1869 খ্রিস্টাব্দে 2 অক্টোবর গান্ধীজীর জন্ম গুজরাটের পোর বন্দরে । 1888 খ্রিস্টাব্দে তিনি ইংল্যান্ডে যান এবং 1891 খ্রিস্টাব্দে ব্যারিস্টারি পাস করেন । তিনি রাজকোট ও বোম্বাইয়ে আইন ব্যবসায়ে ব্যর্থ হন । 1893 খ্রিস্টাব্দে দাদা আব্দুল্লাহ এন্ড – কোং এর মামলা লড়তে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় যান । দক্ষিণ আফ্রিকায় পিটার মারিটসবার্গ স্টেশনে ট্রেন থেকে গান্ধীকে জোর করে নামিয়ে দেয়া হয় । ডেবিট থোরোর ” সিভিল ডিসওবিডিয়েন্স ” লিও টলস্টয় এর ” কিংডম অফ গড ” এবং জন রাসকিন এর ” আন টু দিস লাস্ট ” বইগুলি তার মনে গভীরভাবে প্রভাব ফেলে । ডারবানে তিনি ফোনেক্স ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন এবং 1910 খ্রিস্টাব্দে তিনি নাটালে টলস্টয় ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন । 1930 খ্রিস্টাব্দে তিনি ” ইন্ডিয়ান ওপিনিয়ন ” নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন । 1924 খ্রিস্টাব্দে গান্ধী স্মুট চুক্তি হয় । তুমি নাটালে ” নাটাল ইন্ডিয়ান কংগ্রেস ” স্থাপন করেন । লর্ড হার্ডিঞ্জ গান্ধীজীর কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য গোখলেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠান । গোপালের অনুরোধে গান্ধী লন্ডন হয়ে ভারতে ফিরে আসেন 1915 খ্রিস্টাব্দে । গোখলেকে তিনি রাজনৈতিক গুরু এবং টলস্টয়কে তিনি আধ্যাত্মিক গুরু মানতেন । গান্ধীর পিতা ছিলেন কাবা গান্ধী ও মা ছিলেন পুতলিবাঈ ।
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও মহাত্মা গান্ধী :-
1915 খ্রিস্টাব্দে 46 বছর বয়স্ক গান্ধীজী গুরু গোপালকৃষ্ণ গোখলের পরামর্শে ভারতের বিভিন্ন স্থানে পরিভ্রমণ করেন । 1916 খ্রিস্টাব্দে তিনি সবরমতী আশ্রম স্থাপন করেন । প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশকে সাহায্যর জন্য কাইজার-ই-হিন্দ স্বর্ণপদক পান । 1917 খ্রিস্টাব্দে তিনি চম্পারণে ভারতের প্রথম সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন । নীলকরেরা, স্থানীয় কৃষকদের 3/20 অংশ জমিতে নীল চাষে বাধ্য করতো । একে বলা হতো ” তিন কাঠিয়া ” ব্যবস্থা । রাজ কুমার শুক্লা গান্ধীজিকে চম্পারণে যেতে আহ্বান করেন । গান্ধীজীর সঙ্গে এই আন্দোলনে ছিলেন ব্রজকিশোর, রাজেন্দ্র প্রসাদ, গান্ধীজীর ব্যক্তিগত সচিব মহাদেব দেশাই, নরহরি পারেখ, জে . বি কৃপালিনী, এ .এন সিনহা এবং গোরক্ষ প্রসাদ । 1917 খ্রিস্টাব্দে চম্পারন কৃষি বিল পাস হয় । এতে তিন কাঠিয়া ব্যবস্থা বিলোপ করা হয় । 1918 খ্রিস্টাব্দে গান্ধীজী গুজরাটের খেড়াই আন্দোলন করেন । এই আন্দোলনে গান্ধীজির সঙ্গে ছিলেন বল্লভ ভাই প্যাটেল, ইন্দুলাল যাজ্ঞিক, বি . বি প্যাটেল, এ. সারাভাই সরকার যে তদন্ত কমিশন বসান তাতে ছিলেন বিঠল ভাই প্যাটেল ও জি . কে. পারেখ । 1918 খ্রিস্টাব্দে গান্ধীজী আমেদাবাদে মিল শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির জন্য সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন । গান্ধীজীর সঙ্গে ছিলেন অনসূয়া বেন। আন্দোলনের চতুর্থ দিন মিল কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বেতন 35% বাড়িয়ে দেন ।
