বেন্থাম প্রবর্তিত স্থূল বা অসংযত উপযোগবাদ তত্ত্বটি আলোচনা কর | Explain critically Bentham’s theory of Gross Utilitarianism.

ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে ইংরেজ দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক শ্রীমতী জেরেমি সুখবাদ বেন্থাম (Jeremy Bentham) যে সুখবাদ প্রচার করেন তা ‘অসংযত পরসুখবাদ উপযোগবাদ’ (Gross Utilitarianism) নামে পরিচিত। বেস্থাম মনস্তাত্ত্বিক (Psychlogical Hedonism) ও আত্মসুখবাদ (Egoism) সমর্থন করেও ঐ প্রকার সুখরাম থেকে পরসুখবাদ বা উপযোগবাদ অনুমান করেন। মনস্তাত্ত্বিক সুখবাদীরূপে বেন্থাম বলেন যে, মানুষ তার স্বভাববশে সুখ কামনা করে, এবং আত্মসুখবাদীরূপে বলেন, মানুষ যে সুখ কামনা করে তা তার নিজসুখ। মনস্তাত্ত্বিক সুখবাদে বেন্থাম বলেন, মানুষের ‘প্রকৃতি মানুষকে সুখ ও দুঃখ এই দুটি সাম্রাজ্যের অধীন করে রেখেছে, যেখানে মানুষের একমাত্র লক্ষ্য হল দুঃখকে পরিহার করে সুখের অন্বেষণ করা। আত্মসুখবাদীরূপে বেছামের অভিমত। হল, স্বভাববশে মানুষ কেবল তার নিজসুখই কামনা করে—অপরের সুখের কামনার মধ্য দিয়েও তার নিজসুখের দাবীই প্রধান্য পায়। বিনিময়ে কিছু পাবার জন্যই মানুষ অপরের প্রতি দয়াদাক্ষিণ্য ইত্যাদি প্রদর্শন করে; অর্থাৎ নিজস্বার্থই মানুষের কাছে পরমার্থ। বেছাম বলেন, ‘স্বপ্নেও এমন চিন্তা কোরো না যে, মানুষ তার কনিষ্ঠ অঙ্গুলী নাড়িয়েও তোমার সেবা করবে যদি না সে জানে যে তাতে (ঐ সামান্য কনিষ্ঠ অঙ্গুলী হেলনে) তার কিছু স্বার্থসিদ্ধি হতে পারে। এ প্রকার মনস্তাত্ত্বিক আত্মসুখবাদ থেকেই বেছাম তাঁর নৈতিক পরসুখবাদ বা উপযোগবাদে উপনীত হতে চেয়েছেন। উপযোগবাদে বেছামের অভিমত হল, মানুষ যদিও স্বভাববশে নিজসুখ কামনা করে তথাপি মানুষের উচিত ‘সর্বাধিক মানুষের সুখ কামনা করা। পরসুখই হচ্ছে নৈতিক বিচারের মানদণ্ড। যে কাজ বহুজনের সুখ উৎপাদনে উপযোগী তা ‘ভাল’ কাজ, আর যে কাজ ঐ প্রকার সুখ উৎপাদনে উপযোগী নয় তা ‘মন্দ” কাজ। সুখ উৎপাদনের উপযোগিতাই নৈতিক বিচারের মানদণ্ড।

বেছামের মতে, বিভিন্ন সুখের মধ্যে কোন গুণগত পার্থক্য নেই, পার্থক্য কেবল পরিমাণগত। লাল ফুল ও নীল ফুলের মধ্যে যেমন গুণগত পার্থক্য আছে, দৈহিক সুখ ও মানসিক সুখের মধ্যে তেমন গুণগত পার্থক্য নেই। লাল ফুলকে আমরা ‘নীল’ বলি

