সেসময় ভারতে ব্রিটিশবাহিনিতে কর্মরত এক মিলিটারি সার্জন চারমাসের ছুটিতে দেশে ফিরেছিলেন। ভুটান নামক আজব দেশটির কথা ইওরোপের মানুষকে জানানোর ইচ্ছা ছিল তাঁর। ব্যস লিখে ফেললেন একটা বই। সার্জন রেনীর ‘ভুটান এন্ড দ্য স্টোরি অব দ্য ডুয়ার ওয়ার’ বইটি ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। আমাদের ডুয়ার্সভূমির দুর্দান্ত ছবি উঠে এসেছিল সেই বই থেকে। দেড়শ বছর আগে ঠিক কেমন ছিল আমাদের ডুয়ার্স! যেসময় কলকাতায় জন্ম নিচ্ছেন বিবেকানন্দ-রবীন্দ্রনাথ আর কোচবিহারে মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ, সেসময় দীর্ঘদিন ধরে লুণ্ঠনে অত্যাচারে ও যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত ডুয়ার্সের জীবনচিত্র উঠে আসে মানসপটে। আজকের আগ্রহী বাংলাভাষীদের সুবিধার্থে এবং জনপদের ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের তাগিদে ওই সুবিশাল গ্রন্থটি আক্ষরিক অনুবাদে নয়, ভাবানুবাদে মনস্ক পাঠকের দরবারে নিবেদিত হল, ধারাবাহিক হিসেবে।
প্রাক কথন ভুটান কখন থেকে দুই দশক কিংবা ততধিক কাল তিব্বতি শাসনের অধীনে ছিল কিংবা কোচবিহার রাজবংশের কোন শরিক (টেপু) ভুটানে শাসন শুরু করেছিলেন, তা পণ্ডিতদের বিতর্কিত বিষয়। কিন্তু ২৬০৩০’-২৮০ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮০৪৫-৯২০২৫’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের দেশ ভুটান শুধু দু’দশক নয়, দুই শতক ধরে ছিল তিব্বতিদের দখলে। ভুটানের উত্তরে তিব্বত, দক্ষিণে রায়কত রাজ্য, কোচবিহার ও অসম, পশ্চিমে তিস্তা ও করতোয়া, পূর্বে ধানসিঁড়ি নদী ও তোয়াও রাজার রাজত্ব। ভুটানের দৈর্ঘ্য ২২০ মাইল ও প্রস্থ ৯০ মাইলের মত। তবে, ১০-৩০ মাইল প্রন্থে ওই দেশের কোনও কোনও স্থান উচ্চ পর্বতাকীর্ণ ও দুর্গম। পূর্ব তিব্বতের পটচিন এবং উত্তর-পশ্চিমে আরি তিব্বতিদের খাদ্য-পোশাক, ভাষা-সংস্কৃতির মধ্যে ফারাক বিস্তর। মঙ্গোলীয় জনজাতির সংমিশ্রণে উত্তর-পশ্চিমি তিব্বতিদের অশন-ভূষণ, ভাষা-সংস্কৃতির সঙ্গে লেপচা, ভুটিয়া, সিকিমি ও তিব্বতিদের যে মেলবন্ধন ঘটেছিল- আপাতদৃষ্টিতে সেসবের বিভাজন করা ছিল খুবই কঠিন। চিনা, ভুটিয়া, ধর্মভূটিয়া, নেপালি ভুটিয়া কিংবা সিকিমি ১২. ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির পুনর্গঠন সম্পর্কে আলোচনা