ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে গান্ধীযুগের তাৎপর্য আলোচনা কর | Discuss the significance of Gandhian Era in the Indian Freedom Struggle

1869 খ্রিস্টাব্দে 2 অক্টোবর গান্ধীজীর জন্ম গুজরাটের পোর বন্দরে । 1888 খ্রিস্টাব্দে তিনি ইংল্যান্ডে যান এবং 1891 খ্রিস্টাব্দে ব্যারিস্টারি পাস করেন । তিনি রাজকোট ও বোম্বাইয়ে আইন ব্যবসায়ে ব্যর্থ হন । 1893 খ্রিস্টাব্দে দাদা আব্দুল্লাহ এন্ড – কোং এর মামলা লড়তে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় যান । দক্ষিণ আফ্রিকায় পিটার মারিটসবার্গ  স্টেশনে ট্রেন থেকে গান্ধীকে জোর করে নামিয়ে দেয়া হয় । ডেবিট থোরোর ” সিভিল ডিসওবিডিয়েন্স ” লিও টলস্টয় এর ” কিংডম অফ গড ” এবং জন রাসকিন এর ” আন টু দিস লাস্ট ”  বইগুলি তার মনে গভীরভাবে প্রভাব ফেলে । ডারবানে তিনি ফোনেক্স ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন এবং 1910 খ্রিস্টাব্দে তিনি নাটালে টলস্টয় ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন । 1930 খ্রিস্টাব্দে তিনি  ” ইন্ডিয়ান ওপিনিয়ন ” নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন । 1924 খ্রিস্টাব্দে গান্ধী স্মুট চুক্তি হয় । তুমি নাটালে  ” নাটাল ইন্ডিয়ান কংগ্রেস ” স্থাপন করেন । লর্ড হার্ডিঞ্জ গান্ধীজীর কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য গোখলেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠান । গোপালের অনুরোধে গান্ধী লন্ডন হয়ে ভারতে ফিরে আসেন 1915 খ্রিস্টাব্দে । গোখলেকে তিনি রাজনৈতিক গুরু এবং টলস্টয়কে তিনি আধ্যাত্মিক গুরু মানতেন । গান্ধীর পিতা ছিলেন কাবা গান্ধী ও মা ছিলেন পুতলিবাঈ । 

ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও মহাত্মা গান্ধী :-

1915 খ্রিস্টাব্দে 46 বছর বয়স্ক গান্ধীজী গুরু গোপালকৃষ্ণ গোখলের পরামর্শে ভারতের বিভিন্ন স্থানে পরিভ্রমণ করেন । 1916 খ্রিস্টাব্দে তিনি সবরমতী আশ্রম স্থাপন করেন । প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশকে সাহায্যর জন্য কাইজার-ই-হিন্দ স্বর্ণপদক পান । 1917 খ্রিস্টাব্দে তিনি  চম্পারণে ভারতের প্রথম সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন । নীলকরেরা, স্থানীয় কৃষকদের 3/20 অংশ জমিতে নীল চাষে বাধ্য করতো । একে বলা হতো  ” তিন কাঠিয়া ” ব্যবস্থা । রাজ কুমার শুক্লা গান্ধীজিকে চম্পারণে যেতে আহ্বান করেন । গান্ধীজীর সঙ্গে এই আন্দোলনে ছিলেন ব্রজকিশোর, রাজেন্দ্র প্রসাদ, গান্ধীজীর ব্যক্তিগত সচিব মহাদেব দেশাই, নরহরি পারেখ, জে . বি কৃপালিনী, এ .এন সিনহা এবং গোরক্ষ প্রসাদ । 1917 খ্রিস্টাব্দে চম্পারন কৃষি বিল পাস হয় । এতে তিন কাঠিয়া ব্যবস্থা বিলোপ করা হয় । 1918 খ্রিস্টাব্দে  গান্ধীজী গুজরাটের খেড়াই আন্দোলন করেন । এই আন্দোলনে গান্ধীজির সঙ্গে ছিলেন বল্লভ ভাই প্যাটেল, ইন্দুলাল যাজ্ঞিক, বি . বি প্যাটেল, এ. সারাভাই সরকার যে তদন্ত কমিশন বসান তাতে ছিলেন বিঠল ভাই প্যাটেল ও জি . কে. পারেখ । 1918 খ্রিস্টাব্দে গান্ধীজী আমেদাবাদে মিল শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির জন্য সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন । গান্ধীজীর সঙ্গে ছিলেন অনসূয়া বেন। আন্দোলনের চতুর্থ দিন মিল কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বেতন 35% বাড়িয়ে দেন ।

