ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের সূচনার কারণগুলি কি কি | What were the causes of the beginning of the Industrial Revolution in Europe

ভূমিকা : ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের প্রসার প্রসঙ্গে ইউরোপে শিল্পায়নের অন্তরায় হিসেবে সামন্ততান্ত্রিক ভাবধারা, রাজনৈতিক স্থিতি ও রাষ্ট্রিয় ঐক্যের অভাব, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, সুলভ ও পর্যাপ্ত শ্রমিকের অভাব, কাঁচামাল ও বাজারের সমস্যা, ফ্রান্সে শিল্পায়নের সময়কাল, শিল্পায়নে প্রতিবন্ধকতা, ষোড়শ লুইয়ের আমলে শিল্পোদ্যোগ, নেপোলিয়নের শিল্পোদ্যোগ, অষ্টাদশ লুইয়ের আমলে শিল্পোদ্যোগ, জার্মানিতে শিল্পায়নে বাধা, প্রাশিয়ার অগ্ৰগতি, শিল্পের বিকাশ, বিসমার্কের ভূমিকা, রাশিয়ায় শিল্পায়নে বাধা, জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের ভূমিকা, জার দ্বিতীয় নিকোলাসের আমলে শিল্পোদ্যোগ, সরকারি উদ্যোগ ও ইউরোপের অন্যান্য দেশে শিল্পায়ন সম্পর্কে জানবো।

ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের সূচনা :

অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগে বহু বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির আবিষ্কার এবং উৎপাদন ক্ষেত্রে তা প্রয়োগের ফলে শিল্প উৎপাদনের পরিমাণ ও গুণগত মানের ক্ষেত্রে যে অভূতপূর্ব পরিবর্তন দেখা দেয় তা শিল্প বিপ্লব নামে খ্যাত। ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের সূচনা হলেও ধীরে ধীরে ইউরোপের অন্যান্য দেশে তা সম্প্রসারিত হয়।

ইউরোপে শিল্পায়নের অন্তরায় :-

শিল্পায়নের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ড অপেক্ষা অন্যান্য দেশের পশ্চাৎপদতার নানা কারণ ছিল। যেমন –

(১) সামন্ততান্ত্রিক ভাবধারা

ঐতিহাসিক ডেভিড ল্যান্ডেস বলেন যে, ওই যুগে ইউরোপের জনসাধারণ সামন্ততান্ত্রিক ভাবধারায় আচ্ছন্ন ছিল। তারা যুদ্ধ-বিগ্রহ, জমিদারি পরিচালনা ও প্রশাসনিক কাজকর্মকে সম্মানজনক বলে মনে করত। ব্যবসা-বাণিজ্য বা কলকারখানার কাজকর্মকে তারা হেয় বলে মনে করত। এর ফলে ইউরোপের অন্যান্য দেশ শিল্পায়নের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ড অপেক্ষা পিছিয়ে পড়ে।

(২) রাজনৈতিক স্থিতি ও রাষ্ট্রিয় ঐক্যের অভাব

ইংল্যান্ডে রাজনৈতিক স্থিতি ও রাষ্ট্রীয় ঐক্য ছিল। ফ্রান্সে রাষ্ট্রীয় ঐক্য থাকলেও বিপ্লব-জনিত কারণে সেখানে কোনও স্থিতি ছিল না। ইতালি ও জার্মানিতে কোনও রাজনৈতিক সংহতি ছিল না। এই দুটি দেশ ছিল শতধা-বিভক্ত। এর ফলে এইসব দেশে কোনও জাতীয় অর্থনীতি গড়ে ওঠে নি।

(৩) অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা

ইংল্যান্ড ব্যতীত ইউরোপের অন্যান্য দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অপ্রতুল এবং রাস্তাঘাট, খাল ও নদীপথ ছিল খুবই অনুন্নত। অধ্যাপক ডেভিড টমসন রেলপথ আবিষ্কারের পূর্বে এই অনুন্নত যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থাকে শিল্পায়নের পথে অন্যতম প্রতিবন্ধক বলে উল্লেখ করেছেন।

