স্বরসঙ্গতি কাকে বলে? স্বরসঙ্গতির উদাহরণ দাও?
একটি স্বরধ্বনির প্রভাবের ফলে শব্দের অপর স্বরের যে পরিবর্তন হয় তাকে স্বরসঙ্গতি বলে। অর্থাৎ দুইটি স্বরধ্বনির মধ্যে সঙ্গতি রক্ষার জন্য একটির প্রভাবে আরেকটি পরিবর্তিত হলে তখন তাকে স্বরসঙ্গতি বলি।
স্বরসঙ্গতির উদাহরণঃ
দেশি > দিশি( এখান দেশি= দে+এ+শ+ই, দিশি= দ+ই+শ+ই)—‘ই’-র প্রভাবে ‘এ’ পরিবর্তিত হয়ে ‘ই’ হয়েছে।
মুলা > মুলো
স্বরসঙ্গতি আবার ৫ প্রকারঃ
- প্রগত
- পরাগত
- মধ্যগত
- অন্যোন্য
- চলিত বাংলায় স্বরসঙ্গতি
১. প্রগতঃ পূর্বের বা আগের স্বরধ্বনি অনুযায়ী পরের স্বরধ্বনি পরিবর্তিত হলে এটাকে প্রগত স্বরসঙ্গতি বলা হয়।
যেমন: তুলা > তুলো, মুলা > মুলো, শিকা > শিকে।
২. পরাগতঃ এটা ঠিক প্রগত স্বরসঙ্গতির উল্টা অর্থাৎ অন্ত্যস্বর বা পরের স্বরধ্বনি অনুযায়ী আগের স্বরধ্বনির পরিবর্তিত হলে তাকে পরাগত স্বরসঙ্গতি বলে।
যেমন: আখো > আখুয়া > এখো, দেশি > দিশি।
৩. মধ্যগতঃ আগের স্বরধ্বনি ও পরের স্বরধ্বনির প্রভাবে মধ্যস্বর পরিবর্তিত হলে তাকে মধ্যগত স্বরসঙ্গতি বলা হয়।
যেমনঃ বিলাতি > বিলিতি।
৪. অন্যোন্যঃ আদ্যস্বর ও অন্ত্যস্বর এই দুইটির প্রভাবে যদি দুইটিই পরিবর্তিত হয় তখন তাকে অন্যোন্য স্বরসঙ্গতি বলে।
যেমন: মোজা > মুজো।
৫. চলিত বাংলায় স্বরসঙ্গতিঃ মিলামিশা˃ মেলামেশা, গিলা˃ গেলা, মিঠা˃ মিঠে, ইচ্ছা˃ ইচ্ছে। মুড়া > মুড়ো, চুলা > চুলো। উড়ুনি > উড়নি, এখুনি > এখনি।
সংকর শব্দ – মিশ্র বা সংকর কথাটির সাধারণ অর্থ হল দুই বা তার বেশি ভিন্ন উপাদান মিশিয়ে প্রাপ্ত। যে কোনো ভাষার শব্দভাণ্ডারে বিভিন্ন উৎস থেকে শব্দ, ধাতু, উপসর্গ, প্রত্যয় প্রভৃতি গ্রহণ করা হয়। এইসব ভিন্ন ভিন্ন উৎস থেকে নেওয়া উপাদানের মধ্যে অনেক সময় মিশ্রণ ঘটতে দেখা যায়। এই ভাবে ভিন্ন ভিন্ন উৎস থেকে আগত একাধিক শব্দের মিলনে অথবা, ভিন্ন ভিন্ন উৎস থেকে আগত শব্দ ও শব্দাংশের (শব্দাংশ বলতে এখানে উপসর্গ ও প্রত্যয়) মিলনে যে শব্দ গঠিত হয়, তাকে মিশ্র শব্দ বা সংকর শব্দ বলে।
একটি কথা মনে রাখতে হবে: দুটি শব্দের মিলনে নতুন শব্দ গঠিত হলেই তা মিশ্র শব্দ নয়। মিশ্র শব্দ হওয়ার জন্য উপাদানগুলিকে অবশ্যই ভিন্ন উৎস থেকে আগত হতে হবে। যেমন তৎসম + তদ্ভব, বিদেশি + তৎসম, দেশি + বিদেশি ইত্যাদি। বিদেশি শব্দের সঙ্গে বিদেশি শব্দের যোগেও মিশ্র শব্দ হতে পারে, কিন্তু সেক্ষেত্রে দেখতে হবে উপাদান শব্দগুলি যেন একই ভাষা থেকে আগত না হয়। যেমন: আরবি ও ইংরেজি বা ফারসি ও তুর্কির মিশ্রণে মিশ্র শব্দ হতে পারে, কিন্তু ইংরেজি শব্দের সঙ্গে আর একটি ইংরেজি শব্দের মিশ্রণে মিশ্র শব্দ হবে না। যেমন: হেডমাস্টার শব্দটি মিশ্র শব্দ নয়, এটি একটি ইংরেজি শব্দ হিসেবে বিদেশি শব্দের অন্তর্ভুক্ত হবে।