রাওলাট আইন :-

1917 খ্রিষ্টাব্দে বিচারপতি রাওলাট এর নেতৃত্বে রাওলাট কমিটি গঠিত হয় । এই কমিটির সদস্যরা ছিলেন স্যার বাশিল স্কট, স্যার ভার্নি লোভেট, সি . ভি . কুমারস্বামী শাস্ত্রী এবং প্রভাস চন্দ্র মিত্র । রাওলাট কমিটি সিডিশন কমিটি নামেও পরিচিত ছিল । 1918 খ্রিস্টাব্দে এই কমিটি রিপোর্ট পেশ করে । 1919 খ্রিস্টাব্দে 6 ফেব্রুয়ারি বিলটি কেন্দ্রীয় আইন সভায় তোলা হয় । 1919 খ্রিস্টাব্দের 18 মার্চ বিলটি  আইনে পরিণত হয় । রাওলাট আইন কে কালা আইন আখ্যা দিয়ে গান্ধীজী 1919 খ্রিস্টাব্দে 6 এপ্রিল সারা ভারতে হরতালের ডাক দেন । এটি ভারতবর্ষের প্রথম সর্বভারতীয় ধর্মঘট ।  1919 খ্রিস্টাব্দের 4 এপ্রিল গান্ধীজিকে দিল্লি  পালওয়াল স্টেশনের কাছে গ্রেপ্তার করা হয় 

জালিয়ান ওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড :- 

10 এপ্রিল 1919 খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাবের দুই নেতা ডঃ সত্যপাল ও সাইফুদ্দিন ইসলামকে গ্রেফতার ও বিনাবিচারে অজ্ঞাত স্থানে রাখা হয় এবং গান্ধীজিকে গ্রেফতার করা হলে জনগণ উন্মত্ত হয়ে ওঠে । 1919 খ্রিস্টাব্দের 13 এপ্রিল অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগ উদ্যানে জনগণ বৈশাখী মেলা উপলক্ষে সমবেত হয় । অমৃতসরের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আর. ডায়ার সভাস্থলে উপস্থিত হয়ে 10 মিনিট ধরে 1600 রাউন্ড গুলি চালান প্রায় 10 হাজার মানুষের ওপর । সরকারি মতে 379 জন মারা যান এবং 1200 জন আহত হন । সামরিক শাসন কর্তা ও ডায়ার অমৃতসরের সান্ধ্য আইন জারি করেন । 1940 খ্রিস্টাব্দে উদম সিং জেনারেল ও ডায়ার কে হত্যা করেন ।জালিয়ানওয়ালাবাগের  ঘটনার প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ইংরেজদের দেওয়া নাইট উপাধি ত্যাগ করেন । জালিয়ানওয়ালাবাগে হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য সরকার হান্টার কমিশন বসান । কংগ্রেসের তরফ থেকে অনুসন্ধানের জন্য চিত্তরঞ্জন দাসের নেতৃত্বে একটি কমিটি নিয়োগ করা হয় । এই কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন গান্ধী, মতিলাল নেহেরু, জয়াকার ও আব্বাস তায়েবজি । 

গান্ধীজীর খিলাফত আন্দোলন : 

