীপরিষদের কার্যকালের মেয়াদ ৫ বছর তবে এই সময়ের মধ্যে যদি লোকসভা ভেঙ্গে যায়, তাহলে মন্ত্রীপরিষদও ভেঙে যায়। আবার, লোকসভায় মন্ত্রীপরিষদের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাস হলে অথবা লোকসভায় কোনো সরকারী প্রস্তাব বা বিল নাকচ হয়ে গেলে অথবা প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে মন্ত্রীসভার পতন ঘটে। জরুরী অবস্থায় লোকসভার মেয়াদ ১ বছর বাড়লে মন্ত্রীসভার মেয়াদও ১ বছর বৃদ্ধি পায়।
কতজন সদস্য নিয়ে মন্ত্রীপরিষদ গঠিত হবে বা ক’ধরনের মন্ত্রী থাকবে, এ নিয়ে সংবিধানে কিছু বলা নেই। তবে ব্রিটেনের মতো ভারতে তিন শ্রেণীর মন্ত্রী থাকতে দেখা যায় –
ক) ক্যাবিনেট মন্ত্রী
খ) রাষ্ট্র মন্ত্রী
গ) উপ মন্ত্রী
ক্যাবিনেট মন্ত্রীগণ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলির দায়িত্বে থাকবে। সরকারের নীতি নির্ধারণ ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে ক্যাবিনেট মন্ত্রীরাই মূখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে।
রাষ্ট্রমন্ত্রীগণ অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের দায়িত্ব পান। আবার, কোনো ক্যাবিনেট মন্ত্রীর অধীনেও রাষ্ট্রমন্ত্রী থাকতে পারেন।
গুরুত্ব ও মর্যাদার দিক থেকে উপমন্ত্রীরা হলেন তৃতীয় শ্রেণীভুক্ত। তাঁরা বিভিন্ন দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের সাহায্য করেন থাকেন।
পুনরায় উল্লেখযোগ্য ক্যাবিনেটের মধ্যে আবার এমন দু-তিনজন সদস্য থাকেন, যাঁদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী অপেক্ষাকৃত বেশি পরামর্শ করেন। প্রদানমন্ত্রীর এই একান্ত বিশ্বস্ত সহকর্মীদের নিয়ে গঠিত হয় “কিচেন ক্যাবিনেট’ তবে সব প্রধানমন্ত্রীর এই ‘কিচেন ক্যাবিনেট’ থাকে না।
ক্ষমতা ও কার্যাবলী-
সংবিধানে মন্ত্রীপরিষদের ক্ষমতা ও কার্যাবলী সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে বলা হয়নি। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে তাঁর কাজে সাহায্য ও পরামর্শ দেওয়াই হল মন্ত্রীপরিষদের কাজ। সংবিধানে রাষ্ট্রপতির নামে কার্যত মন্ত্রীপরিষদই প্রয়োগ করে থাকে।
ক) নীতি নির্ধারণ :-
1) মন্ত্রীপরিষদের প্রধান কাজ হল নীতি নির্ধারণ ও রূপায়ণ ।
বৈদেশিক রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন প্রতিরক্ষা, অভ্যন্তরীন শাসন পরিচালনা, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, যুদ্ধ, শাস্তি, আন্তর্জাতিক চুক্তি প্রভৃতি নানা বিষয়ে নীতি নির্ধারন সংক্রান্ত দায়িত্ব মন্ত্রীপরিষদকে পালন করতে হয়।
আইন প্রণয়ণ :-
1) নির্ধারিত নীতিগুলি সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগের জন্য মন্ত্রীপরিষদকে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নে উদ্যোগ নিতে হয়।
- ii) কোন কোন বিষয়ের উপর আনি তৈরী করা প্রয়োজন তা মন্ত্রীপরিষদই ঠিক করে।
অধিকাংশ আইনের খসড়া মন্ত্রীদের নির্দেশে রচিত হয় এবং অধিকাংশ আইনের প্রস্তাবে মন্ত্রীরাই পার্লামেন্টে উত্থাপন করেন।
গ) শাসন :-
- i) বিভিন্ন মন্ত্রকের অধীনে যে প্রশাসন কর্মীরা নিযুক্ত থাকেন তাদের কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করা এবং সরকারী নীতি ঠিকমতো প্রয়োগ হচ্ছে কিনা সেদিকে নজর দেওয়া মন্ত্রীদের দায়িত্ব।
(ii) উচ্চতর পদে নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতির সিদ্ধান্তও মন্ত্রীপরিষদের বৈঠকে স্থির হয়। রাজ্যপাল, রাষ্ট্রদূত, কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশনের সদস্য প্রমুখ ব্যক্তিদের নিয়োগ
মন্ত্রীপরিষদের পরামর্শ অনুযায়ী হয়।
ঘ) অর্থ
1) সরকারের আয় ব্যয় নির্ধারণের ব্যাপারেও মন্ত্রীপরিষদকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয়।
- ii) বাজেট রচনা ও লোকসভায় তা উত্থাপন করার প্রাথমিক দায়িত্ব অর্থমন্ত্রীর ওপর নির্ভরশীল। বৈদেশিক নীতি নির্ধারণ :-
বৈদেশিক নীতি নির্ধারণ এবং সন্ধি ও চুক্তি সম্পাদনে মন্ত্রী পরিষদ গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়ে থাকে।
পরিশেষে বলা যায়, ভারতের শাসন ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে মন্ত্রীপরিষদ। এই মন্ত্রীপরিষদকে কেন্দ্র করেই দেশের সমগ্র রাজনৈতিক ব্যবস্থা আবর্তিত হয়।