আদর্শায়িত অভীক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল- নির্ভরযোগ্যতা, একই অভীক্ষা একই শিক্ষার্থী দলের ওপর বারবার প্রয়োগ করবার পর যদি একই ফল পাওয়া যায় তাহলে বলা হবে অভীক্ষাটিকে নির্ভরযোগ্য। নির্ভরযোগ্যতার দ্বারা অভীক্ষাটি কতটা নির্ভুল নিখুঁত তা পরিমাপ করা হয়। সাধারণ অর্থে কোন পরিমাপের সামঞ্জস্যপূর্ণ স্থিরতাকে বা অপরিবর্তনীয় তাকে বলা হয় তার নির্ভরযোগ্যতা। একটি উদাহরণের সাহায্যে নির্ভরযোগ্য তাকে বোঝাতে গেলে বলা যায়, আমি দোকান থেকে এক মিটার কাপড় কিনে এনে আলমারিতে রেখে দিলাম 10 বছর পর সে কাপড়টা বার করে যদি পরিমাপ করি তাহলে তার দৈর্ঘ্য এক মিটারই থাকবে বাড়বে না বা কমবে না এটাই হলো নির্ভরযোগ্যতা।
নির্ভরযোগ্যতা হ্রাসের কারণ :
বিভিন্নভাবে বিচার করে নির্ভরযোগ্য তাড়াশের কারণকে তিন দিক থেকে ভাগ করা যায়। যথা-
১) অভীক্ষা নির্ভর কারণ ।
২) অভীক্ষা গ্রহণকারী নির্ভর কারণ ।
৩) অভীক্ষা প্রয়োগকারী নির্ভর কারণ ।
অভীক্ষা নির্ভর কারণ :
১) অভীক্ষার দৈর্ঘ্য যদি খুব বেশি বা কম হয় তাহলে অভীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা কম হতে পারে।
২) অভীক্ষার অন্তরগত সব অভীক্ষাপদ যদি খুব সহজ হয় কিংবা খুব কঠিন হয় সেক্ষেত্রে অভীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা হ্রাস পেতে পারে।
৩) একটি অভীক্ষার মধ্যে অভীক্ষাপদগুলিতে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো-ছিটানো থাকে তাহলে তার নির্ভরযোগ্যতা হ্রাস পেতে পারে।
৪) অভীক্ষার পদগুলি যদি শিক্ষার্থীরা অনুমানের ভিত্তিতে উত্তর করে তাহলে অনেক সময়ে অভীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা হ্রাস পায়।
৫) অভীক্ষার অন্তরগত যদি এমন কোনো অভীক্ষাপদ থাকে যেগুলো শিক্ষার্থীদের বিচলিত করে কিংবা প্রক্ষোভ জাগরিত করে, তাহলে সেই ধরনের অভীক্ষা পদগুলির কারণে নির্ভরযোগ্যতা হ্রাস পেতে পারে।
অভীক্ষা গ্রহণকারী নির্ভর কারণ :
পরীক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত কিছু কারণের জন্য অভীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা হ্রাস পেতে পারে। যেমন-
১) অভীক্ষার সময় যদি শিক্ষার্থী মানসিক দিক থেকে প্রস্তুত না থাকে তাহলে নির্ভরযোগ্যতা হ্রাস পায়।
২) যদি শিক্ষার্থী প্রাক্ষোভিক দিক থেকে বিচলিত থাকে তাহলে নির্ভরযোগ্যতা হ্রাস পেতে পারে।
৩) অভীক্ষায় শিক্ষার্থীর যদি মনোযোগের অভাব ঘটে তাহলে নির্ভরযোগ্যতা হ্রাস পায়।
৪) অভীক্ষার সময় যদি শিক্ষার্থী সঠিকভাবে নির্দেশ অনুসরণ না করে তাহলেও নির্ভরযোগ্যতা হ্রাস পেতে পারে।
অভীক্ষা প্রয়োগকারী নির্ভর কারণ :
পরীক্ষক কর্তৃক অভীক্ষা প্রয়োগের সময় অনেক রকম ত্রুটির দরুন অভীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা হ্রাস পেতে পারে। যেমন-
১) অভীক্ষা গ্রহণকালে পরীক্ষকের যদি ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের প্রভাব পড়ে তাহলে নির্ভরযোগ্যতা কমে যেতে পারে।
২) পরীক্ষক-এর যদি অভীক্ষা পরিচালনা সংক্রান্ত অভিজ্ঞতার অভাব থাকে তাহলেও নির্ভরযোগ্যতা হ্রাস পেতে পারে।
৩) পরীক্ষকের যদি বিষয় সংক্রান্ত জ্ঞানের অভাব থাকে তাহলেও নির্ভরযোগ্যতা কমে যেতে পারে।
নির্ভরযোগ্যতা নির্ণয়ের পদ্ধতি ;
