তর্ক ব্যাখ্যা কর। Explain the concept of ‘Tarka”.
উত্তর৷ ভূমিকা : ভারতীয় দর্শনের আস্তিক স্কুলসমূহের মধ্যে বস্তুবাদী দর্শন হিসেবে ন্যায়দর্শন স্বাধীন চিন্তা ও বিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং এ দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি গৌতম। ন্যায়দর্শনের মূলভিত্তি হলো ‘ন্যায়সূত্র’। নৈয়ায়িকদের মতে, কারণরূপ ঘটনা সবসময় কার্যরূপ ঘটনার আগে ঘটবে, যদিও কারণ কার্যের পূর্ববর্তী ঘটনা তবুও যে কোন পূর্ববর্তী ঘটনা কারণ নয়। কারণকে কার্যের অপরিবর্তনীয় পূর্ববর্তী ঘটনা হতে হবে। আবার যে কোন অপরিবর্তনীয় পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণ বলা যায় না, যেমন- দিন-রাত্রির অপরিবর্তনীয় পূর্ববর্তী ঘটনা হলেও দিনকে রাত্রির কারণ বলা যায় না। সুতরাং যে অপরিবর্তনীয় পূর্ববর্তী ঘটনা শর্তহীন কেবল তাকেই কারণ বলা হয়। ন্যায়দর্শন অনুসারে বিশেষ করে অন্নম ভট্ট-এর মতে, কারণ তিন প্রকার। যথা : ১. সমবায়ী কারণ;
২. অসমবায়ী কারণ এবং
৩. নিমিত্ত কারণ।
নিমিত্ত কারণ : যে কারণ সমবায়ী ও অসমবায়ী কারণ হতে ভিন্ন তাকে নিমিত্ত কারণ বলে। অন্যকথায়, যে পদার্থটি যে কার্যের সমবায়ী কারণ নয়, অসমবায়ী কারণও নয়, অথচ কারণ হয়, সেই পদার্থ সেই কার্যের নিমিত্ত কারণ হয়। যেমন— বস্ত্রের নিমিত্ত কারণ হলো- তাঁতী, তাঁত, মাকু, আকাশ, বাতাস ইত্যাদি। ঘটের নিমিত্ত কারণ হলো- কস্তুকার, তার চাকা, দণ্ড, ঈশ্বর, আকাশ, বাতাস ইত্যাদি। নিমিত্ত কারণকে কর্তাও বলা যায়, যার চেষ্টায় উপাদান থেকে কার্য উৎপন্ন হয়। নিমিত্ত কারণ বিনাশে কার্যের বিনাশ হয় না। এ তিন প্রকার কারণের মধ্যে যে কারণটি অসাধারণ হয়, অন্য কারণ অপেক্ষা উৎকৃষ্ট তাকেই করণ বলা হয়। তবে নিমিত্ত কারণই যে করণ হয় তা নয়, যে কোন কারণই করণ হতে পারে। কিন্তু কার্যকারণভাব পর্যালোচনা প্রসঙ্গে সমবায়ী কারণ ও অসমবায়ী কারণকে করণরূপে ব্যবহার করা হয় না। নৈয়ায়িকদের মতে, নিমিত্ত কারণ দু’প্রকার। যথা :
ক. সাধারণ নিমিত্ত কারণ এবং
খ. অসাধারণ নিমিত্ত কারণ।
ক. সাধারণ নিমিত্ত কারণ : সাধারণ নিমিত্ত কারণ সব রকম কার্যের ক্ষেত্রে উপস্থিত থাকে। ন্যায়দর্শন সাধারণ নিমিত্ত কারণ আছে। যথা : ১. ঈশ্বর, ২. ঈশ্বরের জ্ঞান, ৩. ঈশ্বরের ইচ্ছা, ৪. ঈশ্বরের প্রযত্ন, ৫. দিক, ৬. কাল, মতে, আটটি
৭. অদৃষ্ট এবং ৮. প্রাগভাব। এগুলোর অনুপস্থিতিতে কোন কার্যই ঘটতে পারে না।
খ. অসাধারণ নিমিত্ত কারণ : অসাধারণ নিমিত্ত কারণ কার্যভেদে নানা রকম। যেমন- বস্ত্র উৎপাদনের ক্ষেত্রে তাঁতি, তার মাকু ইত্যাদি। ঘট উৎপাদনের ক্ষেত্রে কম্ভুকার, তার দণ্ড ইত্যাদি।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ন্যায়দর্শন কারণতত্ত্ব সম্পর্কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন। তাঁদের কারণতত্ত্বের সঙ্গে পাশ্চাত্য দর্শনিক মিল-এর সংগতি লক্ষ্য করা যায়। কারণ হলো সদর্থক ও নঞর্থক শর্তের সমষ্টি’-মিলের এ মতের সঙ্গে ন্যায়দর্শনের কারণতত্ত্বের গুরুত্বপূর্ণ সাদৃশ্য রয়েছে।