রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “সাধারণ মেয়ে’ কবিতার মূলভাবটি পরিস্ফুট করো।

নারীরা স্বভাবতই তাদের আচরণে সীমাবদ্ধতার ছন্দের মাধ্যমে নিজেদের প্রকাশ করে, যা অস্তিত্বের কবিতায় পরিণত হয়।তিনি মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছেন, তার অস্থির শক্তিকে সাহিত্য, শিল্প, সংগীত এবং ধর্মের বিস্তৃত কাজে চ্যানেল করে অচেতনভাবে।এই কারণে, ভারতে, নারীদের শক্তি, সৃজনশীল শক্তির মূর্ত্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

কবিতার পেক্ষাপটঃ

সাধারণ মেয়ে’ ‘পুনশ্চ’ কাব্যের একটি বিখ্যাত কবিতা | গদ্যছন্দের আশ্রয়ে কবি একটি অতি সাধারণ মেয়ের জীবনকথা বর্ণনা করেছেন। যা সাধারণ, যা তুচ্ছ, যা অসুন্দর তাকে রবীন্দ্রনাথ কাব্যবিষয়ের বাইরে রাখারই পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু ক্রমে পৃথিবীর পট পরিবর্তন হতে থাকল। বিশ্বযুদ্ধ, রাজনৈতিক হানাহানি, অত্যাচার, অবিচার মাথা চাড়া দিতে লাগল। এ অবস্থায় কবিচিত্তে বন্ধন মােচনের একটু জরুরি তাগিদ এসে পড়ল। ‘পুনশ্চ’ এই নতুন জীবন দর্শন নিয়ে দেখা দিল।

‘পুনশ্চ’ কাব্য রবীন্দ্রনাথের শেষ পর্যায়ের কাব্য। এই পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথ কাব্যকে বেড়াভাঙা স্ত্রী স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। সৃষ্টি করেছিলেন এক অভিনব আঙ্গিকের। কাব্যকে জীবননিষ্ঠ করে তুলতে তার ভাষা ও ছন্দকেও তিনি অভিনবত্ব  দান করলেন—“অসংকুচিত গদ্যরীতিতে কাব্যের অধিকারকে অনেকদূর বাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব এই আমার বিশ্বাস এবং সেই দিকে লক্ষ্য রেখে এই গ্রন্থে প্রকাশিত কবিতাগুলি লিখেছি। ‘পুনশ্চে’র বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখা কবিতাগুলি মনে রাখলে কবির একথার সত্যতা প্রমাণিত হবে।

কবিতার সারাংশ ও বিষয়বস্তুঃ

‘সাধারণ মেয়ে’ কবিতার সাধারণ মেয়ে মালতী অতি সাধারণ—তার না আছে রূপের জৌলুস, না আছে আভিজাত্যের অহংকার। থাকার মধ্যে আছে তার অসামান্য দুটি ডাগর চোখ। যখন তার বয়স অল্প ছিল, তখন একজনের মন ছুঁয়েছিল তাঁর কাঁচা বয়সের মায়া। তার জীবনের এই রােমান্টিক প্রেমকাহিনিকে বাস্তবের রঙে রাঙিয়ে কবি গদ্যছন্দের আশ্রয়ে অসামান্য মহিমা দিয়েছেন। বাংলাদেশে তার মতাে এমন অনেক সাধারণ ঘরের মেয়ে আছে যারা পুরুষের স্তুতিতে খুশি হয়ে আত্মসমর্পণ করে বসে পুরুষের কাছে, বিকিয়ে যায় সামান্য দামে। তারপর প্রত্যাখ্যাত হয়ে চোখের জলে দিনযাপন করে।

সেই সাধারণ মেয়ে মালতী শরৎচন্দ্রের ‘বাসিফুলের মালা’ গল্পটি পড়ে নায়িকার জলে উৎসাহিত হয়ে অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্রের কাছে কাতর আবেদন জানিয়েছে তাকে নিয়ে আর একটি গল্প লেখার জন্য। শুধু অনুরােধ নয়, সে শরৎচন্দ্রকে পরামর্শও দিয়েছ কেমন করে সেই সাধারণ মেয়েকে অসাধারণ মহিমায় উজ্জ্বল করে তুলতে হবে।

গল্পের শুরুতে তার জীবনের দুঃখের বর্ণনা থাকবে—নরেশ নামের এক যুবকের সঙ্গে যে মালতীর প্রেমের সূচনা হয়েছিল বাংলাদেশে, তার করুণ পরিসমাপ্তি ঘটে বিলাত প্রবাসী নরেশের প্রত্যাখ্যানে। বিলেতে গিয়ে নরেশ আবিষ্কার করে সেখানকার বুদ্ধিশালিনী, রূপবতী, বিত্তমান মহিলাদের। তাদের মধ্য থেকেই লিজা নামের মেয়েটির সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক সংবাদপত্র মারফত মালতী জানতে পারে সে তার সামান্য বুদ্ধি দিয়েই বুঝতে পারে তার কপাল পুড়েছে।

নরেশের চিঠিতে লিজির যে অসামান্য প্রশংসার কথা আছে তা পড়ে মালতী বুঝতে পেরেছে একটা অদৃশ্য খোচা আছে তার প্রতি, তা থেকেই সে তার পরাজয়ের কথা বুঝে নিয়েছে। জীবনে হেরে যাওয়া এই মেয়েটি দরদি শিল্পী শরৎ বাবুর লেখা গল্পে জয়ের মালাটি জিতে নিতে চায়।

প্রাচীন কালের কবিরা ত্যাগের মধ্য দিয়ে দুঃখের মহিমা প্রদর্শন করে তাদে নায়িকাদের জয়ী করেছেন। যেমন কালিদাসের শকুন্তলার কাহিনিতে লক্ষ করা যায়। বিধাতা কৃপণ বলে সাধারণ মেয়েদের সৃষ্টিতে বেশি সময়টুকুও দেন না। তাই মেয়েটি বিধাতার কাছে নয়, মানুষের দরবারে নালিশ জানায় সকল উপেক্ষিতা সাধারণ নারী হয়ে।

লেখকের বলিষ্ঠ লেখনী স্পর্শে সে যেন অসামান্যা ও সম্পূর্ণা হয়ে উঠতে পারে, তার স্বপ্ন যে কবির কল্পনার স্পর্শে সফল হয়ে ওঠে। নরেশ যেন সাতবছর ধরে অকৃতকার্য হয়ে আটকে থাকে—আর মালতী ইতিমধ্যে এম. এ. পাশ করুক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, লেখকের একটা কলমের আঁচড়ে সে যেন গণিতে প্রথম হয়।

বস্তুত রবীন্দ্রনাথের সৃষ্ট এই সাধারণ মেয়ে কোনাে অংশেই সাধারণ নয়, সে অসাধারণ এবং অসামান্যা। সাধারণ মেয়ের প্রতি কবি তাঁর অন্তরের গভীর সহানুভূতি প্রদর্শন করেছেন এবং সেই সঙ্গে দরদি শিল্পী শরৎচন্দ্রের প্রতি অগ্রজ কবির সস্নেহ শ্রদ্ধা বর্ষিত হয়েছে।

বাংলা কবিতায় কবি ঈশ্বরগুপ্তের অবদান সংক্ষেপে আলােচনা করো।

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Indoor digital tv antenna hdtv hd aerial. Authentic street dance studio. ลน์.