রাওলাট আইন :-
1917 খ্রিষ্টাব্দে বিচারপতি রাওলাট এর নেতৃত্বে রাওলাট কমিটি গঠিত হয় । এই কমিটির সদস্যরা ছিলেন স্যার বাশিল স্কট, স্যার ভার্নি লোভেট, সি . ভি . কুমারস্বামী শাস্ত্রী এবং প্রভাস চন্দ্র মিত্র । রাওলাট কমিটি সিডিশন কমিটি নামেও পরিচিত ছিল । 1918 খ্রিস্টাব্দে এই কমিটি রিপোর্ট পেশ করে । 1919 খ্রিস্টাব্দে 6 ফেব্রুয়ারি বিলটি কেন্দ্রীয় আইন সভায় তোলা হয় । 1919 খ্রিস্টাব্দের 18 মার্চ বিলটি আইনে পরিণত হয় । রাওলাট আইন কে কালা আইন আখ্যা দিয়ে গান্ধীজী 1919 খ্রিস্টাব্দে 6 এপ্রিল সারা ভারতে হরতালের ডাক দেন । এটি ভারতবর্ষের প্রথম সর্বভারতীয় ধর্মঘট । 1919 খ্রিস্টাব্দের 4 এপ্রিল গান্ধীজিকে দিল্লি পালওয়াল স্টেশনের কাছে গ্রেপ্তার করা হয়
জালিয়ান ওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড :-
10 এপ্রিল 1919 খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাবের দুই নেতা ডঃ সত্যপাল ও সাইফুদ্দিন ইসলামকে গ্রেফতার ও বিনাবিচারে অজ্ঞাত স্থানে রাখা হয় এবং গান্ধীজিকে গ্রেফতার করা হলে জনগণ উন্মত্ত হয়ে ওঠে । 1919 খ্রিস্টাব্দের 13 এপ্রিল অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগ উদ্যানে জনগণ বৈশাখী মেলা উপলক্ষে সমবেত হয় । অমৃতসরের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আর. ডায়ার সভাস্থলে উপস্থিত হয়ে 10 মিনিট ধরে 1600 রাউন্ড গুলি চালান প্রায় 10 হাজার মানুষের ওপর । সরকারি মতে 379 জন মারা যান এবং 1200 জন আহত হন । সামরিক শাসন কর্তা ও ডায়ার অমৃতসরের সান্ধ্য আইন জারি করেন । 1940 খ্রিস্টাব্দে উদম সিং জেনারেল ও ডায়ার কে হত্যা করেন ।জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘটনার প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ইংরেজদের দেওয়া নাইট উপাধি ত্যাগ করেন । জালিয়ানওয়ালাবাগে হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য সরকার হান্টার কমিশন বসান । কংগ্রেসের তরফ থেকে অনুসন্ধানের জন্য চিত্তরঞ্জন দাসের নেতৃত্বে একটি কমিটি নিয়োগ করা হয় । এই কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন গান্ধী, মতিলাল নেহেরু, জয়াকার ও আব্বাস তায়েবজি ।
গান্ধীজীর খিলাফত আন্দোলন :
তুরস্কের সুলতান খলিফা ছিলেন মুসলিম জগতের ধর্মগুরু । প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্ক জার্মানির পক্ষে যোগ দেয় । যুদ্ধের শেষে তুরস্কের সঙ্গে সেভর এর সন্ধি হয় । তুরস্ক সাম্রাজ্যের কিছু অংশ ইংরেজ ও ফরাসিদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়া হয় এবং খলিফার মর্যাদা খর্ব করা হয় । খলিফার সম্মান পুনরুদ্ধারের জন্য ভারতীয় মুসলমানরা খেলাফত আন্দোলন শুরু করেন । মোহাম্মদ আলী , সওকত আলী, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, হাকিম আজমল খাঁ , হজরত মোহানি প্রভৃতি মুসলমান নেতৃবৃন্দ এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন । 