শিক্ষায় গেস্টাল্ট মতবাদের প্রয়োগ :
বর্তমান শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষায় গেস্টাল্ট মতবাদের গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমানে শ্রেণিকক্ষে গেস্টাল্ট তত্ত্বকে বিভিন্নভাবে প্রয়ােগ করা হচ্ছে। যেমন—
সমগ্রতার তত্ত্ব:
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক শিক্ষণীয় বিষয়বস্তু প্রথমে সামগ্রিকভাবে শিক্ষার্থীদের কাছে উপস্থাপন করবেন। তারপর সেই সামগ্রিক বিষয়বস্তুকে খণ্ড খণ্ড অংশে ভাগ করে বিশ্লেষণ করবেন। এই নীতির উপর ভিত্তি করে শিক্ষাক্ষেত্রে সমগ্র থেকে অংশের দিকে অগ্রসর হওয়ার শিক্ষানীতি গৃহীত হয়েছে।
শ্রেণিকক্ষে অন্তদৃষ্টিমূলক শিখন:
গেস্টাল্ট তত্ত্ব অনুযায়ী শিখন হয় অন্তদৃষ্টির মাধ্যমে। সুতরাং শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় শিক্ষককে বিষয়বস্তু এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা সমস্যামূলক পরিস্থিতিতে বিভিন্ন অংশের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। অর্থাৎ, শিক্ষার্থীদের অন্তদৃষ্টি জাগিয়ে তুলতে হবে।
শিক্ষার্থীর সক্রিয়তা:
অন্তর্দৃষ্টিমূলক শিখন কৌশলে সক্রিয়তার মাধ্যমে বিষয়বস্তু প্রাণী প্রত্যক্ষণ করে। বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর সক্রিয়তার নীতিকে বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সুতরাং, শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় করে তােলার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করবেন। তবেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্তদৃষ্টি জাগানাে সম্ভব হবে।
সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষাদান:
গেস্টাল্টবাদীদের মতে, শিক্ষক শিক্ষিকারা যে বিষয়ে শিক্ষা দেন সেই বিষয়গুলির মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে বিষয়টিকে উপস্থাপন করেন।
শিখনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীর কাছে ব্যক্ত করতে হবে:
পাঠগ্রহণের পূর্বে শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ শিক্ষার্থীদের কাছে শিখনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা করবেন।
মূর্ত থেকে বিমূর্তের দিকে:
গেস্টাল্ট শিখন তত্ত্বটি মূর্ত থেকে বিমূর্তের দিকে —এই নীতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। সুতরাং, শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদানের সময় প্রথমদিকে বাস্তব অর্থাৎ মূর্ত বিষয়ে শিক্ষাদান করবেন এবং পরে ধীরে ধীরে বিমূর্ত বিষয়ের দিকে অগ্রসর হবেন।
শিখনের অংশগুলির সম্পর্ক স্থাপন:
সমস্যাসমাধানের জন্য পরিস্থিতির বিভিন্ন অংশগুলির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করা হয়। অন্তষ্টিমূলক শিখন কৌশলে এ কথা মনে রেখে শিক্ষক শ্রেণিকক্ষের মধ্যে এমনভাবে সমস্যার উপস্থাপন করবেন, যাতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অংশের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে।
যান্ত্রিক প্রচেষ্টা নিরসন:
এই শিখন কৌশলের মতানুযায়ী, শিক্ষকের কর্তব্য হবে শিক্ষার্থীকে মুখস্থ করার প্রবণতা থেকে বিরত করে পাঠ্যবিষয়ের অন্তর্নিহিত অর্থ উপলদ্ধিতে সাহায্য কর
পৃথকীকরণ ও সামান্যীকরণ:
গেস্টাল্ট তত্ত্বে প্রথমে পৃথকীকরণ, পরে সামান্যধর্মী সূত্র গঠনের মাধ্যমে অন্তদৃষ্টি জাগে। সমস্যামূলক পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা যাতে সামান্যধর্মী সূত্র গঠন করতে পারে, সে সম্পর্কে শিক্ষক সচেতন থাকবেন এবং প্রয়ােজনে কিছুটা ইঙ্গিত দিয়ে ছাত্রদের উৎসাহিত করবেন।
গেস্টাল্ট তত্ত্বে প্রথমে পৃথকীকরণ, পরে সামান্যধর্মী সূত্র গঠনের মাধ্যমে অন্তদৃষ্টি জাগে। সমস্যামূলক পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা যাতে সামান্যধর্মী সূত্র গঠন করতে পারে, সে সম্পর্কে শিক্ষক সচেতন থাকবেন এবং প্রয়ােজনে কিছুটা ইঙ্গিত দিয়ে ছাত্রদের উৎসাহিত করবেন।
বিষয়বস্তুকে শিক্ষার্থীর কাছে ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে:
শিক্ষার্থীর মধ্যে যাতে সহজে অন্তদৃষ্টি জাগরিত হয় তার জন্য শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুকে শিক্ষার্থীর কাছে ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে।