নীতিবিদ্যার সংজ্ঞা :-
সাধারণভাবে নীতিবিজ্ঞান মানুষের ও সমাজের নৈতিক জীবনের মূল্যায়ন করে। ইংরাজী প্রতিশব্দ Ethics শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ Ethics থেকে, যার অর্থ চরিত্র। নীতিবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, নীতিবিজ্ঞান হল সমাজে বসবাসকারী মানুষের আচরণ সম্পর্কীয় আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান যা ন্যায় কিংবা অন্যায়, ভাল কিংবা মন্দ কিংবা অনুরূপ কোনভাবে অভিহিত হবার যোগ্য কিনা তা বিচার করে
পরিবেশগত নীতিবিদ্যা কি ?
পরিবেশগত নীতিবিদ্যা সাধারণত পরিবেশ সংরক্ষণের কথা বিশেষভাবে বলে থাকে। আমরা পরিবেশকে কিভাবে রক্ষা করব, কিভাবে ব্যাবহার করব, কিভাবে সংরক্ষণ করব, কিংবা পরিবেশ সুরক্ষার নীতি কি হবে প্রভৃতি বিষয় পরিবেশ নীতিবিদ্যা প্রকাশ করে থাকে। এছাড়া পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত উদ্ভিদ ও বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীদের কিভাবে সংরক্ষণ করব — সে কথাও পরিবেশ নীতি বিদ্যা প্রচার করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে পরিবেশগত নীতিবিদ্যা তাকেই বলে, যে নীতিবিদ্যায় পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ের একটি সঠিক মানদন্ড থাকে।
আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান :-
বিজ্ঞানের বিশাল কর্মজগতকে ব্যাখ্যার সুবিধার জন্য আমরা বিজ্ঞানকে দুভাগে ভাগ করি।
- বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান
- আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান
নীতি বিজ্ঞান আদর্শ নিষ্ঠ বিজ্ঞানের পর্যায়ে পড়ে। আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান একটি আলোকে বিষয়বস্তুর মূল্য বিচার করে। নীতিবিজ্ঞান পরম কল্যাণের আদর্শ মাপকাঠিতে মানুষের আচরণের মূল্য নির্ধারণ করে। তাই তো নীতিবিজ্ঞানকে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলা হয়।
বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান:
বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞানকে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান এবং বর্ণনামূলক বিজ্ঞান বলা হয়। বস্তু জগতে বিষয়টি যেভাবে বিদ্যমান আছে ঠিক সেইভাবে তাকে জানা এবং তার বর্ণনা দেওয়াই হল বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞানের কাজ। যেমন – প্রাণীবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা প্রভৃতির আলোচনা বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞানের পর্যায়ে পড়ে। কিন্তু ন্যায়-অন্যায়, ভাল-মন্দ, উচিত-অনুচিত প্রভৃতি বিশ্লেষণ করার জন্য আমরা আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞানের সাহায্য নিই।
নিয়ামক বিজ্ঞান:
আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞানকে মূল্যাবধারণের বিজ্ঞান বা নিয়ামক বিজ্ঞান বলা হয়। কোন আদর্শের মাপকাঠিতে বস্তুর মূল্য নির্ধারণ করাই আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞানের কাজ। বিষয়টি বা ঘটনাটি কি? আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলে বিষয়টি কি হওয়া উচিত।
নীতিবিদ্যার পরিধি বা পরিসর ও উপযোগিতা বা বিষয়বস্তু :-
অন্যান্য বিজ্ঞানের মতো নীতিবিজ্ঞানেরও আলোচনার নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু আছে।
ঐচ্ছিক ক্রিয়া:
আমরা জানি নীতিবিদ্যা মানুষের আচরণের নৈতিক মূল্য নির্ধারণ করে। এখানে ‘আচরণ’ বলতে আমরা মানুষের ঐচ্ছিক ক্রিয়া বুঝবো। ঐচ্ছিক ক্রিয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনৈচ্ছিক ক্রিয়া, কামনা, উদ্দেশ্য, অভিপ্রায় ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলিও নীতিবিজ্ঞানের সীমানায় আটকা পড়ে।
নৈতিক আদর্শ:
মানুষের আচরণের ভালত্ব, মন্দত্ব নির্ধারণ করতে গেলে একটা নৈতিক আদর্শ থাকা প্রয়োজন। যাকে মাপকাঠি বা আনন্দ, কেউ বলেন বৃচ্ছতাসাধন, আবার কেউ কেউ আত্মোপলব্ধি বা পূর্ণতাকেই নৈতিক আদর্শ মনে করেন। ফলে এর উপযোগিতা অনস্বীকার্য।
কর্তব্য ও অধিকার:
যা ভাল এবং সুখ উৎপন্ন করে তাই করা আমাদের উচিত বা কর্তব্য। আমার কর্তব্য ও অধিকার নিবিড় সম্পর্কযুক্ত। বার্ধক্যকালে পিতাকে পালন করা পুত্রের একদিকে যেমন কর্তব্য অন্যদিকে তেমনি পিতার অধিকারও বটে। প্রসঙ্গত মনে রাখতে হবে নৈতিক বিচার নৈতিক বাধ্যভাবোধের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত।
গৌরব ও আগৗরব:
নৈতিক বাধ্যতাবোধ আবার কাজের নৈতিক উৎকর্ষ (Merit) এবং নৈতিক অপকর্যের (Demerit) সঙ্গে জড়িত। নীতিবিদ্যা মনে করে, বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে কর্তব্য করার মধ্যে গৌরব আছে। আর কোন কাজ করা উচিত জেনেও না করার মধ্যে আছে অগৌরবের উস্কানি।
বিচারকর্তা ও বিষয়বস্তু:
নৈতিক বিচার নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে এর সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট প্রশ্নগুলো, যেমন – নৈতিক বিচার কর্তা কে? নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু কি? এবং নৈতিক বিচার করার বৃত্তির স্বরূপ কি? – এসব নিয়েও নীতিবিদ্যা আলোচনা করে।
বিবেক:
নৈতিক বিচারের বৃত্তি ( Moral Faculty) র একটি নাম হচ্ছে Conscience বা বিবেক। অর্থাৎ বিবেকের স্বরূপ সংক্রান্ত প্রশ্ন ও মতবাদ নিয়েও নীতিবিদ্যার পরিধি বিস্তৃত।
শাস্তি:
ইচ্ছার স্বাধীনতা আছে বলেই মানুষের নৈতিক দায়িত্ব আছে। অপরাধের জন্য অপরাধীই দায়ী এবং নীতিবিদ্যা তার জন্য শাস্তি নির্দিষ্ট করে দেয়। অর্থাৎ শাস্তি ও শাস্তি নিয়ে বিভিন্ন মতবাদও নীতিবিদ্যায় আলোচ্য।
অবশ্য স্বীকার্যতত্ত:
কতকগুলো অবশ্য স্বীকার্য তত্ত্ব নীতিবিদ্যা মেনে নেয়। যেমন – ব্যক্তির সত্তা, বিচারশক্তি, ইচ্ছার স্বাধীনতা ইত্যাদি। এছাড়া নৈতিক মনোভাব নিয়েও নীতিবিদ্যা আলোচনা করে।
মূল্যায়ন:
পরিশেষে বলা যায়, নিজ সীমানা ছাড়িয়ে নীতিবিদ্যা অন্যান্য বিজ্ঞানের বিষয় নিয়েও আলোচনা করে যেন নিজেকে পত্রে, পুষ্পে, সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তুলেছে।