1919 খ্রিস্টাব্দে অল ইন্ডিয়া খিলাফত কনফারেন্স প্রতিষ্ঠিত হয় এপ্রিল-মে মাসে । 1919 খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে লখনোয় অল ইন্ডিয়া খিলাফত কমিটি প্রতিষ্ঠিত হয় । সেট চট্টানি ছিলেন সভাপতি ও শওকত আলী ছিলেন সেক্রেটারি । 1920 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা অধিবেশনে খিলাফত কনফারেন্স এর সভাপতি হন মৌলানা আবুল কালাম আজাদ । গান্ধীজী খেলাফত আন্দোলন কে সমর্থন করেন এবং কাইজার-ই-হিন্দ স্বর্ণপদক ফেরত দিয়ে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন । 1921 খ্রিস্টাব্দের 4 জুলাই অল ইন্ডিয়া খিলাফত কনফারেন্স করাচি অধিবেশনে ভারতীয় সেনাবাহিনী থেকে মুসলমানদের পদত্যাগ করার দাবি করা হয় । 1924 খ্রিস্টাব্দে মোস্তফা কামাল পাশার নেতৃত্বে তুরস্কের খলিফা পদের অবসান ঘটলে ভারতে খিলাফত আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয় ।
অসহযোগ আন্দোলন (1920 – 1922) :
1920 খ্রিস্টাব্দে লালা লাজপত রায়ের সভাপতিত্বে কলকাতায় কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশন বসে । গান্ধীজী অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে স্বরাজ অর্জনের জন্য একটি পরিকল্পনা পেশ করেন । চিত্তরঞ্জন দাশ , মদনমোহন মালব্য , বিপিনচন্দ্র পাল , অ্যানি বেসান্ত , জিন্না গান্ধীজীর এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন , কিন্তু মতিলাল নেহেরুর সহযোগিতায় গান্ধীজীর প্রস্তাব পাস হয় । 1920 খ্রিস্টাব্দে নাগপুর অধিবেশন অহিংস অসহযোগে এর প্রস্তাব পুনরায় গৃহীত হয় । কংগ্রেসের লক্ষ্য হিসাবে কিস্তির হয় “স্বরাজ পন্থা” হিসেবে স্থির হয় “অহিংস অসহযোগ” ও নেতা অন গান্ধীজি । অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে সরকারি চাকরি , অনুষ্ঠান , খেতাব , আইনসভা ইত্যাদি বর্জন , অন্যদিকে গঠনমূলক কর্মসূচির মধ্যে ছিল দেশীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন , সালিশ বোর্ড গঠন , মাদক বর্জন , চরকা ও খদ্দরের প্রচলন ইত্যাদি ।
জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া , কাশি বিদ্যাপীঠ, বিহার বিদ্যাপীঠ , গুজরাট বিদ্যাপীঠ , বেঙ্গল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠিত হয় । দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন , মতিলাল নেহেরু , বিঠলভাই প্যাটেল, বল্লভ ভাই প্যাটেল , চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারী প্রমুখ আইন ছেড়ে এই আন্দোলনে যোগ দেন । সুভাষচন্দ্র বসু আই .সি . এস এর চাকরি ছেড়ে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন । ” তিলক স্বরাজ তহবিল “ গঠিত হয়, এই তহবিলে এক কোটি টাকা জমা পড়ে । 1921 খ্রিস্টাব্দে প্রিন্স অব ওয়েল ভারতে এলে বোম্বাই ও কলকাতায় ধর্মঘট হয় ।
