ভারতীয় সংবিধানের সংশোধন পদ্ধতিগুলি পর্যালোচনা করো।

অধ্যাপক জে.সি. জোহারীর মতে সাধারণ অর্থে সংশোধন করা হল উন্নতি বিধান। কিন্তু সংবিধানের প্রেক্ষাপটে যখন সংশোধন করার কথা বলা হয় তখন তা স্বতন্ত্র অর্থবহন করে। সংবিধানের কোন অংশ বা অংশসমূহের পরিবর্তন সংযোজন বা বর্জন কে তাই সংবিধান সংশোধন বলা হয়। অনেকে সংবিধান সংশোধনকে বলেন সংবিধান সংশোধন হল সংবিধানের যে কোনো অংশের যে কোনো ধরনের পরিবর্তন। ফাইনারের প্রতিধ্বনি করে বলা হয় “To amend is to deconstitute and reconstitute.”

ভারতের প্রখ্যাত সংবিধান বিশেষজ্ঞ এন. এ. পাল্কিওয়ালা তাঁর বিখ্যাত “Our Constitution: Defaced and Defiled’ গ্রন্থে বলেছেন সংবিধান সংশোধন হল- – ক) সংবিধানের উন্নতি বা অধিক ভালো করা তথা এর ত্রুটি বিচ্যুতি গুলি দুর করা।

খ) সেই ধরনের পরিবর্তন করাযার ফলে মূল সংবিধানের উৎকর্ষ সাধিত না হলেও কিন্তু তার মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলি অক্ষুণ্ণ থাকে।

গ) সংবিধানের যে কোনো ধরনের পরিবর্তন।

আধুনিক সংবিধানের শ্রেণিবিভাজনের অন্যতম ভিত্তি হল সংবিধানের সংশোধনের প্রকৃতি এবং

লর্ড ব্রাইস সে কারনেরই সংবিধান সংশোধন পদ্ধতির পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধানগুলিকে দুভাগে বিভক্ত

করেছেন যথা-

ক) সুপরিবর্তনীয় (Flexible)

খ) দুষ্পরিবর্তনীয় (Regid)

যে সংবিধান সাধারন আইন প্রণয়নের পদ্ধতিতে পরিবর্তন করা যায় অর্থাৎ সহজেই পরিবর্তন করা যায় তা হল সুপরিবর্তনীয় বা নমনীয় সংবিধান (Flexible Constituion)। অধ্যাপক গেটেল অনুরূপভাবে বলেন- “যে সংবিধান সাধারণ আইন প্রনয়ণ সংস্থা কর্তৃক সহজে সংশোধিত হয় তাকে সুপরিবর্তনীয়। ব্রিটেনের ও নিউজিল্যান্ডের সংবিধান হল এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

অপরদিকে যে সংবিধান সাধারন আইন প্রণয়ণের পদ্ধতিতে পরিবর্তিত না হয়ে বিশেষ এক জটিল পদ্ধতিতে পরিবর্তিত হয় অর্থাৎ যে সংবিধান পরিবর্তনে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয় তাকে দুষ্পরিবর্তনীয় (Regid) সংবিধান বলা হয়। সুইজারল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান দেখা যায়। কেশবানন্দ ভারতীয় মামলায় রায়দান কালে বিচারপতি খান্না বলেন, “সংবিধান সংশোধন করার সহজ ব্যবস্থা না থাকলে জনগন সংবিধান পরিবর্তনের জন্য বিপ্লবের মতো সংবিধান বহির্ভূত ব্যবস্থা গ্রহন করবে। এছাড়া রাষ্ট্রের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিকাশে দ্রুত সিদ্ধান্তদ গ্রহনের জন্যও সংবিধানের পরিবর্তন জরুরী হয়ে পড়ে। যথা ১৯৭১ সালে ব্যাংক জাতীয়করণের জন্য ভারতে সংবিধান পরিবর্তন জরুরী ছিল।

 

ভারতীয় সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি মূলত ৩৬৮ নম্বর ধারায় ব্যক্ত হয়েছে। ৩৬৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী –

১) পার্লামেন্ট তার সংবিধানী ক্ষমতাবলে এই সংবিধানে যা কিছু আছে তার সংযোজন, পরিবর্তন বা নিরসনের আকারে এই সংবিধানের যেকোনো বিদান এই অনুচ্ছেদে বর্ণিত প্রক্রিয়া অনুসারে সংশোধন করতে পারে।

২) সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত বিল কেবলমাত্র সংসদের যে কোনো কক্ষে উত্থাপিত হতে পারে।

