সবুজ অভিযান কবিতার কাব্যিক সৌন্দর্য :
- বলাকার ১ সংখ্যক কবিতাটি রচিত একান্তই সবুজপত্রের জন্য, সবুজপত্রের প্রথম সংখ্যার জন্য। আর সবুজপত্র যে রকম বাংলা সাহিত্যে এক নূতনতর ভাব ও ভাষা নিয়ে এসেছিল, সবুজপত্রের প্রথম সংখ্যায় সবুজের অভিযান’ নামে প্রকাশিত কবিতাটিও যেন তেমনি। কবিতাটিতে কবি দুরন্ত নবীনদের ক্রমশ অশান্ত প্রচণ্ড প্রমত্ত প্রমুক্ত হয়ে অমর হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।
- তাদেরকে পুরনো বদ্ধ সংস্কারাচ্ছন্ন জীবনধারাকে ভেঙে গুড়িয়ে নতুন জীবনধারা নতুন মূল্যবোধ নতুন মূল্যায়নে বলিষ্ঠ হয়ে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছেন। একই সাথে মনে করিয়ে দিচ্ছেন পথের বাধা-বিঘ্নের কথাও। আর এই বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে নূতনকে প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই নবীনের এই অমরতা লাভ সম্ভব।
- পরবর্তীতে কবি যখন কবিতাটির ব্যাখ্যা করেন, তিনি মূলত যৌবন ও প্রবীণতার দ্বন্দ্বেদ্বর বিষয়টিতে গুরুত্বারোপ করেন। প্রবীণতা বাধা-বিঘ্ন এড়িয়ে আপ্তবাক্য-শাস্ত্রবাক্য-বাঁধা বুলি মেনে নিরাপদ জীবন যাপন করতে চায়। অন্যদিকে যৌবনের ধর্মই হল নিয়ম না মানা, বিপদ মাথা পেতে নিয়ে সবকিছুকে প্রত্যক্ষ করা, অনুভব করা।
- ব্যাখ্যার শেষে উপসংহার টেনে তিনি বলেন, ‘যৌবনই বিশ্বের ধর্ম, জরাটা মিথ্যা। যৌবন জরাসন্ধের দূর্গ ভেঙে ফেলে জীবনের জয়ধ্বজা উড়ায়।
- এই বসন্ত নূতনের প্রতীক; বসন্ত এলে যেমন প্রকৃতিতে নূতনের মেলা বসে যায়, গাছগুলো নতুন পাতা আর নতুন কুঁড়িতে সেজে ওঠে, তাই দেখে পাখিরা দরাজ গলায় আনন্দের গান গাইতে শুরু করে দেয়, নবীনদের সবুজদের অভিযান শেষেও তেমনি মানবসমাজে বসন্ত আসবে; মানুষ নতুন সমাজবাস্তবতায় নতুন মূল্যবোধে নতুন করে বাঁচতে শিখবে, জীবনের নতুন মানে খুঁজে বের করে জীবনযাপন করবে, আর যে নবীনরা এই নবযুগ আনলো, তাদের জন্য প্রশংসা-গীত গীত হবে।
- এক্ষেত্রে আরেকটা তথ্য স্মর্তব্য, রবীন্দ্রনাথের কাব্যে প্রকৃতি মানুষের বিকল্প; রবীন্দ্রনাথ প্রকৃতির মধ্য দিয়া মানবসত্তাকে জানিয়াছেন; প্রকৃতি-প্রীতির মধ্যে তিনি মানব-প্রীতির স্বাদ পাইয়াছেন।