(৪) সুলভ ও পর্যাপ্ত শ্রমিকের অভাব

আয়তনের দিক থেকে রাশিয়া, ফ্রান্স ও জার্মানি ইংল্যান্ড অপেক্ষা অনেক বড়ো হলেও তাদের জনসংখ্যা ছিল খুবই কম। শিল্প বিপ্লবের অন্যতম শর্ত হল সুলভ ও পর্যাপ্ত শ্রমিক। ইংল্যান্ড বাদে অন্যান্য দেশগুলিতে তা ছিল না।

(৫) গতিশীল শ্রমিক ও উন্মুক্ত বাজারের অভাব

শিল্পায়নের জন্য প্রয়োজন গতিশীল শ্রমিক শ্রেণি ও উন্মুক্ত বাজার। অষ্টাদশ শতকের সূচনায় ইংল্যান্ডে ভূমিদাস প্রথা বিলুপ্ত হওয়ায় সেখানে স্বাধীন ও গতিশীল শ্রমিক শ্রেণির আবির্ভাব ঘটে যা অন্যত্র ছিল না।

(৬) কাঁচামাল ও বাজারের সমস্যা

বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ইংল্যান্ডের উপনিবেশ থাকায় ইংল্যান্ডকে কখনোই কাঁচামাল সংগ্রহ বা উৎপাদিত পণ্যাদি বিক্রির জন্য বাজারের সমস্যায় পড়তে হয় নি। বলা বাহুল্য, ইউরোপের অন্যান্য দেশকে কিন্তু এইসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

শিল্প বিপ্লবের প্রসার

কালক্রমে ইউরোপের মানুষ তাদের ভুল বুঝতে পারে। নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় ক্ষুদ্র দেশ ইংল্যান্ডের সামরিক বল ও আর্থিক সমৃদ্ধি তাদের চোখ খুলে দেয় এবং তারা শিল্পায়নের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।

ফ্রান্স

ফ্রান্সে শিল্পায়ন শুরু হয় অনেক দেরিতে। ফ্রান্সে শিল্পায়নের বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(ক) কালসীমা

মার্কিন অর্থনীতিবিদ লুই ডানহামের মতে, ফ্রান্সে শিল্প বিপ্লবের সূচনা হয় ১৮১৪-১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে ভিয়েনা সম্মেলন ও ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারি বিপ্লব -এর মধ্যবর্তী সময়ে এবং তার পরিণতি আসে ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দের পরবর্তীকালে। রস্টোর মতে, ১৮৩০ থেকে ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তীকালে ফ্রান্সে শিল্প বিপ্লবের বিকাশ ঘটে।

(খ) শিল্পায়নে প্রতিবন্ধকতা

বিভিন্ন কারণে ফ্রান্সে শিল্প বিপ্লবের গতি ছিল খুবই মন্থর। যেমন –

(১) সাহায্যকারী উপাদানের অভাব

খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মূলধনের প্রাচুর্য, পণ্যের বাজার, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার প্রভৃতির উপর নির্ভর করে সাধারণত শিল্প বিপ্লব ঘটে। অষ্টাদশ শতাব্দীর ফ্রান্সে শিল্প-বিকাশের সাহায্যকারী এই উপাদানগুলির একান্ত অভাব ছিল।

(২) সামন্ততান্ত্রিক ভাবধারা

সামন্ততান্ত্রিক ফ্রান্সের অভিজাতবর্গের আকর্ষণ ছিল কৃষির প্রতি। জমিদারির অধিকার ও ভূ-সম্পত্তির মালিকানাকেই তারা সম্মানজনক বলে মনে করত।

(৩) কুটির শিল্প

রক্ষণশীল ও কায়িক শ্রমবিমুখ অভিজাতবর্গ শিল্প-বাণিজ্যকে ঘৃণা করত। কুটির শিল্পের মাধ্যমেই অভিজাতবর্গ ও ফরাসি জনগণের প্রয়োজন মিটে যেত। এর ফলে বৃহৎ শিল্প ও যন্ত্রপাতির প্রতি তারা কোনও আকর্ষণ বোধ করে নি।

(৪) সামাজিক পরিবেশ

ফ্রান্সের বুর্জোয়া ও ধনী ব্যবসায়ীদের সামাজিক মর্যাদা ছিল না। তারা শ্রমিক-কৃষকদের সঙ্গে তৃতীয় শ্রেণি বা Third Estate-এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর ফলে তারা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা থেকে বঞ্চিত ছিল। এই সামাজিক পরিবেশ কখনোই শিল্প-বিকাশের অনুকূল ছিল না।

