শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের পরিধি বা বিষয়বস্তু
শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের পরিধি বলতে বােঝায় শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত বিষয়বস্তুর পরিসরকে। শিক্ষা মনোবিজ্ঞান মূলত শিখন ও শিক্ষণ নিয়ে আলােচনা করে। শিক্ষার্থীর শিক্ষামূলক চাহিদার পরিতৃপ্তি ঘটানাে ও তার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটানাে শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের মূল লক্ষ্য। শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের লক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা হয়। শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের পরিধি বা বিষয়বস্তু গুলি হল –
1) শিক্ষার্থীর কর্মধারা : শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের কর্মধারাই হল শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের প্রাথমিক উপাদান। এর উপর ভিত্তি করে শিক্ষা পরিকল্পনা করা হয়। যেমন- শিক্ষার্থীর চাহিদা, প্রবৃত্তি, প্রক্ষোভ, বুদ্ধি, সৃজনশীলতা ইত্যাদি যা শিক্ষা ও শিখনে বিশেষভাবে প্রযােজনীয়। এ সম্পর্কে আলােচনা করা শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের কাজ।
2) শিখন প্রক্রিয়া : শিখন সম্পর্কে সমস্ত তত্ব শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শিখন প্রক্রিয়ার প্রকৃতি, শিখনের নিয়মাবলী, শিখনের সঠিক মূল্যায়ন পদ্ধতি, এছাড়াও নানা ধরনের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে শিক্ষা মনোবিজ্ঞান সাহায্য করে।
3) জীবন বিকাশের ধারা অনুশীলন : শিশুদের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের দৈহিক, মানসিক, সামাজিক বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। সেগুলিকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে অনুশীলন করা অর্থাৎ শিক্ষার্থীর জীবন বিকাশের ধারা সম্পর্কে আলােচনা করা এবং শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বিকাশের জন্য কি কি করনীয় ইত্যাদি শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তুর অন্তর্গত।
4) অভিযােজন প্রক্রিয়া : শিক্ষার্থীদের আচরণ বিশ্লেষণ করা, তাদের সমাজের সঙ্গে সার্থক অভিযােজনের উপযােগী করে তােলা এবং প্রতিকূল পরিবেশকে কিভাবে শিক্ষার্থীরা প্রতিরােধ করবে, তা স্থির করা শিক্ষাশ্রয়ী মনোবিজ্ঞানের আলােচ্য বিষয়।
5) ব্যক্তিস্বাতন্ত্র : শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হল ব্যক্তিগত পার্থক্য বা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র। প্রত্যেকটা ব্যক্তির মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়, এটি একটি স্বাভাবিক নিয়ম। ব্যাক্তিস্বাতন্ত্রের জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের আচরণগত পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। ব্যক্তিগত পার্থক্যের প্রকৃতি কি, এই ব্যক্তিগত পার্থক্যকে ভিত্তি করে শিক্ষা পরিকল্পনার রচনা করা শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের কাজ। ব্যক্তিগত বৈষম্য কে ভিত্তি করে ব্যক্তির বিকাশ ঘটানাে গণতান্ত্রিক শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য।
6) নির্দেশনা ও পরামর্শদান : শিক্ষাক্ষেত্রে জ্ঞানমূলক ও বৃত্তিমূলক নির্দেশদান সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করা। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা পরিকল্পনা রচনা করা। শিক্ষা সংক্রান্ত নানা তথ্য পরিবেশন করা, শিক্ষার সমস্যা সমাধানে সাহায্য করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে একঘেয়েমি দূর করা ইত্যাদি শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের আলােচিত বিষয়বস্তু।
7) পরীক্ষা ও মূল্যায়ন : শিক্ষাক্ষেত্রে পরীক্ষা ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিক্ষার্থী কী শিখল, কতটুকু শিখল, তার মধ্যে আচরণের পরিবর্তন ঘটেছে কিনা, যদি না ঘটে তার কারণ কি? কিভাবে তা সংশােধন করা যায় এসব শিক্ষা মনােবিজ্ঞানের আলােচ্য বিষয়। আধুনিক শিক্ষাবিজ্ঞানে মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থী কতটা জ্ঞান অর্জন করেছে কেবলমাত্র তা পরিমাপ করা হয়না শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশ ঘটেছে কিনা তার মূল্যায়ন করা হয়।
8) বাশিবিজ্ঞান : শিক্ষা মনোবিজ্ঞানে শিক্ষামূলক পরিসংখ্যানকে অর্থাৎ রাশিবিজ্ঞানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কারণ রাশিবিজ্ঞান ছাড়া শিক্ষার্থীদের অগ্রগতির সঠিক মূল্যায়ন সম্ভব নয়। রাশিবিজ্ঞান এর সাহায্যে শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে পরিবেশন করা যায় এবং বিজ্ঞানসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব। এছাড়া শিক্ষার্থীদের অগ্রগতির মূল্যায়ন একমাত্র রাশিবিজ্ঞান দ্বারাই সম্ভব। সেই কারণে আধুনিক শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তুর তালিকায় রাশিবিজ্ঞানকে স্থান দেওয়া হয়েছে।
9) শ্রেণীকক্ষ পরিচালনা : শ্রেণিকক্ষ পরিচালনার ক্ষেত্রে একজন শিক্ষকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিভাবে একটা শ্রেণিকক্ষ সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায়, শিক্ষার্থীর আচরণ নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা রক্ষা, তাদের সঠিক শিক্ষাদানের দায়িত্ব শিক্ষকের। এ সম্পর্কে একজন শিক্ষকের যথাযথ জ্ঞান থাকা প্রযােজন। তা নাহলে শিক্ষার্থীদের সঠিক শিক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। সেজন্য শ্রেণীকক্ষ পরিচালনার ক্ষেত্রে শিক্ষামনোবিজ্ঞানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
10) মানসিক স্বাস্থ্য : শিক্ষাব্যবস্থা সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্যের প্রয়োজন। তা নাহলে শিখন-শিক্ষণ প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন হবেনা। শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে নানা ধরনের অপরাধমূলক আচরণ করে থাকে। এগুলি কেন করছে, কিভাবে তা দূর করা যায় এ সমস্ত শিক্ষামনোবিজ্ঞানে আলােচিত হয়।