বাসন্তী দেবী , সরোজিনী নাইডু , জ্যোতির্ময় গঙ্গোপাধ্যায় , উর্মিলা দেবী , হেমাপ্রভা মজুমদার প্রমুখ নারী এই আন্দোলনে যোগ দেন । 1922 খ্রিস্টাব্দে 5 ফেব্রুয়ারি উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলার চৌরিচৌরা নামে দুটি গ্রামের উত্তেজিত জনতা 22 জন পুলিশ কে পুড়িয়ে মারে । অহিংস আন্দোলন সহিংস পথে গেলে 1922 খ্রিস্টাব্দে এর 11 ই ফেব্রুয়ারি আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয় । 10 শে মার্চ গান্ধীজিকে গ্রেফতার করে ছয় বছর কারাদণ্ড ও জহরলাল নেহেরু কে 18 মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয় ।
স্বরাজ্য দল :
1922 খ্রিস্টাব্দে গয়া কংগ্রেস অধিবেশনে চিত্তরঞ্জন দাশ , মতিলাল নেহেরু , হাকিম আজমল খাঁ ,বিঠলভাই প্যাটেল , মালব্য , শ্রীনিবাস আয়েঙ্গার, কেলকার , জয়াকার , সত্যমূর্তি প্রমুখ পরিবর্তনের সমর্থক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ও আইন সভায় প্রবেশ এর পক্ষে মত দেন । অন্যদিকে বল ভাই প্যাটেল , রাজেন্দ্রপ্রসাদ , ডাক্তার আনসারী , চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী প্রমুখ ছিলেন পরিবর্তনের বিরোধী । তারা সভাপতি চিত্তরঞ্জন দাশের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন । পরিবর্তনের সমর্থকরা ভোট পায় 890 টি ও বিরোধীরা পায় 1740 টি । মতিলাল নেহেরু ও চিত্তরঞ্জন দাস 1923 খ্রিস্টাব্দের 1 জানুয়ারি ” স্বরাজ ” দল গঠন করেন । চিত্তরঞ্জন দাশ ছিলেন সভাপতি ও মতিলাল নেহেরু ছিলেন সাধারণ সম্পাদক ।
1923 খ্রিস্টাব্দে নির্বাচনে 62 লক্ষ লোক অংশ নেয় । কেন্দ্রীয় আইন সভায় 101 টি আসনের মধ্যে স্বরাজ দল প্রায় 42 টি আসন । বোম্বাই যুক্তপ্রদেশ ও আসামে এই দল সাফল্য পায় । বাংলা এবং মধ্যপ্রদেশে এই দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় । 1925 খ্রিস্টাব্দে বিঠলভাই প্যাটেল কেন্দ্রীয় আইন সভায় সভাপতিত্ব বা স্পিকার নির্বাচিত হন । স্বরাজ দল মুসলমান সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হয়ে জাতীয়তাবাদী দল বা ন্যাশনালিস্ট পার্টি গঠন করেন ।
1923 খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে বাংলার সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি , মাদ্রাজে শেষাগ্রী আইয়ার , বোম্বের পরাঙ্জপে , উত্তরপ্রদেশের চিন্তামণি , এইচ. কুঞ্জরু , প্রমুখ নেতা পরাস্ত হন । চিত্তরঞ্জন দাশ কলকাতার মেয়র নির্বাচিত হন ও সুভাষচন্দ্র বসু মুখ্য কার্যনির্বাহী অফিসার নির্বাচিত হন । বল্লভ ভাই প্যাটেল আমেদাবাদ কর্পোরেশনের , জহরলাল নেহেরু এলাবাদ কর্পোরেশনের , রাজেন্দ্র প্রসাদ পাটনা কর্পোরেশনের , মেয়র নির্বাচিত হন । স্বরাজ্য দল 1924 খ্রিস্টাব্দে আলেকজান্ডার মুদিম্যান কমিটি ও লি কমিশনের রিপোর্টের প্রতিবাদ করে। 1925 খ্রিস্টাব্দের চিত্তরঞ্জন এর মৃত্যু হয় । 1926 খ্রিস্টাব্দে স্বরাজ্য দল তিনভাগে ভাগ হয় যথা , স্বরাজ্য দল , রেসপনসিভিস্টরা ইন্ডিপেন্ডেন্ট কংগ্রেস পার্টি । 1926 খ্রিস্টাব্দে নির্বাচনে 104 আসনের মধ্যে স্বরাজ দল প্রায় 40 টি আসন । বাংলায় তারা অধিকাংশ আসন পায় । বিহার ও উড়িষ্যাতে রেসপনসিভিস্টরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল । মধ্য প্রদেশ ,পাঞ্জাব , উত্তর প্রদেশে স্বরাজ্য দল হেরে যায়
