ভারতের পার্লামেন্টের অন্যতম প্রধান কাজ হল আইন প্রণয়ন করা। পার্লামেন্টে আইন প্রণয়নের জন্য সংবিধান নির্দিষ্ট বিশেষ পদ্ধতি আছে। সংবিধানের ১০৭-১২২ নং ধারায় এই বিষময় আলোচনা করা হয়েছে। আনি তৈরি করার জন্য সংসদে বিল উত্থাপন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতির সম্মতি পাওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ও অনেক গুলি পর্যায়ের মধ্যদিয়ে যেতে হয়। এই পর্যায়গুলি হল-
প্রথম পাঠ :-
বিলের প্রথম পাঠ খুব সংক্ষিপ্ত। সাধারনত স্পীকার বা চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়ে সভার অনুমোদনের জন্য বিলটি উত্থাপন করাই প্রথম পাঠ। এই পর্যায়ে উত্থাপক শুধু বিলটির শিরোনাম ঘোষনা করেন। তবে তিনি প্রয়োজন মনে করলে বিলের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজন সম্পর্কে দুচার কথা বলতে পারেন এবং স্পীকার অনুমতি দিলে অন্য দুই একজন সদস্য দু-একটি কথা বলতে পারেন।
দ্বিতীয় পাঠ :- সংসদে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিলের দ্বিতীয়পাঠ হল সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম
পাঠের কাজ শেষ হওয়র পর দ্বিতীয় পাঠ শুরু হয়। দ্বিতীয় পাঠেই বিলের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজন নিয়ে আলোচনা ও তর্ক-বিতর্ক চলে। প্রতিটি ধারা অনুসারে খুঁটিনাটি বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়। এইসব তর্কবিতর্ক ও আলেচনাকালে সংসদের সংশ্লিষ্ট কক্ষ বিল সম্পর্কে চার ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যথা (১) বিলটি বিচার – বিবেচনারজন্য গৃহিত হোক, (২) বিলটিকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হোক, (৩) বিলটি অন্য রুমের সম্মতি নিয়ে যৌথ কমিটির নিকট পাঠানো হোক, (৪) বিলটি সম্পর্কে জনমত পরীক্ষার জন্য জনসাধারণের মধ্যে প্রচার করা হোক।
বিলটির দ্বিতীয় পাঠের সময় যদি সিলেক্ট কমিটি বা যৌথ কমিটির কাছে যায় তাহলে বিলের এই পর্যায়কে কমিটি পর্যায় বলে। সিলেক্ট কমিটির সদস্য ও চেয়ারম্যানকে স্পীকার নিযুক্ত করেন। যৌথ কমিটিতে সদস্য রাজ্য সভার এবং */ প্রতিনিধি লোকসভার হয়ে থাকে। বিলটি নিয়ে বিচার বিশ্লেষণের পর কমিটি তার রিপোর্ট ও সুপারিশ পেশ করেন। তবে বিলের দ্বিতীয় পাঠের ব্যাপারে বলা যায় যে, সরকারী বিল যেহেতু মন্ত্রীরা উত্থাপন করে থাকে তাই স্বাভাবিক ভাবেই বিলটি বিবেচনার জন্য গ্রহণ করা হয়।
তৃতীয় পাঠ :-
দ্বিতীয় পাঠের পর্ব শেষ হবার পর তৃতীয় পাঠের কাজ শুরু হয়। বিলের তৃতীয় পাঠের সময় খুব বেশি আলোচনা হয়না। সামান্য কোন বিষয়ে মৌখিক সংশোধনী ছাড়া কোন সংশোধনী প্রস্তাব আনা যায় না।
তৃতীয় পাটের ক্ষেত্রে আইনসভার সংশ্লিষ্ট কক্ষের মূল কাজ হল সামগ্রিক ভাবে বিলটিকে গ্রহন অথবা বর্জন করা। আংশিক ভাবে বিল সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহন
করা যায় না। বিলটি ভোটের মাধ্যমে গৃহীত হলে সংশ্লিষ্ট কক্ষের সভাপতির একটি সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়।
যে কোনো কক্ষে বিলিটি প্রথমে গৃহীত হবার পর অন্যকক্ষে পাঠানো হয়। অন্য কক্ষে বিলটি যথা নিয়মানুসারে গৃহীত হবার পর রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পাঠানো হয়। রাষ্ট্রপতি সম্মতি দিলে বিলটি আইনে পরিণত হয়। রাষ্ট্রপতি সম্মতি না দিলে বিলটি পুনরায় উভয় কক্ষের / সমর্থনে গৃহীত হলে রাষ্ট্রপতি সম্মতি দিতে বাধ্য।
কোন বিল অর্থবিল কিনা সে বিষয়ে লোকসভার স্পীকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। রাষ্ট্রপতির অনুমতি নিয়ে একমাত্র লোকসভাতেই অর্থবিল উত্থাপিত হয়। সাধারন বিলের মত অর্থবিলেও তিনটি পর্যায়ের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়।
অর্থবিল লোকসভার সম্মতিলাভের পর রাজ্য সভায় পাঠানো হয়। রাজ্যসভায় প্রেরণের সময় বিলটি যে অর্থবিল সেই সম্পর্কে লোকসভার স্পীকার একটি সার্টিফিকেট প্রদান করেন। রাজ্য সভা অর্থবিলকে সংশোধন বা প্রত্যাখ্যান করতে পারে না, বিলটির বিশেষ কোন অংশ পরিবর্তনের সুপারিশ করতে পারে। রাজ্যসভার সুপারিশ গ্রহন বা প্রত্যাখ্যান লোকসভার ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। রাজ্যসভায় কোন অর্থবিল প্রেরিত হওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে বিলটি লোকসভায় ফেরত না পাঠালে বিলটি উভয় কক্ষে গৃহীত হয়েছে ধরে নেওয়া হয়।
এইভাবে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে অর্থবিল পাস হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য বিলটিকে পাঠানো হয়। অর্থবিলকে রাষ্ট্রপতি পুনরায় বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাতে পারেন না। রাষ্ট্রপতি অর্থবিলে সম্মতি দিতে বাধ্য । রাষ্ট্রপতির সম্মতির পর বিলটি আইনে রূপান্তরিত হয়।