বিভিন্ন সুখের মধ্যে গুণগত পার্থক করার জন্যই বেহানের সুখবাদকে পরবাদ ा উপযো (Gross Altruism or Ulititarianism) হয়। ছেম বলেন, ‘Quantity of pleasures being equal, pushpin is, as good as poetry’ অর্থাৎ ‘পরিমাণের, খেলার সুখ (দৈহিক সুখ) • ( সুখ তুল্যমূল্য দৈহিক সুদের পরিমাণ যদি মানসিক পরিমাণ অপেক্ষা বেশী হয় দৈহি কামা উচিত। জোনের সুখের পরিমাণ দের সুখ অপেক্ষা বেশী হয় তাহলে ১ পানভোজনের সুখই কাম্য হওয়া উচিত। সহজকরায়, বেহানের মতে সুখ মাত্রই অি এসম্পন্ন হওয়ায়, দুটি সুখের মধ্যে যেটির পরিমাণ বেশী, সেই অধিক পরিমাণের সুখটিকেই নির্বাচন করা উচিত।

সুখের পরিমাণ নির্ধারণের জন্য বেছাম সুখের সাতটি নিকের বা মানের উল্লেখ করেছেন। (1) ব্রা (intensity), (২) স্থায়িত্ব (duration), (৩) নৈকট্য (proximity), (a) (certainty). (e) Profe (parity). (6) erst (fecundity) (1) বিভূতি (extent)। পরিমাণ নির্ধারক এই সাতটি দিককে একযোগে বলা হয় ‘সুখের’ (Seven dimensions of pleasure)। সাতটি দিকের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা-

(১) (intensity): যে সুস্থ অপেক্ষাকৃতভাবে বেশী তীর, সেটাই কামনা করা । দৈহিক সুখ মানসিক সুখ অপেক্ষা বেশী তীব্র হওয়ায়, বেছানের মতে, দৈহিক কামনা করা উচিত। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, বোমের এই অভিমত গ্রহণ করলে দৈহিক সুখের দাবীই মানুষের কাছে বড় হয়ে দেখা দেয় পানভোজন, আমোদ-প্রমোদ – অপেক্ষা অধিকতর কামারূপে বিবেচিত হয়।

(২) (duration): ক্ষণিক সুখ অপেক্ষা দীর্ঘস্থায়ী সুখই বেশী কামা। (৩) নৈকট্য (proximity): কাজের সুখ দূরের সুখ অপেক্ষা, বর্তমানের সুখ ভবিষ্যতের বেশী কামা

(৩) নিশ্চয়তা (certainty): অনিশ্চিত সুখ অপেক্ষা নিশ্চিত সুখ বেশী কামা। (৩) বিশুন্ধ (purity): কোন সুখই ‘মাত্রসুখ’ বা ‘বিশুদ্ধসুখ’ নয়। সুধের সঙ্গে দুবে দেশী সর্বদাই যুক্ত থাকে। যে সুখ কম দুঃখানুবিদ্ধ তাকেই এখানে “বিশুদ্ধসুন” কলা হয়ে বেশী মুখোমুদ্ধি সুখ অপেক্ষা কম দুঃখবি সুখ অধিকতর কানা।

(৬) উর্বরা (fecundity): যে সুখ একা আসে না, অনা অনেক সুখের সঙ্গে

অন্য সুখের সঙ্গে আসে না বা অন্য সুখ উৎপন্ন করতে পারে না, তাকে বলা হয় সুখ’ বা ‘বন্ধ্যা সুখ’। অনুর্বর সুখ অপেক্ষা উর্বর সুখ অধিকতর কাম্য।

(1) বিস্তৃতি ( extent): যে সুখ অনেকে ভোগ করতে পারে তাকেই বলা হয় ” সুখ’। কেবল একজন বা কয়েকজন ভোগ করতে পারে এমন সুখের চেয়ে, অনেকে ভোগ করতে পরে এমন ব্যাপকতর সুখ অধিকতর কামা। প্রকৃতপক্ষে, বেছামের পরসুখবাদের মূল কথাই হল সুখের বিস্তার বা ব্যাপকতর সুখ—‘সর্বাধিক লোকের সর্বাধিক সুখ’। উল্লিখিত সুখের সাতটি বৈশিষ্টা বা দিকের মধ্যে এই সপ্তম বৈশিষ্টাটি, এজনা, বেস্তামের পরসুবাদে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।