তুরস্কের সুলতান খলিফা ছিলেন মুসলিম জগতের ধর্মগুরু । প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্ক জার্মানির পক্ষে যোগ দেয় । যুদ্ধের শেষে তুরস্কের সঙ্গে সেভর এর সন্ধি হয় । তুরস্ক সাম্রাজ্যের কিছু অংশ ইংরেজ ও ফরাসিদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়া হয় এবং খলিফার মর্যাদা খর্ব করা হয় । খলিফার সম্মান পুনরুদ্ধারের জন্য ভারতীয় মুসলমানরা খেলাফত আন্দোলন শুরু করেন । মোহাম্মদ আলী , সওকত আলী, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, হাকিম আজমল খাঁ , হজরত মোহানি প্রভৃতি মুসলমান নেতৃবৃন্দ এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন । 1919 খ্রিস্টাব্দে অল ইন্ডিয়া খিলাফত কনফারেন্স প্রতিষ্ঠিত হয় এপ্রিল-মে মাসে । 1919 খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে লখনোয় অল ইন্ডিয়া খিলাফত কমিটি প্রতিষ্ঠিত হয় । সেট চট্টানি ছিলেন সভাপতি ও শওকত আলী ছিলেন সেক্রেটারি । 1920 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা অধিবেশনে খিলাফত কনফারেন্স এর সভাপতি হন মৌলানা আবুল কালাম আজাদ । গান্ধীজী খেলাফত আন্দোলন কে সমর্থন করেন এবং কাইজার-ই-হিন্দ স্বর্ণপদক ফেরত দিয়ে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন । 1921 খ্রিস্টাব্দের 4 জুলাই অল ইন্ডিয়া খিলাফত কনফারেন্স করাচি অধিবেশনে ভারতীয় সেনাবাহিনী থেকে মুসলমানদের পদত্যাগ করার দাবি করা হয় । 1924 খ্রিস্টাব্দে মোস্তফা কামাল পাশার নেতৃত্বে তুরস্কের খলিফা পদের অবসান ঘটলে ভারতে খিলাফত আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয় । 

অসহযোগ আন্দোলন (1920 – 1922) : 

1920 খ্রিস্টাব্দে  লালা লাজপত রায়ের সভাপতিত্বে কলকাতায় কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশন বসে । গান্ধীজী অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে স্বরাজ অর্জনের জন্য একটি পরিকল্পনা পেশ করেন । চিত্তরঞ্জন দাশ ,  মদনমোহন মালব্য , বিপিনচন্দ্র পাল ,  অ্যানি বেসান্ত , জিন্না গান্ধীজীর এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন , কিন্তু মতিলাল নেহেরুর সহযোগিতায় গান্ধীজীর প্রস্তাব পাস হয় । 1920 খ্রিস্টাব্দে নাগপুর অধিবেশন অহিংস অসহযোগে এর প্রস্তাব পুনরায় গৃহীত হয় । কংগ্রেসের লক্ষ্য হিসাবে কিস্তির হয়  “স্বরাজ পন্থা” হিসেবে স্থির হয় “অহিংস অসহযোগ”  ও নেতা অন গান্ধীজি । অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে সরকারি চাকরি , অনুষ্ঠান , খেতাব , আইনসভা ইত্যাদি বর্জন ,  অন্যদিকে গঠনমূলক কর্মসূচির মধ্যে ছিল দেশীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন , সালিশ বোর্ড গঠন , মাদক বর্জন , চরকা ও খদ্দরের প্রচলন ইত্যাদি । 

জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া , কাশি বিদ্যাপীঠ, বিহার বিদ্যাপীঠ , গুজরাট বিদ্যাপীঠ , বেঙ্গল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠিত হয় । দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন , মতিলাল নেহেরু , বিঠলভাই প্যাটেল, বল্লভ ভাই প্যাটেল , চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারী প্রমুখ আইন ছেড়ে এই আন্দোলনে যোগ দেন । সুভাষচন্দ্র বসু আই .সি . এস এর চাকরি ছেড়ে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন । তিলক স্বরাজ তহবিল “ গঠিত হয়, এই তহবিলে এক কোটি টাকা জমা পড়ে । 1921 খ্রিস্টাব্দে প্রিন্স অব ওয়েল ভারতে এলে বোম্বাই ও কলকাতায় ধর্মঘট হয় । 

