বক্রোক্তি:
বক্রোক্তি কথার অর্থ বাঁকা কথা।
সোজাসুজি কোন কথা না বলে প্রশ্ন বা স্বরবিকৃতির দ্বারা বাঁকা ভাবে বলায় যে অলঙ্কারের সৃষ্টি হয় তার নাম বক্রোক্তি। বক্তা তাঁর বক্তব্যে কি কথা কি ভাবে বলতে চান তা সঠিক ভাবে জেনেও শ্রোতা অনেক সময় ইচ্ছে করে তাকে একটু বাঁকিয়ে ও ভিন্ন অর্থে গ্রহণ করলে তা বক্রোক্তি অলঙ্কার হয়।
উদাহরণ:
আপনার কি পানাভ্যাস আছে?
আজ্ঞে না, পকেটের পজিশন খারাপ কিনা- তাই এখনও রপ্ত করে উঠতে পারি নাই।
– এখানে লক্ষ্য করলে দেখা যায় বক্তার জিজ্ঞাসার জবাবে শ্রোতা একটু ঘুরিয়ে বাঁকা ভাবে তার উত্তর দিয়েছেন, তাই অলঙ্কার এখানে বক্রোক্তি।
আরও কিছু উদাহরণ:
দেখি, দে-তো, এই কথাটার উত্তর দে দেখি
– তোরা দক্ষিনের লোক,উত্তরের কী জানিস?
বক্তা বুঝিয়েছে প্রশ্নের উত্তর, আর শ্রোতা বুঝেছেন উত্তর দিকের কথা।
অশ্বত্থের শাখা করে নি কি প্রতিবাদ? (জীবনানন্দ)
‘কে বলে কাব্যের ফুকে এ-পৃথিবী নিরাময় হয়, হতে পারে’ (শামসুর রাহমান)
শ্রেণিবিভাগ :
বক্রোক্তি দুই প্রকারের। শ্লেষবক্রোক্তি ও কাকু-বক্রোক্তি। উদাহরণের প্রথমটি শ্লেষবক্রোক্তি এবং দ্বিতীয়টি কাকু-বক্রোক্তি।
শ্লেষ বক্রোক্তি :
একই শব্দে নানা অর্থ গ্রহণ করে উক্তি প্রত্যুক্তির মাধ্যমে যে বক্রোক্তি অলংকার হয় তাকে শ্লেষ বক্রোক্তি অলংকার বলে ।
উদাহরণ :-
বক্তা : আপনার কপালে রাজদণ্ড আছে।
শ্রোতা : নিশ্চয়, আইন অমান্য করে ছ’মাস খেটেছি এখন সশস্ত্র বিপ্লবে না হয় বছর কত খাটবো।
ব্যাখ্যা : আলোচ্য উদাহরণে বক্তার উক্তির মধ্যে ‘রাজদণ্ড’ কথাটি শ্লেষাত্মক।যার দুটি অর্থ হলো- ক) রাজার শাসনদণ্ড হাতে পাওয়া বা রাজা হওয়া।খ) রাজশাস্তি বা গুরুতর শাশাস্তি।বক্তা এখানে প্রথম আলো অর্থ ধরে নিয়ে বক্তব্য রাখলেও শ্রোতা দ্বিতীয় অর্থটি ধরে নিয়ে উত্তর দিয়েছে।তাই এটি শ্লেষ বক্রোক্তি অলংকার ।
কাকু বক্রোক্তি :
কাকু মানে স্বরভঙ্গি।কন্ঠধ্বনির বিশেষ ভঙ্গির ফলে বিধিমূলক বাক্য নিষেধমূলক বাক্যে কিংবা নিষেধমূলক বাক্য বিধিমূলক বাক্যে যদি পর্যবসিত হয় তবে কাকু বক্রোক্তি অলংকার বলে।
উদাহরণ :-
স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চাইহে কে বাঁচিতে চাই