সপ্তমানের দ্বারা সুখের এইপ্রকারে পরিমাণ নির্ধারণ প্রণালীকে বলা হয় ‘সুখের গণনা প্রণালী’ (Hedonistic calculus)। বেশ্বাম বলেন, ‘সপ্তমানের তুলাদণ্ডে সুখ ও দুঃখরে ওজন করে তুলাদণ্ডের অবস্থান অনুসারে, কোন্ দিকটি চাওয়া উচিত বা অনুচিত তা নির্ধারণ কর’। দুঃখের তুলনায় সুদের পরিমাণ বেশী হলে কোন কাজকে ‘উচিত কাজ, আর সুখের তুলনায় দুঃখের পরিমাণ বেশী হলে কোন কাজকে ‘অনুচিত কাজ’ বলতে হবে। সুখ-দুঃখের পরিমাণ তীব্রতা, স্থায়িত্ব প্রভৃতি সাতটি মানের দ্বারাই নির্ধারণ করতে হবে।

বেস্তামের পরসুখবাদের মূল ভিত্তি হল আত্মসুখবাদ। কাজেই প্রশ্ন হল — মানুষ স্বভাবতই নিজসুখ কামনা করলে, অপরের সুখ সে কামনা করবে কেন? অর্থাৎ আত্মসুখবাদ থেকে পরসুখবাদে যাওয়া যাবে কিভাবে? প্রশ্নোত্তর প্রসঙ্গে বেন্থাম চার প্রকার বাহ্য-নিয়ন্ত্রণের (External sanctions) উল্লেখ করেছেন, যथ(১) সামাজিক নিয় (Social sanction), (২) রাষ্ট্রীয় বা রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ, (Political sanction), (৩) ধর্মীয় নিয়ন্ত্রণ (Religions sanction) ও (৪) প্রাকৃতিক নিয়ন্ত্রণ (Physical or Natural sanction)। এইসব বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণশক্তি আত্মকেন্দ্রিক মানুষকে অপরের সুখ কামনা করতে বাধা করে। সামাজিক বিধি অমান্য ক’রে অপরের স্বার্থবিরোধী কাজ করলে সমাজ ব্যক্তিকে নানাভাবে শাস্তি দেয়। ঐ প্রকার শাস্তির ভয়েই মানুষ অপরের হিত কামনা করতে বাধ্য হয়। রাষ্ট্রীয় নিয়ম অমান্য করে প্রতিবেশীর স্বার্থবিরোধী কাজ করলে রাষ্ট্র ব্যক্তিকে শান্তি দেয়। ঐ প্রকার শাস্তির ভয়েই মানুষ অপরের কল্যাণ কামনা করতে বাধ্য হয়। ধর্মভীরু ব্যকিদা বিশ্বাস, ঈশ্বরের নির্দেশে স্বার্থপর ব্যক্তি মৃত্যুর পর নরকভোগ করে আর পরার্থপর ব্যক্তি মৃত্যুর পর স্বর্গে গমন করে। নরকভোগের ভীতির জন্যই মানুষ অপরের মঙ্গল কামনা করে। প্রাকৃতিক নিয়ম লঙ্ঘন করলে কষ্ট পেতে হয়। ‘আগুন সকল ক্ষেত্রেই দহন করে এটা প্রাকৃতিক নিয়ম। এই নিয়ম অমান্য করে আগুনে হাত দিলে হাত দক্ষ হবে এবং কষ্ট পেতে হবে। এইপ্রকার প্রাকৃতিক নিয়ম লঙ্ঘন করার জন্য যে দুঃখকষ্ট ভোগ তাওমানুষকে অপরের হিত কামনা করতে শেখায়। বেছানের মতে, এইপ্রকার বাইরের নানাবিধ শাস্তির ভয়ে আত্মকেন্দ্রিক মানুষ অপরের হিত কামনা করতে বাধা হয়। এই বাধ্যতাবোধকে বেন্থাম বলেছেন ‘নৈতিক (Moral obligation)। বাধ্যতাবোধ

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Bhogeshwari developers pen raigad. Dm developments north west. Kantara varaha roopam songs lyrics in english and kannada songs lyrics.