(৫) রাজনৈতিক অস্থিরতা

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ পাদ থেকে ফ্রান্সে একের পর এক বিপ্লবী অভ্যুত্থান, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নেপোলিয়নের আমলে ক্রমাগত লোকক্ষয়কারী যুদ্ধ প্রভৃতির ফলে ফ্রান্সে শিল্পায়নের অনুকুল পরিবেশ গড়ে উঠতে পারে নি।

(৬) অনুন্নত কৃষি

ফ্রান্সের কৃষি-কাঠামো ছিল অনুন্নত। বিপ্লবের ফলে কৃষকদের হাতে প্রচুর জমি এলেও তা ছিল খণ্ড খণ্ড। এখানে বৈজ্ঞানিক প্রথায় চাষ করা সম্ভব ছিল না। চাষবাস হত পুরোনো পদ্ধতিতে। কৃষি বিপ্লব না হওয়ায় সমাজে উদ্বৃত্ত সৃষ্টি হয় নি, শিল্প বিপ্লবও ত্বরান্বিত হয় নি।

(৭) ফরাসি বিপ্লবের প্রভাব

ফরাসি বিপ্লব সামন্তপ্রথা উচ্ছেদ করে কৃষিজমির উপর প্রজার মালিকানা-স্বত্ব স্বীকার করে নেয়। বিপ্লবের মাধ্যমে জমি পেয়ে ফরাসি কৃষকরা জমির প্রতি প্রবলভাবে আসক্ত হয়ে পড়ে। সুতরাং তাদের পক্ষে জমি ছেড়ে শহরে গিয়ে শিল্প-শ্রমিকের বৃত্তি গ্রহণ সম্ভব ছিল না।

(৮) শ্রমিকের অভাব

ফরাসি জনগণের অর্ধেক ছিল শহরবাসী এবং বাকিরা কৃষিকাজে লিপ্ত ছিল। এই সমাজ ছিল অনেক বেশি গ্রামীণ। কল-কারখানায় কাজ করার জন্য গ্রামের মানুষ শহরে যেতে চাইত না। এর ফলে শিল্পে প্রমিকের জোগান ঠিকমতো ছিল না। গ্রামের মানুষদের চাহিদাও ছিল সীমিত। যারা তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী গ্রামেই উৎপাদন করত।

(৯) নতুন শিল্পের প্রতি আকর্ষণহীনতা

ফ্রান্সের শিল্প-সংগঠনেও যথেষ্ট ত্রুটি ছিল। শিল্পগুলি ছিল ক্ষুদ্র ও পরিবারভিত্তিক। তাদের পুঁজিও ছিল খুব কম। এইসব শিল্পের মালিকরা কোনও ঝুঁকি নেওয়ার পক্ষপাতী ছিল না এবং স্বাভাবিক কারণেই নতুন শিল্পের প্রতি তাদের কোনও আকর্ষণ ছিল না।

(১০) অনুন্নত যোগাযোগ

অনুন্নত পরিবহন ব্যবস্থা ফ্রান্সে শিল্পায়নের পথে প্রবল অন্তরায় ছিল। ইংল্যান্ডের মতো ফ্রান্সে সড়ক, খাল, রেলপথ প্রভৃতির বিকাশ হয় নি। ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে রেলপথের আয়তন ছিল মাত্র দু’হাজার মাইল। জাহাজ শিল্পও যথেষ্ট পিছিয়ে ছিল।

(১১) কাঁচামাল ও বাজারের অভাব

ফরাসি বিপ্লব এবং তার পরবর্তীকালে ফ্রান্সের উপনিবেশগুলি হস্তচ্যুত হওয়ায় কাঁচামালের উৎস ও উৎপাদিত পণ্যের বাজার সীমিত হয়ে পড়ে যার প্রভাব নেহাত কম ছিল না। উন্নত মানের কয়লার অভাব ফরাসি শিল্পে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