বাসন্তী দেবী , সরোজিনী নাইডু , জ্যোতির্ময় গঙ্গোপাধ্যায় , উর্মিলা দেবী ,  হেমাপ্রভা মজুমদার প্রমুখ নারী এই আন্দোলনে যোগ দেন । 1922 খ্রিস্টাব্দে 5 ফেব্রুয়ারি উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলার চৌরিচৌরা নামে দুটি গ্রামের উত্তেজিত জনতা 22 জন পুলিশ কে পুড়িয়ে মারে । অহিংস আন্দোলন সহিংস পথে গেলে 1922 খ্রিস্টাব্দে এর 11 ই ফেব্রুয়ারি আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয় । 10 শে মার্চ গান্ধীজিকে গ্রেফতার করে ছয় বছর কারাদণ্ড ও জহরলাল নেহেরু কে 18 মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয় । 

স্বরাজ্য দল : 

1922 খ্রিস্টাব্দে গয়া কংগ্রেস অধিবেশনে চিত্তরঞ্জন দাশ ,  মতিলাল নেহেরু , হাকিম আজমল খাঁ ,বিঠলভাই প্যাটেল , মালব্য , শ্রীনিবাস আয়েঙ্গার,  কেলকার , জয়াকার , সত্যমূর্তি প্রমুখ পরিবর্তনের সমর্থক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ও আইন সভায় প্রবেশ এর পক্ষে মত দেন । অন্যদিকে বল ভাই প্যাটেল , রাজেন্দ্রপ্রসাদ , ডাক্তার আনসারী , চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী প্রমুখ ছিলেন পরিবর্তনের বিরোধী । তারা সভাপতি চিত্তরঞ্জন দাশের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন । পরিবর্তনের সমর্থকরা ভোট পায় 890 টি ও বিরোধীরা পায় 1740 টি । মতিলাল নেহেরু ও চিত্তরঞ্জন দাস 1923 খ্রিস্টাব্দের 1 জানুয়ারি ” স্বরাজ ” দল গঠন করেন । চিত্তরঞ্জন দাশ ছিলেন সভাপতি ও মতিলাল নেহেরু ছিলেন সাধারণ সম্পাদক । 

1923 খ্রিস্টাব্দে নির্বাচনে 62 লক্ষ লোক অংশ নেয় । কেন্দ্রীয় আইন সভায় 101 টি আসনের মধ্যে স্বরাজ দল প্রায় 42 টি আসন । বোম্বাই যুক্তপ্রদেশ ও আসামে এই দল সাফল্য পায় । বাংলা এবং মধ্যপ্রদেশে এই দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় । 1925 খ্রিস্টাব্দে বিঠলভাই প্যাটেল কেন্দ্রীয় আইন সভায় সভাপতিত্ব বা স্পিকার নির্বাচিত হন ।     স্বরাজ দল মুসলমান সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হয়ে জাতীয়তাবাদী দল বা ন্যাশনালিস্ট পার্টি গঠন করেন । 

1923 খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে বাংলার সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি , মাদ্রাজে  শেষাগ্রী আইয়ার , বোম্বের পরাঙ্জপে ,  উত্তরপ্রদেশের চিন্তামণি , এইচ. কুঞ্জরু , প্রমুখ নেতা পরাস্ত হন । চিত্তরঞ্জন দাশ  কলকাতার মেয়র নির্বাচিত হন ও সুভাষচন্দ্র বসু মুখ্য কার্যনির্বাহী অফিসার নির্বাচিত হন । বল্লভ ভাই প্যাটেল আমেদাবাদ কর্পোরেশনের , জহরলাল নেহেরু এলাবাদ কর্পোরেশনের , রাজেন্দ্র প্রসাদ পাটনা কর্পোরেশনের , মেয়র নির্বাচিত হন । স্বরাজ্য দল 1924 খ্রিস্টাব্দে আলেকজান্ডার মুদিম্যান  কমিটি ও লি কমিশনের রিপোর্টের প্রতিবাদ করে।  1925 খ্রিস্টাব্দের চিত্তরঞ্জন এর মৃত্যু হয় । 1926 খ্রিস্টাব্দে স্বরাজ্য দল তিনভাগে ভাগ হয়  যথা ,  স্বরাজ্য দল , রেসপনসিভিস্টরা  ইন্ডিপেন্ডেন্ট কংগ্রেস পার্টি । 1926 খ্রিস্টাব্দে নির্বাচনে 104 আসনের মধ্যে স্বরাজ দল প্রায় 40 টি আসন । বাংলায় তারা অধিকাংশ আসন পায় । বিহার ও উড়িষ্যাতে রেসপনসিভিস্টরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল । মধ্য প্রদেশ ,পাঞ্জাব , উত্তর প্রদেশে স্বরাজ্য দল হেরে যায়