মিশ্র শব্দের উদাহরণ হেডপণ্ডিত (বিদেশি + তৎসম) কেষ্টঠাকুর (অর্ধতৎসম + তদ্ভব) বদরাগি (বিদেশি + তদ্ভব) রেলগাড়ি (বিদেশি + বিদেশি)
জোড়কলম শব্দ
একাধিক রূপের মিশ্রণের ফলেই তৈরি হয় পাের্টম্যানটু ওয়ার্ড বা জোড়কলম শব্দ। যখন একটি শব্দ বা শব্দাংশের সঙ্গে অন্য শব্দ বা শব্দাংশ। জুড়ে একটি নতুন শব্দ তৈরি করা হয়, তখন তাকে বলে জোড়কলম শব্দ।
যেমন-আরবি ‘মিন্নৎ’ শব্দের প্রথমাংশ এবং সংস্কৃত ‘বিজ্ঞপ্তি’ শব্দের শেষাংশ জুড়ে তৈরি হয়েছে জোড়কলম শব্দ ‘মিনতি’। জোড়কলম শব্দ ‘ধোঁয়াশা’ সৃষ্টি হয়েছে তেমনি ‘ধোঁয়া’ শব্দের প্রথমাংশ এবং ‘কুয়াশা’ শব্দের শেষাংশ জুড়ে। জোড়কলম শব্দসৃষ্টি তাই রূপের মিশ্রণগত নিষ্পাদন প্রক্রিয়া। জোড়কলম শব্দ এমনই এক রূপমূল যা দিয়ে একাধিক রূপ-বাক্যতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য বােঝানাে হয়। একাধিক রূপমূলের সমবায় হল জোড়কলম শব্দ। যে দুটি শব্দের যােগসাধন ঘটে, তাদের অর্থ জোড়কলম শব্দে সমানভাবে গুরুত্ব পায়।
বর্ণ বিপর্যয় কাকে বলে। ধ্বনি বিপর্যয় কাকে বলে |বিপর্যাস বা বর্ণ বিপর্যয় বা ধ্বনি বিপর্যয় কাকে বলে
শব্দের ভিতর দুটি ধ্বনি বা বর্ণ যখন নিজেদের মধ্যে স্থান বিনিময় করে, তখন তাকে বলে বর্ণবিপর্যয় বা ধ্বনি বিপর্যয় বা
বিপর্যাস। স্থান বিনিময় বলতে কী বোঝায়? স্থান বিনিময় বলতে বোঝায় রামের জায়গায় শ্যাম এসে বসবে, শ্যামের জায়গায় গিয়ে বসবে রাম। বলা বাহুল্য, এখানে রাম-শ্যামের বদলে থাকবে দুটি ধ্বনি। যেমন: আমরা অনেকেই ‘রিক্সা’-র জায়গায় বলি ‘রিস্কা’ বা ‘জানালা’-র জায়গায় ‘জালানা” ।
বর্ণ বিপর্যয়ের অপর নাম ধ্বনি বিপর্যয় বা বিপৰ্যাস।
বর্ণ বিপর্যয়ের উদাহরণ বিশ্লেষণ
এখন আসুন, বর্ণ বিপর্যয়ের একখানা উদাহরণকে বর্ণ বিশ্লেষণ করে ভেঙে দেখি সংজ্ঞায় যা বললাম, ব্যাপারটা ব্যাপারটা
ঠিক তাই ঘটছে কিনা ।
পিশাচ > পিচাশ – বর্ণ বিপর্যয়ের এই উদাহরণটিকে ভাঙবো।
পিশাচ = প্ + ই + শ্ + আ + চ্ + অ
পিচাশ = প্ + ই + চ্ + আ + শ্ + অ
লক্ষ করে দেখুন, সব ঠিকঠাক আছে, শুধু শ্ আর চ্ নিজেদের মধ্যে জায়গা বদল করে নিয়েছে, অর্থাৎ শ্-র জায়গায় এসেছে চ্ এবং চ্-এর জায়গায় গেছে শ্