(১২) অনুন্নত ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা

শিল্পের উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও অন্তঃশুল্ক-প্রথা শিল্পের অগ্রগতিকে ব্যাহত করে। ফ্রান্সের ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা ছিল অনুন্নত। শিল্পের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাওয়া দুরূহ ছিল।

(১৩) বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের অভাব

ফ্রান্সে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কার হয় অনেক দেরিতে। ইংল্যান্ড থেকে বাষ্পীয় ইঞ্জিন আমদানি করা হলেও বেশি দাম ও কয়লার অভাবে তা ব্যবহার করা সম্ভব হত না।

(১৪) লেবোয়ার-এর মন্তব্য

ঐতিহাসিক লেবোয়ার বলেন যে, “ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ বাজার যথাযথ বাড়ে নি, বিদেশের বাজার ছিল ইংল্যান্ডের দখলে, শিল্পপণ্যের চাহিদা ছিল কম। এই কারণে শিল্পায়নে গতিবেগ আসে নি।”

(গ) ষোড়শ লুইয়ের আমলে শিল্পোদ্যোগ

ফরাসি সম্রাট ষোড়শ লুই-এর অর্থমন্ত্রী ক্যালোন ফ্রান্সে শিল্পায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি ইংল্যান্ড থেকে বিশেষজ্ঞদের আনিয়ে ফ্রান্সে কলকারখানা স্থাপনে উদ্যোগী হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রয়াস ব্যর্থ হয়।

(ঘ) নেপোলিয়নের আমলে শিল্পোদ্যোগ

(১) ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন ফ্রান্সে শিল্প গড়ে তুলতে উদ্যোগী হন। তাঁর মহাদেশীয় প্রথা প্রবর্তনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল ফরাসি শিল্পের বিকাশ। তিনি স্বল্প সুদে ঋণদান করেন এবং নতুন নতুন যন্ত্র আবিষ্কারে উৎসাহিত করতে থাকেন।

(২) নানাভাবে তিনি ফরাসি শিল্পোদ্যোগকে উৎসাহিত করেন। এই উদ্দেশ্যে চোরাপথে বহু যান্ত্রিক কৌশল ইংল্যান্ড থেকে ফ্রান্সে আসতে থাকে। তা সত্ত্বেও তাঁর আমলে ফ্রান্সে শিল্পায়নের গতি ছিল খুবই মন্থর।

(ঙ) অষ্টাদশ লুইয়ের আমলে শিল্পোদ্যোগ

  • (১) অলিয়েন্স বংশের লুই ফিলিপ (১৮৩০-১৮৪৮ খ্রিঃ)-এর রাজত্বকালেই ফ্রান্সে প্রকৃতপক্ষে শিল্প বিপ্লবের সূচনা হয়। শ্রমিক-স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে তিনি ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের নানা রকম সুযোগ-সুবিধা দান করেন এবং শিল্প সংস্থা গঠনে উৎসাহ দেন।
  • (২) নব-গঠিত এই সংস্থাগুলিকে বিদেশি প্রতিযোগিতার হাত থেকে রক্ষার জন্য তিনি শুল্ক-প্রাচীর গড়ে তোলেন। তাঁর আমলেই ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে প্যারিস থেকে সেন্ট জার্মেইন পর্যন্ত ফ্রান্সে প্রথম রেলপথ তৈরি হয়। নতুন নতুন রাস্তাঘাট তৈরি হাতে থাকে। এর ফলে মালপত্র চলাচলে সুবিধা হয়। লায়নস, বোর্দ, তুলোঁ, নন্টস প্রভৃতি শহরে বিভিন্ন শিল্পের বিকাশ ঘটতে থাকে।
  •  

(চ) তৃতীয় নেপোলিয়নের আমলে শিল্পোদ্যোগ

(১) ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ন (১৮৫০-১৮৭০ খ্রিঃ)-এর আমলে শিল্প বিপ্লবের প্রসার ঘটে। তাঁর আমলে ফ্রান্সে রেলপথের বিস্তার ঘটে এবং তা দুই হাজার মাইল থেকে দশ হাজার মাইলে দাঁড়ায়।