সাইমন কমিশন :
1919 খ্রিস্টাব্দে শাসন ব্যবস্থা পর্যালোচনা করতে সাইমন কমিশন নিযুক্ত হয় 1927 খ্রিস্টাব্দে । স্যার জন সাইমনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিশনে কোন ভারতীয় সদস্য ছিল না । এজন্য একে অল হোয়াইট কমিশন বলা হয় । 1928 খ্রিস্টাব্দের 3 ফেব্রুয়ারি সাইমন কমিশন বোম্বাইতে আসে । মুসলিম লীগের সভাপতি মোঃ ইয়াকুব সাইমন কমিশন বয়কট করেন । মুসলিম লীগ , হিন্দু মহাসভা এবং লিবারেল ফেডারেশন সাইমন কমিশন বয়কটের এর সিদ্ধান্ত নেয় । 1928 খ্রিস্টাব্দে বোম্বাইয়ের “সাইমন ফিরে যাও” ধ্বনি ওঠে । লালা লাজপত রায় কমিশন বিরোধী মিছিল পরিচালনা করতে গিয়ে পুলিশের হাতে প্রহুত হন । 1930 খ্রিস্টাব্দের 13 ই জানুয়ারি কমিশন তাজা রিপোর্ট পেশ করে । এই রিপোর্টের ভিত্তিতে 1935 খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইন রচিত হয় ।
কংগ্রেসের পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি :
1927 খ্রিস্টাব্দে ভারত সচিব বার্কেনহেড সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে ভারতীয়দের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন । এর জবাবে 1927 খ্রিস্টাব্দে এর 27 শে ডিসেম্বর জাতীয় কংগ্রেসের মাদ্রাজ অধিবেশনে সুভাষচন্দ্র বসু ও জহরলাল নেহেরু পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি উত্থাপন করে । 1928 খ্রিস্টাব্দের 12 ই ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে এম.এ. আনসারীর নেতৃত্বে একটি সর্বদলীয় সভা অনুষ্ঠিত হয় । এই সভায় সাইমন কমিশনের বিরোধিতা করা হয় । 1928 খ্রিস্টাব্দে 19 মে বোম্বাই মিটিংয়ে মতিলাল নেহেরুকে চেয়ারম্যান নিযুক্ত করে একটি কমিটি গঠিত হয় ভারতের ভবিষ্যৎ সংবিধান রচনা করতে । 1928 খ্রিস্টাব্দে আগস্ট মাসে সর্বদলীয় লখনও সম্মেলনের অধিবেশনে মতিলাল নেহেরু সংবিধানের খসড়া টি পেশ করেন । এটি নেহেরু রিপোর্ট নামে পরিচিত । মুসলিম লীগের নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং হিন্দু মহাসভার নেতা এম. আর জয়াকার এই রিপোর্টের বিরোধিতা করেন । 1929 খ্রিস্টাব্দে 28 মার্চ মুসলিম লীগের দিল্লি অধিবেশনে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ নেহেরু রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে 14 দফা দাবি পেশ করেন । নেহেরু রিপোর্টের ভারতের জন্য ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস দাবি করা হয় ।
আইন অমান্য আন্দোলন (1930 – 1934) :
