ক্ষমতার সম্পর্কে মিশেল ফুকোর ধারণাটি ব্যক্ত কর।

ক্ষমতাকে কোনো বস্তু হিসেবে চিন্তা না করে ফুকোঁ ক্ষমতাকে দেখেছেন সম্পর্ক হিসেবে। তিনি ক্ষমতার প্রকৃতি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন আধুনিক সমাজের বিভিন্ন স্তরে থাকা সম্পর্কের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ক্ষমতাকে অনুসন্ধান করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোনো ব্যক্তির সাথে রাষ্ট্রের ক্ষমতার সম্পর্ক আছে, আবার সেই ব্যক্তির সাথে তার ক্ষমতার সম্পর্ক আছে তার নিয়োগকর্তার, তার সন্তানের, তার গৃহকর্মীর, এবং যাবতীয় অন্যান্য সম্পর্কের।

ফুকোঁর মতে, সামাজিক বিন্যাস গঠনের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে ক্ষমতা। কিন্তু তার মতে, ক্ষমতার প্রকৃতি মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। মধ্যযুগীয় সমাজে ক্ষমতার ‘সার্বভৌম’ ব্যবহার ছিল নির্যাতন বা মৃত্যুদণ্ড, বিশেষ করে সাধারণ মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ এভাবে তাদের ক্ষমতা প্রদর্শন করতো। কিন্তু ইউরোপে এনলাইটেনমেন্টের পর সহিংসতার মাধ্যমে নির্যাতন অমানবিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে এবং একইসাথে মানুষকে নিয়ন্ত্রণের জন্য অকার্যকর পদ্ধতি হিসেবে পরিগণিত হয়।

নজরদারি এবং নিয়ন্ত্রণ

আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠিন শারীরিক শাস্তির বদলে আরও প্রভাবশালী একটি প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা রয়েছে, আর তা হলো শৃঙ্খলা (Discipline)। ক্ষমতা প্রদর্শনের মাধ্যম হিসেবে শাস্তির বদলে জেলখানা, পাগলাগারদ, হাসপাতাল কিংবা স্কুলের মতো প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যাতে করে মানুষকে আরও শৃঙ্খলাবদ্ধ করা যায়, বিশেষ করে এসব প্রতিষ্ঠানে শেখানো হয় কীভাবে কোনো আচরণ থেকে ব্যক্তিকে বিরত রাখা যায়। এসকল প্রতিষ্ঠান কেবল সীমালঙ্ঘন করার পথই বন্ধ করে দেয়নি, বরং আচরণ কীভাবে ঠিক করা যায় তা-ও নির্ধারণ করা যায় এবং সর্বোপরি ব্যক্তিকে নজরদারি এবং নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

নজরদারি করা জিনিসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আধুনিক সমাজে ক্ষমতা চর্চা করার বিবর্তনকে নির্দেশ করে। ইংরেজ দার্শনিক জেরেমি বেন্থামের প্যানোপটিকনের ধারণা থেকে ফুকোঁ অনুপ্রাণিত হন। প্যানোপটিকন হচ্ছে এমন একধরনের জেলখানা, যেখানে প্রহরীর ওয়াচটাওয়ারকে কেন্দ্র করে একটি সারিতে চারপাশে বৃত্তাকার অবস্থায় জেলখানার প্রতিটি সেল থাকে, একইসাথে প্রতিটি সেলের পেছন দিকে একটি জানালা থাকে, যাতে করে ঘরের কোনো জায়গা অন্ধকার না থাকে এবং প্রত্যেক অবস্থায় কয়েদীর ওপর সর্বক্ষণ নজরদারি করা যায়। কয়েদী কোনোভাবেই বুঝতে পারবে না কখন তার ওপর নজরদারি করা হচ্ছে বা কখন করা হচ্ছে না, ফলে তারা নজরদারির ভয়ে নিজেরাই নিজেদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। ক্ষমতা এখন আর জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে চর্চা করা হয় না, বরং এমনভাবে চর্চা করা হয় যাতে ব্যক্তির কাছ থেকে নির্দিষ্ট আচরণ করার সম্মতি আদায় করা হয়।

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Why national building regulations. Saraswat bank co operative ltd. Project dm developments north west.