•        (২) তিনি লাফিং, হোপ, পেরিয়ার ব্রাদার্স প্রভৃতি পুঁজিপতিকে শিল্পে মূলধন বিনিয়োগ করতে উৎসাহ দেন। তিনি ক্রেডিট ফঁসিয়ারক্রেডিট মবিলিয়ারনামে দুটি মূলধন সরবরাহকারী ব্যাঙ্ক স্থাপন করেন। তাঁর উদ্যোগে ব্যাঙ্ক অব ফ্রান্সপুনর্গঠিত হয়।

•        (৩) রেলপথ সম্প্রসারণের ফলে লোহা, ইস্পাত ও কয়লা শিল্পের ক্ষেত্রেও উন্নতি ঘটে। লা ক্রশ-সহ নানা স্থানে লৌহ কারখানা গড়ে ওঠে। বস্ত্রশিল্প, রেশমশিল্প, কাগজশিল্প, চিনিশিল্প, রাসায়নিক শিল্প ও গন্ধদ্রব্য উৎপাদনের জন্য ফ্রান্সের খ্যাতি বৃদ্ধি পায়।

•        (৪) তিনি শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য বহুবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করেন। এই সময় শিল্পজাত দ্রব্যের রপ্তানিতে সমগ্র ইউরোপে ফ্রান্স ছিল দ্বিতীয় স্থানের অধিকারী। অবশ্য  ফ্রান্সে শিল্পায়ন হলেও শিল্প বিপ্লব হয় নি এবং শিল্পায়নের গতি ছিল খুবই মন্থর।

১৮৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জার্মানিতে শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল

অতি মন্থর গতিতে। জার্মানিতে শিল্পায়নের বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(ক) শিল্পায়নে বাধা

শিল্পক্ষেত্রে জার্মানির এই অনগ্রসরতার মূলে বেশ কয়েকটি কারণ ছিল। যেমন –

(১) রাজনৈতিক অস্থিরতা

এই সময় জার্মানিতে কোনও রাজনৈতিক ঐক্য ছিল না। জার্মানি তখন ৩৯টি রাজ্যে বিভক্ত ছিল। প্রত্যেক রাজ্যে আলাদা আলাদা শুল্ক দিয়ে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে মাল নিয়ে যেতে হত। এই ব্যবস্থা শুধু যে ব্যয়বহুল ছিল তাই নয়, বাণিজ্যের পক্ষেও তা ছিল খুবই অসুবিধাজনক।

(২) অনুন্নত যোগাযোগ

জার্মানির অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল খুবই অনুন্নত। জলপথ ও স্থলপথে পরিবহনের অসুবিধার জন্য সেখানে শিল্প-বিকাশের কোনও সুযোগ ছিল না। এক অঞ্চলের উদ্বৃত্ত মাল অন্য অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া খুবই দুরূহ ছিল।

(৩) মানসিকতার অভাব

জার্মানি ছিল মূলত কৃষিপ্রধান দেশ। জার্মানিতে শিল্পদ্রব্যের কোনও চাহিদা বা বাজার ছিল না। আবার জার্মানির ক্ষুদ্র রাজ্যগুলির কোনও উপনিবেশ না থাকায় বিদেশেও জার্মান শিল্পদ্রব্যাদির কোনও চাহিদা ছিল না। এর ফলে জার্মানদের মধ্যে শিল্প গড়ে তোলার মতো কোনও মানসিকতা ছিল না।

(৪) মূলধনের অভাব

শিল্প গড়ে তোলার জন্য যে মূলধনের প্রয়োজন, কৃষিপ্রধান জার্মানিতে তা ছিল না। জার্মানির ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা ছিল খুবই অনুন্নত।

(৫) জনসংখ্যা হ্রাস

জনস্ফীতি না ঘটায় শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমিকেরও অভাব ছিল। নোপোলনীয় যুদ্ধের কালে জার্মানির অর্থনৈতিক কাঠামো একেবারে বিনষ্ট হয় এবং জনসংখ্যাও প্রবলভাবে হ্রাস পায়।

(খ) প্রাশিয়ার অগ্রগতি

এই অবস্থায় জার্মান রাজ্য প্রাশিয়াতে কিছুটা শিল্পের প্রসার লক্ষ্য করা যায়। প্রাশিয়ার এই অগ্রগতির মূলে কতকগুলি কারণ ছিল। যেমন –