সাইমন কমিশন : 

1919  খ্রিস্টাব্দে শাসন ব্যবস্থা পর্যালোচনা করতে সাইমন কমিশন নিযুক্ত হয় 1927 খ্রিস্টাব্দে । স্যার জন  সাইমনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিশনে কোন ভারতীয় সদস্য ছিল না । এজন্য একে অল হোয়াইট কমিশন বলা হয় । 1928 খ্রিস্টাব্দের 3 ফেব্রুয়ারি সাইমন কমিশন বোম্বাইতে আসে । মুসলিম লীগের সভাপতি মোঃ ইয়াকুব সাইমন কমিশন বয়কট করেন । মুসলিম লীগ , হিন্দু মহাসভা এবং লিবারেল ফেডারেশন সাইমন কমিশন বয়কটের এর সিদ্ধান্ত নেয় । 1928 খ্রিস্টাব্দে বোম্বাইয়ের “সাইমন ফিরে যাও” ধ্বনি ওঠে । লালা লাজপত রায় কমিশন বিরোধী মিছিল পরিচালনা করতে গিয়ে পুলিশের হাতে প্রহুত হন । 1930 খ্রিস্টাব্দের 13 ই জানুয়ারি কমিশন তাজা রিপোর্ট পেশ করে । এই রিপোর্টের ভিত্তিতে 1935 খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইন রচিত হয় । 

কংগ্রেসের পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি : 

1927 খ্রিস্টাব্দে ভারত সচিব বার্কেনহেড সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে ভারতীয়দের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন । এর জবাবে 1927 খ্রিস্টাব্দে এর 27 শে ডিসেম্বর জাতীয় কংগ্রেসের মাদ্রাজ অধিবেশনে সুভাষচন্দ্র বসু ও জহরলাল নেহেরু পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি উত্থাপন করে । 1928 খ্রিস্টাব্দের 12 ই ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে এম.এ. আনসারীর নেতৃত্বে একটি সর্বদলীয় সভা অনুষ্ঠিত হয় । এই সভায় সাইমন কমিশনের বিরোধিতা করা হয় । 1928 খ্রিস্টাব্দে 19 মে বোম্বাই মিটিংয়ে মতিলাল নেহেরুকে চেয়ারম্যান নিযুক্ত করে একটি কমিটি গঠিত হয় ভারতের ভবিষ্যৎ সংবিধান রচনা করতে । 1928 খ্রিস্টাব্দে আগস্ট মাসে সর্বদলীয় লখনও সম্মেলনের অধিবেশনে মতিলাল নেহেরু সংবিধানের খসড়া টি পেশ করেন । এটি নেহেরু রিপোর্ট নামে পরিচিত । মুসলিম লীগের নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং হিন্দু মহাসভার নেতা এম. আর জয়াকার এই রিপোর্টের বিরোধিতা করেন । 1929 খ্রিস্টাব্দে 28 মার্চ মুসলিম লীগের দিল্লি অধিবেশনে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ নেহেরু রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে 14 দফা দাবি পেশ করেন । নেহেরু রিপোর্টের ভারতের জন্য ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস দাবি করা হয় । 

আইন অমান্য আন্দোলন (1930 – 1934) : 