নির্ভরযোগ্যতা নির্ণয়ের মূলত চারটি পদ্ধতি আছে, এগুলি হল-
1. Test retest method .
2. Parallel test method .
3. Intra split-half method .
4. Inter split half method .
1. Test retest method :- কোন অভীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা নির্ণয়ের সবথেকে সহজ পদ্ধতি হলো Test retest method বা পুনঃ পরীক্ষণ পদ্ধতি। এক্ষেত্রে একই অভীক্ষা একই শিক্ষার্থীদের ওপর পরপর দুবার প্রয়োগ করে যে স্কোর বন্টন পাওয়া যায় সেই স্কোর বন্টনের সহগতির সহগাঙ্ক নির্ণয়ের মাধ্যমে নির্ভরযোগ্যতা প্রকাশ করা হয়।
2. Parallel test method :- এই পদ্ধতিকে বলা হয় সমান্তরাল অভীক্ষা পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে অভিক্ষা গঠনের সময় একই সাথে দুটি অভিক্ষা প্রস্তুত করা হয়, এই অভিক্ষা দুটি এমন ভাবে প্রস্তুত করা হয় যাতে অভীক্ষাপদগুলির প্রকৃতি, তাদের কাঠিন্য মান এবং সেগুলি বিন্যাসের মধ্যে সাদৃশ্য থাকে। কারণ উভয় অভীক্ষার দাঁড়ায় শিক্ষার্থীদের একই বৈশিষ্ট্য পরিমাপ করা যাবে, দুটি সমান কাঠিন্যমান-এর প্রশ্ন দুটি শিক্ষার্থী দলের মধ্যে একই উদ্দেশ্য পরিমাপের জন্য প্রয়োগ করা হয়, এবং উভয় দলের শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বরের সহগতির সহগাঙ্ক নির্ণয়ের মাধ্যমে অভীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা নির্ণয় করা হয়।
3. Intra split-half method :- এই পদ্ধতিতে নির্ভরযোগ্যতা নির্ণয় করার জন্য একটি প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়। অভীক্ষার অন্তরগত অভীক্ষাপদগুলিকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। এই ভাগ করার জন্য বিশেষ কিছু নিয়ম অনুসরণ করা হয়ে থাকে। দুটি খন্ডের মধ্যে একটিতে থাকে Odd(1,3,5,7) নম্বরের প্রশ্ন এবং অপরটিতে থাকে Even(2,4,6,8) নাম্বার-এর প্রশ্ন। এইভাবে দুটি খন্ডের যে পৃথক পৃথক স্কোর বন্টন পাওয়া যাবে, তাদের মধ্যে সহগতির সহগাঙ্ক নির্ণয় করলে নির্ভরযোগ্যতার সহগাঙ্ক নির্ণীত হবে। যে নির্ভরযোগ্যতার সহগাঙ্ক পাওয়া যাবে সেটি অর্ধেক অভীক্ষার এবার সম্পূর্ণ অভীক্ষার সহগতির সহগাঙ্ক নির্ণয় করার জন্য তাকে স্পিয়ারম্যান ব্রাউনের সূত্রের সাহায্যে নির্ণয় করতে হবে।
4. Inter split half method :- এই পদ্ধতিতে বাস্তবে অভীক্ষাটিকে দ্বিখণ্ডিত করার প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে Kuder Richardson-এর ফর্মুলা নাম্বার 21 প্রয়োগ করে নির্ভরযোগ্যতা নির্ণয় করা হয়।