(১) ভূমিদাস প্রথার উচ্ছেদ

১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে প্রাশিয়াতে ভূমিদাস প্রথার উচ্ছেদ হলে মুক্ত ভূমিদাসরা শহরে এসে শিল্প-শ্রমিকের বৃত্তি গ্রহণ করে। এর ফলে শিল্পে কিছুটা উন্নতির সূচনা হয়।

(২) জোলভেরাইন প্রতিষ্ঠা

পূর্বে জার্মানিতে ৩৯টি রাজ্য ছিল। এই রাজ্যগুলির উপর দিয়ে কোনও মাল নিয়ে যেতে হলে প্রত্যেক রাজ্যে আলাদা আলাদা শুল্ক দিতে হত। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য বাধাপ্রাপ্ত হত। ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে প্রাশিয়ার নেতৃত্বে ১৮টি রাজ্য নিয়ে ‘জোলভেরাইন‘ নামে একটি শুল্ক-সংঘ বা শুল্ক সমবায় প্রতিষ্ঠিত হলে এই অসুবিধা দূর হয় ও শিল্পোন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হয়।

(৩) রেলপথের প্রসার

১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে ব্যাভেরিয়াতে প্রথম রেল যোগাযোগ শুরু হয়। তারপর ফ্রেডারিক লিস্ট নামক জনৈক অর্থনীতিবিদের উদ্যম এবং প্রাশিয়ার যুবরাজের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে লাইপজিগ থেকে ড্রেসডেন পর্যন্ত জার্মানিতে রেলপথ নির্মিত হয়। এর দশ বছরের মধ্যেই জার্মানিতে প্রায় ৩,০০০ মাইল রেলপথ বিস্তৃত না। রেল যোগাযোগের ফলে জার্মানির ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পক্ষেত্রে নতুন গতিবেগ রিত হয়।

(গ) শিল্পের বিকাশ

(১) ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি ঐক্যবদ্ধ হলে শিল্পক্ষেত্রে জার্মানিতে এক নব যুগের সূচনা হয়। জার্মানি দানবের মতো পদক্ষেপ নিয়ে শিল্প-জগতে ঢুকে পড়ে।

(২) ক্ষতিপূরণস্বরূপ ফ্রান্সের কাছ থেকে পাওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ জার্মান শিল্পে বিনিয়োগ করা হয়। ফ্রান্সের কাছ থেকে পাওয়া আলসাস-লোরেন অঞ্চল থেকে জার্মানি প্রচুর পরিমাণ লোহা ও কয়লা লাভ করে। এই দুটি খনিজ দ্রব্য পাওয়ায় জার্মান শিল্পে বিপ্লব ঘটে যায়।

(৩) বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ কেইনস বলেন যে, এই সময় জার্মান সাম্রাজ্য ‘রুধির ও লৌহের উপর নয়, ‘কয়লা ও লৌহের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল।

(ঘ) বিসমার্কের ভূমিকা

নবগঠিত জার্মানির শিল্পোন্নয়নে জার্মান চ্যান্সেলার বিসমার্ক বিশিষ্ট ভূমিকা গ্রহণ করেন। যেমন –

  • (১) তিনি শিল্পকে কেন্দ্রীয় সরকারের এক্তিয়ারভুক্ত করে শিল্পোন্নয়নের ব্যবস্থা করেন।
  • (২) জার্মানির বিভিন্ন রাজ্যে প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের মুদ্রা, ওজন, মাপ ও শুল্ক ব্যবস্থা বিলোপ করে জার্মানির সর্বত্র একই ধরনের মুদ্রা, ওজন, মাপ ও শুল্ক চালু করা হয়। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও আর্থিক লেনদেনের সুবিধা হয়।
  • (৩) শিল্পে মূলধন সরবরাহের জন্য ব্যাঙ্ক ব্যবস্থার পুনর্গঠন করা হয় এবং বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সমন্বয়ে হাইপার ব্যাঙ্ক গঠিত হয়।
  • (৪) তিনি কার্টেল, ট্রাস্ট, কমবাইন প্রভৃতি একচেটিয়া যৌথ সংগঠনের মাধ্যমে দেশে বৃহদায়তন শিল্প-প্রতিষ্ঠানের বিকাশ ঘটান।
  • (৫) কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে দেশে রেলপথ নির্মাণ চলতে থাকে।
  • (৬) বিদেশি প্রতিযোগিতার হাত থেকে জার্মান শিল্পকে রক্ষার জন্য বিসমার্ক শিল্প সংরক্ষণের নীতি গ্রহণ করেন এবং বিদেশি পণ্যের উপর অধিক শুল্ক আরোপ করেন।