৩) সংবিধানের তৃতীয় অংশ সহ সংবিধানের যেকোনো অংশের সংশোধন করা হলে সে সম্পর্কে আদালতে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না।

ভারতীয় সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি বিচার করলে দেখা যায় যে, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে তিনটি পদ্ধতি রয়েছে।

 

প্রথমত: সংবিধান সংশোধনের প্রথম পদ্ধতি অনুসারে ভারতীয় সংবিধানের এমন কতগুলি ধারা আছে যেগুলি সংশোধন বা পরিবর্তন করার জন্য পার্লামেন্টের শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন লাগে অর্থাৎ সাধারন বিল পাশের পদ্ধতি ন্যায় সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত বিলটিকে পাশ করা যায়। এরজন্য কোনো বিশেষ পদ্ধতি তথা ২/৩ সংখ্যাগরিষ্ঠতা বা রাজ্য আইন সভার অনুমোদন লাগে না। পার্লামেন্টে বিলটি পাস হবার পর রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য প্রেরিত হয়। এবং রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভের পর সংশ্লিষ্ট ধারার পরিবর্তন ঘটে। এরূপ কয়েকটি বিষয় রয়েছে যেগুলি সাধারন আইন পাসের পদ্ধতিতে পরিবর্তন করা যায় – নতুন রাজ্যের সৃষ্টি, রাজ্যগুলির পুনর্গঠন, রাজ্য আইন সভার দ্বিতীয় কক্ষের প্রবর্তন বা বিলোপ, নাগরিকত্ব বর্জন অথবা বিলুপ্তি ইত্যাদি।

 

দ্বিতীয়ত: সংবিধান সংশোধনের দ্বিতীয় পদ্ধতি অনুসারে সংবিধানের কোনো কোনো অংশ পরিবর্তন করতে হলে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের মোট সদস্যের অধিকাংশ এবং উপস্থিত ভোটদান কারী সদস্যের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন আবশ্যক হয়। এই ভাবে কোনো বিল পাস করলে রাষ্ট্রপতির কাছে সম্মতির জন্য প্রেরিত হয় এবং রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভ করলে সংবিধান সংশোধন চূড়ান্ত হয়। কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে আইন-সংক্রান্ত ক্ষমতা বণ্টন, সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্টের ক্ষমতা সংক্রান্ত বিষয়, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ইত্যাদি বিষয়গুনি বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে সংশোধিত হয়।

 

তৃতীয়ত: সংবিধানে এরূপ কয়েকটি বিষয় রয়েছে যেগুলিকে পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয় পদ্ধতির সমন্বয় লক্ষ করাযায়। এই বিষয়গুলি পরিবর্তনের জন্য শুধুমাত্র পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে ভোটদনাকারী সদস্য থেকে দুই তৃতীয়াংশ এবং মোট সদস্যের অধিকাংশ কর্তৃক সমর্থিত হওয়া প্রয়োজন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও তাঁর কার্যকালের মেয়াদ, সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্টের এক্তিয়ার, সংসদে প্রতিনিধিত্ব, সপ্তম তালিকার পরিবর্তন ইত্যাদি

 

মূল্যায়ণ : ভারতীয় সংবিধান সংশোধনের প্রকৃতি বিচার করলে যে বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হয় তা হল সুপরিবর্তনীয় এবং দুষ্পরিবর্তনীয় নীতির মধ্যে ভারসাম্যবিধান। ভারতীয় সংবিধান একদিকে মার্কিন সংবিধানের মতো দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান নয়, অন্যদিকে ব্রিটেনের সংবিধানের মতো সুপরিবর্তনীয় নয় The Constitutionof India has – brought about a balance between the constitution of U.S.A. and U.K.

ভারতীয় সংবিধান সংশোধন পদ্ধতির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আলোচনার ইতি টানতে হলে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো সম্পর্কে আলোকপাত করতে হয়। কারন এ প্রত্যয়ের মধ্যদিয়ে সংসদের সংবিধান সংশোধন ক্ষমতা সীমিত হয়েছে। বস্তুত ১৯৭৩ সালে কেশবানন্দ ভারতী মামলায় সুপ্রিমকোর্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে রায় দিয়ে বলে যে সংসদ সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সংবিধানের মৌল কাঠামোর পরিবর্তন করতে পারবে না। প্রকৃত পক্ষে সংবিধান সংশোধনের প্রশ্নে বিচারবিভাগের রায় সুস্পষ্ট নয়। এক্ষেত্রে রাজনীতি বিষয়টি বিশেষ প্রাধান্য পেয়েছে।

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Why national building regulations. Burhani traders pen raigad. Bespoke kitchens dm developments north west.