শিক্ষার ধরন
শিক্ষা একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। মানুষ জন্মের পর থেকে মৃত্যুর আগে মূহুর্ত পর্যন্ত শেখে। তাই শিক্ষার লাভের বিভিন্ন ধরন রয়েছে। যেমন:
আনুষ্ঠানিক শিক্ষা: আনুষ্ঠানিক শিক্ষা একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামােগত পরিবেশে ঘটে, যার উদ্দেশ্য
হল শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করা। সাধারণত, একটি প্রাতিষ্ঠানিক (স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়) পরিবেশে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা সঞ্চালিত হয়। যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, শিক্ষাকর্মী একটি নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হয়। শিক্ষার্থীদের জন্য একজন প্রশিক্ষিত শিক্ষক থাকেন বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদানের জন্য। একটি নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রম, সাংগঠনিক মডেল, ছাত্র-শিক্ষক ইন্টারঅ্যাকশন, মূল্যায়ন পদ্ধতি ইত্যাদি থাকে।
অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা: অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা সাধারণত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাহিরে ঘটে থাকে যা নির্দিষ্ট কোন পাঠ্যক্রম অনুসরণ করেনা। বিশেষ করে বাস্তবিক পরিবর্তনের সাথে সাথে ব্যবহারিক প্রয়ােজনীয়তার উপর ভিত্তি করে এর উৎপত্তি ঘটতে পারে। এটি অপরিহার্যভাবে তথাকথিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে অনুসরণ করেনা। অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা বিভিন্ন জায়গায় যেমন বাড়িতে, কাজের মধ্যে দিয়ে এবং দৈনিক কথােপকথন যা সমাজের সদস্যদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এই শিক্ষা মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে অর্জন করে থাকে।
প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষাবিদদের ধারণা: প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষাবিদ পাণিনি -র মতে, শিক্ষা হল এমন এক ধরনের প্রশিক্ষণ যা প্রকৃতির কাছ থেকে ব্যক্তি অর্জন করে। কৌটিল্য-র মতে শিক্ষার অর্থ হল দেশমাতৃকার জন্য প্রশিক্ষণ এবং জাতির প্রতি প্রীতি। উপনিষদে বলা হয়েছে, সা বিদ্যা যা বিমুক্তযে; অর্থাৎ, সেই হল বিদ্যা যা মুক্ত করে বা বন্ধন মােচন করে। ঋকবেদে বলা হয়েছে, শিক্ষা হল এমন একটি প্রক্রিয়া যা ব্যক্তিকে আত্মবিশ্বাসী এবং আত্মত্যাগী করে তােলে।
আধুনিক ভারতীয় শিক্ষাবিদদের ধারণা: স্বামী বিবেকানন্দ-র মতে, “শিক্ষা হল শিশুর অন্তর্নিহিত ‘সত্ত্বার পরিপূর্ণ বিকাশ’। গান্ধীজী-র মতে, “শিক্ষা হল শিশুর দেহ, মন ও আত্মার পরিপূর্ণ বিকাশ”। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন-“তাকেই বলি শ্রেষ্ঠ শিক্ষা যা কেবল তথ্য পরিবেশন করে না, যা বিশ্ব সত্তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের জীবনকে গড়ে তােলে”।
পাশ্চাত্য শিক্ষাবিদদের ধারণা: রুশাের মতে, শিশুর স্বতস্ফূর্ত আত্মবিকাশ, যা মানব সমাজে সকল কৃত্রিমতাবর্জিত একজন স্বাভাবিক মানুষ তৈরিতে সহায়ক। প্লেটো-র মতে, শিক্ষা হল শিশুর নিজস্ব ক্ষমতা অনুযায়ী দেহ-মনের সার্বিক বিকাশের সহায়ক প্রক্রিয়া। অ্যারিস্টটল-র মতে, “সুস্থ দেহে সুস্থ মন তৈরি করাই হল শিক্ষা”। সক্রেটিসের ভাষায় “শিক্ষা হল মিথ্যার অপনােদন ও সত্যের বিকাশ”।
শিক্ষার সংজ্ঞা আধুনিককালের শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও মনােবিদরা শিক্ষার তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক দিকের সমন্বয় ঘটিয়ে বলেছেন, “যা মানুষকে কুসংস্কারমুক্ত করে, উদার করে, মার্জিত করে পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধানে সাহায্য করে এককথায় দায়িত্বশীল সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তােলে, তাই হল শিক্ষা।