 (ঙ) শিল্পের দশক

জার্মান-শিল্পে প্রভূত উন্নয়নের সূচনা হয় এবং বিসমার্কের উদ্যাগে উনিশ শতকের সত্তরের দশক জার্মানির শিল্পায়নের দশকে পরিণত হয়।

(চ) অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পপ্রধান দেশ

১৮৭০-১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে জার্মানিতে ৮৫৭টি শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। লোহা ও ইস্পাত শিল্পে বিপ্লব ঘটে যায়। এই দুই শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে সমরাস্ত্র শিল্প, রেলপথ শিল্প ও বাণিজ্যিক নৌবহর নির্মাণ শিল্প। কয়লা শিল্পেরও বিকাশ ঘটে। যন্ত্রশিল্প, ইঞ্জিন তৈরি, মোটরশিল্প, রসায়ন ও ঔষধ নির্মাণ শিল্প – সব দিকেই জার্মানির অগ্রগতি ঘটে এবং জার্মানি ক্রমে ইউরোপের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পপ্রধান দেশে পরিণত হয়।

রাশিয়া

রাশিয়াতে শিল্প বিপ্লবের প্রভাব পড়ে অনেক দেরিতে। রাশিয়ায় শিল্পায়নের বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(ক) শিল্পায়নে বাধা

রাশিয়ায় শিল্পায়নের মূলে কতকগুলি কারণ ছিল। যথা –

(১) সামন্ততান্ত্রিক দেশ

রাশিয়া ছিল একটি সামন্ততান্ত্রিক কৃষিপ্রধান দেশ। রাশিয়ার মানুষ মূলত দুটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল – সামন্তপ্রভু ও ভূমিদাস। রাশিয়ার শিল্পায়ন নিয়ে সামন্তপ্রভুদের কোনও মাথাব্যথা ছিল না। এই সময় দেশে কোনও মধ্যবিত্ত বুর্জোয়া শ্রেণিরও আবির্ভাব হয় নি, যারা রুশ শিল্পায়নে উদ্যোগী হতে পারে।

(২) অনুন্নত যোগাযোগ

রাশিয়ার যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা ছিল অতি নিম্নমানের। দেশে রাস্তাঘাট বিশেষ ছিল না এবং নদীগুলিতে প্রায় সারা বছরই বরফ জমে থাকত।

(৩) মূলধনের অভাব

শিল্পায়নের উপযোগী মূলধন রাশিয়ায় ছিল না। সেখানে কোনও ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে নি, এমনকী ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে সেখানে মুদ্রারও বিশেষ চল হয় নি। মূলত বিনিময় প্রথার মাধ্যমেই সব লেনদেন চলত।

(৪) শ্রমিকের অভাব

ভূমিদাসরা গ্রামে বসবাস করত এবং সামন্তপ্রভুদের অনুমতি ছাড়া তারা গ্রাম ত্যাগ করতে পারত না। ফলে শিল্প-কারখানা গঠিত হলে সেখানে শ্রমিক পাওয়া সম্ভব ছিল না।

(৫) আভ্যন্তরীন বাজারের অভাব

রাশিয়ার কৃষকরা ছিল খুবই দরিদ্র। তাদের পক্ষে কোনও শিল্পপণ্য কেনা সম্ভব ছিল না। এর ফলে রাশিয়ায় শিল্পপণ্যের কোনও অভ্যন্তরীণ বাজার গড়ে ওঠে নি।

(খ) দ্বিতীয় আলেকজাণ্ডারের ভূমিকা

১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার সিংহাসনে বসলে রুশ শিল্পায়নে নব যুগের সূচনা হয়। তিনি এক্ষেত্রে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যেমন –