আন্দোলন শুরুর পূর্বে 1930 খ্রিস্টাব্দে 30 শে জানুয়ারি গান্ধীজী সরকারের কাছে 30 দফা দাবি পেশ করেন তার ” ইয়ং ইন্ডিয়া ” পত্রিকার মাধ্যমে গান্ধীজী লবন আইন ভঙ্গের জন্য 1930 খ্রিস্টাব্দে 12 ই মার্চ ডান্ডি অভিযান করেন । গান্ধীজির সঙ্গে 78 জন ( মতান্তরে 79 জন ) স্বেচ্ছাসেবী 24 দিনে 241 মাইল পথ অতিক্রম করে ডান্ডি পৌঁছান । 6 গান্ধীজী স্বহস্তে লবণ তৈরি করে লবণ আইন ভঙ্গ করে আইন অমান্য আন্দোলন সূচনা করেন । 

গান্ধী আরউইন চুক্তি (1931) : 

তেজ বাহাদুর সপ্রু , ডক্টর জয়াকার এবং অন্যান্যদের প্রচেষ্টায় 1931 খ্রিস্টাব্দের 5 মার্চ gandhi-irwin চুক্তি বা দিল্লি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় । কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসাবে গান্ধীজী ইংল্যান্ডে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে যেতে রাজি হন । 

আইন অমান্য আন্দোলন দ্বিতীয় পর্যায় : 

দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে gandhi-irwin চুক্তির শর্তাদি কার্যকরী   না হওয়ায়,  উত্তরপ্রদেশে খাজনা বন্ধ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য জহরলাল নেহেরু ও পুরুষোত্তমদাস ট্যান্ডনকে কারারুদ্ধ করা হয় । উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ আবদুল গফফর খান এর লাল কুর্তা বাহিনী কে বেআইনি ঘোষণা করা হয় । 1932 খ্রিস্টাব্দের 4 জানুয়ারি মাসে সরকার চারটি নতুন দমনমূলক অর্ডিন্যান্স জারি করেন । 1932 খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে গান্ধীজিকে বন্দি করা হয় । সরকারের দমননীতি বৃদ্ধি পায় । বিলেতের ইন্ডিয়া লীগ পরিচালিত ডেলিগেশন রিপোর্টে দমন নীতির একটি প্রকট হয়ে ওঠে । 1933 খ্রিস্টাব্দে গান্ধীজীর কারামুক্তির পর তিনি হরিজন আন্দোলনে মনোনিবেশ করেন । 1934 খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে বিহারে ভূমিকম্পের পর এই আন্দোলন চাপা পড়ে যায় । 4 মে পাটনায় অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির অধিবেশনে অনুষ্ঠানিকভাবে আইন অমান্য আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয় । 

মহাত্মা গান্ধীর ভারতছাড়ো আন্দোলন বা আগস্ট আন্দোলন : 

1939 খ্রিস্টাব্দে 3 সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ আরম্ভ হলে ভারত সরকার ভারতকে যুদ্ধরত দেশ ঘোষণা করে । 1940 খ্রিস্টাব্দে রামগড় অধিবেশনে কংগ্রেস পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি করে । 1940 খ্রিস্টাব্দের 8  আগস্ট বড়লাট লিনলিথগো ঘোষণা করেন যে — 

1) যুদ্ধান্তে ভারতকে ডোমিনিয়ন এর মর্যাদা দেয়া হবে ।

2) বড়লাটের কার্যনির্বাহী সমিতিতে ভারতীয় সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে ।

3) ভারতীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি যুদ্ধ উপদেষ্টা পর্ষদ গঠন করা হবে ।

4) যুদ্ধান্তে ভারতের সংবিধান রচনার জন্য একটি গণপরিষদ গঠন করা হবে । এটি আগস্ট ঘোষণা নামে পরিচিত 1941 খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে বড়লাটের কার্যনির্বাহী কমিটিতে সদস্য সংখ্যা 7 থেকে হারিয়ে 12 করা হয় । কিন্তু কংগ্রেস ও মুসলিম লীগে যোগ দেয়নি

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Our team dm developments north west. Explore your city business guide– . English songs lyrics.