আন্দোলন শুরুর পূর্বে 1930 খ্রিস্টাব্দে 30 শে জানুয়ারি গান্ধীজী সরকারের কাছে 30 দফা দাবি পেশ করেন তার ” ইয়ং ইন্ডিয়া ” পত্রিকার মাধ্যমে গান্ধীজী লবন আইন ভঙ্গের জন্য 1930 খ্রিস্টাব্দে 12 ই মার্চ ডান্ডি অভিযান করেন । গান্ধীজির সঙ্গে 78 জন ( মতান্তরে 79 জন ) স্বেচ্ছাসেবী 24 দিনে 241 মাইল পথ অতিক্রম করে ডান্ডি পৌঁছান । 6 গান্ধীজী স্বহস্তে লবণ তৈরি করে লবণ আইন ভঙ্গ করে আইন অমান্য আন্দোলন সূচনা করেন ।
গান্ধী আরউইন চুক্তি (1931) :
তেজ বাহাদুর সপ্রু , ডক্টর জয়াকার এবং অন্যান্যদের প্রচেষ্টায় 1931 খ্রিস্টাব্দের 5 মার্চ gandhi-irwin চুক্তি বা দিল্লি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় । কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসাবে গান্ধীজী ইংল্যান্ডে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে যেতে রাজি হন ।
আইন অমান্য আন্দোলন দ্বিতীয় পর্যায় :
দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে gandhi-irwin চুক্তির শর্তাদি কার্যকরী না হওয়ায়, উত্তরপ্রদেশে খাজনা বন্ধ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য জহরলাল নেহেরু ও পুরুষোত্তমদাস ট্যান্ডনকে কারারুদ্ধ করা হয় । উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ আবদুল গফফর খান এর লাল কুর্তা বাহিনী কে বেআইনি ঘোষণা করা হয় । 1932 খ্রিস্টাব্দের 4 জানুয়ারি মাসে সরকার চারটি নতুন দমনমূলক অর্ডিন্যান্স জারি করেন । 1932 খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে গান্ধীজিকে বন্দি করা হয় । সরকারের দমননীতি বৃদ্ধি পায় । বিলেতের ইন্ডিয়া লীগ পরিচালিত ডেলিগেশন রিপোর্টে দমন নীতির একটি প্রকট হয়ে ওঠে । 1933 খ্রিস্টাব্দে গান্ধীজীর কারামুক্তির পর তিনি হরিজন আন্দোলনে মনোনিবেশ করেন । 1934 খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে বিহারে ভূমিকম্পের পর এই আন্দোলন চাপা পড়ে যায় । 4 মে পাটনায় অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির অধিবেশনে অনুষ্ঠানিকভাবে আইন অমান্য আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয় ।
মহাত্মা গান্ধীর ভারতছাড়ো আন্দোলন বা আগস্ট আন্দোলন :
1939 খ্রিস্টাব্দে 3 সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ আরম্ভ হলে ভারত সরকার ভারতকে যুদ্ধরত দেশ ঘোষণা করে । 1940 খ্রিস্টাব্দে রামগড় অধিবেশনে কংগ্রেস পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি করে । 1940 খ্রিস্টাব্দের 8 আগস্ট বড়লাট লিনলিথগো ঘোষণা করেন যে —
1) যুদ্ধান্তে ভারতকে ডোমিনিয়ন এর মর্যাদা দেয়া হবে ।
2) বড়লাটের কার্যনির্বাহী সমিতিতে ভারতীয় সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে ।
3) ভারতীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি যুদ্ধ উপদেষ্টা পর্ষদ গঠন করা হবে ।
4) যুদ্ধান্তে ভারতের সংবিধান রচনার জন্য একটি গণপরিষদ গঠন করা হবে । এটি আগস্ট ঘোষণা নামে পরিচিত 1941 খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে বড়লাটের কার্যনির্বাহী কমিটিতে সদস্য সংখ্যা 7 থেকে হারিয়ে 12 করা হয় । কিন্তু কংগ্রেস ও মুসলিম লীগে যোগ দেয়নি