(১) ভূমিদাস প্রথার উচ্ছেদ

১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভূমিদাস প্রথা নিষিদ্ধ করলে মুক্তিপ্রাপ্ত ভূমিদাসরা শ্রমিক হিসেবে কলকারখানায় যোগ দেয়। এর ফলে রাশিয়ার শিল্পক্ষেত্রের অন্যতম প্রধান বাধা অপসারিত হয়।

(২) রেলপথের প্রসার

তাঁর আমলে রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে রেলপথ সম্প্রসারিত হলে যোগযোগ ব্যবস্থা ও মাল পরিবহনের ক্ষেত্রে সত্যিই যুগান্তর আসে। আলেকজান্ডারের রেলপথ নির্মাণকে কেন্দ্র করে লোহা, কয়লা ও আধুনিক প্রযুক্তির বিস্তার ঘটে।

(গ) জার দ্বিতীয় নিকোলাসের আমলে শিল্পোদ্যোগ

রুশ শিল্পায়নে জার দ্বিতীয় নিকোলাস -এর বাণিজ্য ও অর্থমন্ত্রী কাউন্ট সের্গেই উইটি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেন। শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তিনি

  • (i) বাজেটে আয়-ব্যয়ের সমতা স্থাপন করেন,
  • (ii) আমদানি কমিয়ে রপ্তানি বৃদ্ধি করেন,
  • (iii) স্বর্ণমান প্রবর্তন করেন এবং
  • (iv) পরোক্ষ কর চাপিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেন।

(ঘ) সরকারি উদ্যোগ

সরকারি উদ্যোগে বেলজিয়াম, ফ্রান্স, জার্মানি প্রভৃতি দেশ থেকে বৈদেশিক ঋণ সংগ্রহ করা হয়। মূলত বিদেশি পুঁজির উপর নির্ভর করেই রাশিয়ায় শিল্পায়ন ঘটে। ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার শিল্পে বিদেশি মূলধনের পরিমাণ ছিল ৮০০ মিলিয়ন রুবল। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে তার পরিমাণ দাঁড়ায় দুই হাজার মিলিয়ন রুবল।

(ঙ) শিল্পের দুর্বার গতি

রাশিয়ায় ব্যাঙ্ক ব্যবস্থার প্রসার ঘটে। দেশের নানা স্থানে ভারী শিল্প (কয়লাখনি, পেট্রোল নিষ্কাশন, লৌহ উত্তোলন এবং লৌহ ও ইস্পাত শিল্প) গড়ে উঠতে থাকে। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রুশ বিপ্লব -এর আগেই রাশিয়া শিল্পে যথেষ্ট অগ্রসর হয় এবং বিপ্লব-পরবর্তী যুগে তার গতি দুর্বার হয়ে ওঠে।

ইউরোপের অন্যান্য দেশে

এই সময় ইউরোপের অন্যান্য দেশেও শিল্প বিপ্লব সম্প্রসারিত হয়। এ ব্যাপারে প্রথমে হল্যান্ডের নাম করা যায়। অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে হল্যান্ডে আর্করাইট কর্তৃক আবিষ্কৃত ওয়াটারফ্রেম প্রবর্তিত হয়। ইংরেজ শিল্পপতিদের চেষ্টায় ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে বেলজিয়ামে রেলপথ এবং লৌহ ও কয়লা শিল্প গড়ে ওঠে। ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে ইতালির পিডমন্টে বাষ্পীয় ইঞ্জিন চালু হয়। তাছাড়া সুইডেন, স্পেন, অস্ট্রিয়া, স্যাক্সনি, বোহেমিয়া এবং রুশ অধিকৃত পোল্যান্ড প্রভৃতি দেশে শিল্পকেন্দ্র গড়ে ওঠে।

উপসংহার:- এই কথা বলাই বাহুল্য যে, ব্যাপক বৈজ্ঞানিক অগ্ৰগতির কারণেই ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব সম্ভব হয়। শুধু তাই নয় ইউরোপের অন্যান্য দেশ গুলি ইংল্যান্ড থেকে বিশেষজ্ঞ নিয়ে গিয়ে নিজেদের দেশে শিল্পোন্নয়ন ঘটাতেন। এই কারণে ইংল্যান্ডকে ‘ইউরোপের শিক্ষক’ বলা হতো।

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Why national building regulations. My invoices explore your city. Blog dm developments north west.