সবুজের অভিযান কবিতা টি ১৩২১ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে ‘সবুজপত্র পত্রিকা’ –য় প্রকাশিত হয় |
বাংলা সাহিত্যের বিচিত্র আঙ্গিনা যাঁর প্রতিভার আলোকছটায় হয়েছে আলোকিত। যাঁর সাহিত্যসুধা আস্বাদনে পাঠক পেয়েছে পরিপূর্ণ তৃপ্তি। সাহিত্যপরিম-লের প্রতিটি স্তরে যিনি বিচরণ করেছেন সদর্পে। বিশ্ববাসীর সামনে বাংলা সাহিত্যকে তুলে ধরেছেন সগৌরবে। তাঁর লেখনীর প্রতিটি শব্দ যেন জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তুলির আঁচড়ে বেরিয়ে আসা এক একটি প্রাণ। রচনাজুড়ে তিনি গেয়েছেন তারুণ্যের জয়গান। তিনিই আমাদের বিশ্বকবি, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। চিরসবুজ, চির যৌবনের কবি। জীবনের প্রত্যেকটি ভোর তাঁর কাছে ছিল এক নতুন প্রাণ। জীবনের সকল বেলায়, সকল সময়ে নিজেকে ভেবেছেন তরুণ হিসেবে। ‘পঁচিশে বৈশাখ’ কবিতাটিতে কবি নিজেকে বলেছেন তরুণ বাউল। যা তাঁর কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে এভাবে : তরুণ যৌবনের বাউল/সুর বেঁধে নিল আপন একতারাতে,/ডেকে বেড়ালো নিরুদ্দেশ মনের মানুষকে/অনির্দেশ্য বেদনার খেপা সুরে। তাঁর কবিতা যেমন তরুণের চলার ছন্দে হয়েছে ছন্দায়িত। আবার তারুণ্য শক্তির আভায় হয়েছে ঝঙ্কৃত। তিনি তারুন্য কে প্রাধান্য দিয়েছেন সর্বাগ্রে। বিশ্বাস করতেন তারুণ্যের তেজদ্বীপ্ত শক্তি সকল বাঁধা, সকল অপশক্তিকে নিমিষেই ধূলিসাত করে দিতে পারে। সকল ভেদ-বিভেদের উর্ধে তার অবস্থান। নিষেধ আর নিয়মের প্রাচীর ভাঙ্গাই তারুণ্যের ধর্ম। মা, মাটি, দেশই তার ব্রত। সমাজের যত সংস্কার-কুসংস্কার, আর সকল জড়তার উর্ধে তারুণ্যের ঝান্ডা সদা উড্ডীয়মান। তারুণ্য হবে সৎ এবং সততার প্রতীক। সত্য এবং সুন্দরকে গ্রহণের জন্য তরুণ হৃদয় থাকবে সদা উন্মোচিত। তরুণ হবে কৌতূহলী। সৃষ্টিকে জানার ও সত্যানুসন্ধানে সদা চঞ্চল। সুদূরের পিয়াসী। কবি বিশ্বাস করেন তরুণের থাকবে অপার সাহস। যা তাকে সকল কঠিন সময়ে, সম্মুখে ধাবিত করবে। থাকবে দৃঢ় মনোবল। যা তাকে দুঃসময়ে উঠে দাঁড়াতে শক্তি যোগাবে। থাকবে অসীম উৎসাহ। যা তাকে নব সৃষ্টির নেশায় রাখবে জাগ্রত। সে গাইবে মানবতার গান। কবির ‘সবুজের অভিযান’ কবিতাটি তারুণ্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যেখানে কবি নবীনদের জেগে ওঠার কথা তো বলেছেনই একই সাথে যারা পড়ে আছে জরা, আধ-মরা তাদের ঘা মেরে বাঁচিয়ে রাখতে বলেছেন। যা কবিতাটিতে উঠে এসেছে এভাবে : ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা,/ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ,/ আধ-মরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা। এ কবিতাটিতেই তিনি তারুণ্যকে আহ্বান করে উচ্চারণ করেছেন : রক্ত আলোর মদে মাতাল ভোরে/আজকে যে যা বলে বলুক তোরে,/সকল তর্ক হেলায় তুচ্ছ ক’রে/পুচ্ছটি তোর উচ্চে তুলে নাচা।/আয় দুরন্ত, আয় রে আমার কাঁচা ॥ আরো বলেছেন : চিরযুবা তুই যে চিরজীবী/জীর্ণ জরা ঝরিয়ে দিয়ে/প্রাণ অফুরান ছড়িয়ে দেদার দিবি। কবি মনে করেন তরুণেরা সকল জীর্ণ জড়তার জাল ছিন্ন করে ছিনিয়ে আনবে বিজয়।