ভারতে ধর্ম নিরপেক্ষতার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতাসমূহ আলোচনা করো।

১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৫০ সালে নতুন সংবিধানে ভারতে সকল ধর্মের মানুষের সমান অধিকারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে পরবর্তীকালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে প্রস্তাবনায় ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ কথাটি সংযোজিত হয়েছে। ভারত এক ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ হিসাবেই বিশ্বের দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত, তবুও ভারতবর্ষে ধর্ম নিরপেক্ষতার পথে কিছু প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। প্রতিবন্ধকতা গুলি নীচে আলোচনা করা হল –

(১) – দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে অতিরিক্ত আত্মসচেতনতা এবং পৃথক ধর্মীয় অভিব্যক্তি ধর্ম নিরপেক্ষতার পথে তার সৃষ্টি করে। ভারতবর্ষে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করে। বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে বিভিন্ন রকম সংস্কারের উপস্থিতির ফলে বিভিন্ন ধরনের আত্মসচেতনতা ল বিভিন্ন ধর্মীয় নিরোধের কারণ স্বরূপ দেখা দেয়।

 

(২) নাক্তিগত আইন : বিভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ব্যক্তিগত আইন ভারতে ধর্ম নিরপেক্ষতার পথে আর একটি বড় প্রতিবন্ধক। ভারতের সংবিধানের নির্দেশমূলক নীতিতে সকল নাগরিকদের জন্য অভি দেওয়ানী প্রবর্তনের কথা বলা হয়েছে। বিবাহ, নারী জাতির অধিকার, উত্তরাধিকার প্রভৃতি পারিবারিক জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধর্মের বিভিন্ন আইন পরিলক্ষিত হয়। স্বাধীনতার পরবর্তীকালীন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দ সরকারে অধিষ্ঠিত হয়েছে কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত কোন রাজনৈতিক দলই সংবিধানের নির্দেশমূলক নীতি অনু অভিন্ন দেওয়ানী বিধি প্রবর্তনে উৎসাহ প্রদান করে নি।

 

(৩) রাজনৈতিক নেতাদের দূরদনি তার অভাব বহু ধর্মাবলম্বী মানুষের দেশ হওয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ ভারতীয় মন নিরপেক্ষতার আদর্শে বিশ্বাসী। স্বাধীনতা উত্তর ভারতে গান্ধী নেহেরুর নেতৃত্বাধীন ভারতীয় প্রতি সবল মানুষের অগার আস্থা ছিল। কনা নিরপেক্ষ দেশবাসী কংগ্রেসের মধ্যেই তাদের সামাজিক নিরাপত্তা ও উন্নতির নির্ভরতা খুঁজে পেয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার দীর্ঘদিন পরেও শিক্ষার অভাবের ফলে কিছু মানুষের মধ্যে থেকে ধর্মীয় গোঁড়ানী দূর করা যায় নি। পরবর্তীকালে জাতীয় কংগ্রেসের নেতাদের দূরদর্শিতার অভাবে এবং কিছু সাম্প্রদায়িক সংগঠনের প্ররোচনাদ ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের বিকাশ ও বিস্তারের উপযুক্ত কোন সুসংগঠিত ধর্মনিরপেক্ষতা গড়ে উঠেনি।

 

(৪) সাম্প্রদায়িকতা ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়েছিল দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগের মাধ্যমে। দেশভাগের হিন্দুরা ভারতবর্ষের সংখ্যাগুরু এবং মুসলমানরা সংখ্যালঘু হতে থাকে। এই সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু নির্বিশেষে রকম সাম্প্রদায়িকতার বিলোপ সাধন করে প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মানুষের উচিত অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের আবেগ অনুভূতিকে মর্যাদা দেওয়া। এই সাম্প্রদায়িকতার অবসান না ঘটলে ভারতের ধর্ম নিরপেক্ষতার আদর্শের ঘটানো সম্ভব নয়, রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলি এবং তাদের কিছু বিবেক প্রধান নেতা দেশের অশুভ সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলিকে ব্যবহার করে এসেছে। সাম্প্রদায়িকতার এই অভিশাপ ভারতের ধর্ম নিরপেক্ষতার পক্ষে অন্যতম প্রতিবন্ধক।

(1) বুদ্ধিজীবিদের ভূমিকা কোন দেশের সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠে সেই সমাজের শিক্ষিত বৃদ্ধির সক্রিয় ভূমিকার মাধ্যমে। দেশের ধর্ম নিরপেক্ষতার আদর্শকে সকল জনসাধারণের মধ্যে বিস্তার করতে বৃদ্ধি জীবিদের এক ভূমিকা আছে। কিন্তু স্বাধীন ভারতের বুদ্ধিজীবিদের একটি অংশ ক্ষমতা ও অর্থের লালসায় আমার। দেশের রাজনৈতিক নেতারা তাদের সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে বুদ্ধিজীবিদের ব্যবহার করেন এবং ফলত এই বুদ্ধিজীবিরা জাতীয় জীবনের মূলস্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

মন্তব্য : ভারতের ধর্ম নিরপেক্ষতার উপরিউক্ত প্রতিবন্ধকতাগুলি থাকলেও ভারতকে অন নিরপেক্ষ দেশ হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে হবে। ভারতের মত উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে ধর্ম নিরপেক্ষতার আদর্শ অনুসরণ করা একাজভাবে অপরিহার্য। ভারতকে প্রকৃত ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে হলে দেশের জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধি যেমন প্রয়োজন, তার থেকেও বেশি প্রয়োজন দেশের রাজনৈতিক ি পরিবর্তন। বর্তমানে ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতার পথে প্রতিবন্ধক সমূহকে অতিক্রম করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়

 

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

General dm developments north west. Tushar enterprises pen raigad. Tu aata hai seene mein in english archives songs lyrics.