আবার আসিব ফিরে কবিতাটি কবি জীবনানন্দ দাশ এর “জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা ” সংকলনের অংশ।জীবনানন্দ দাশ ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম। জীবনানন্দের বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থ নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলনে পুরস্কৃত (১৯৫৩) হয়। ১৯৫৫ সালে শ্রেষ্ঠ কবিতা গ্রন্থটি ভারত সরকারের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করে। জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মাঝে রয়েছে রূপসী বাংলা, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, বেলা অবেলা কালবেলা, শ্রেষ্ঠ কবিতা ইত্যাদি।
আবার আসিব ফিরে কবিতা – জীবনানন্দ দাশ
আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে – এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয় – হয়তো বা শঙখচিল শালিকের বেশে,
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিঁকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব কাঁঠাল ছায়ায়।
হয়তো বা হাঁস হবো – কিশোরীর – ঘুঙুর রহিবে লাল পায়
সারাদিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধভরা জলে ভেসে ভেসে।
আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে
জলঙ্গীর ঢেউ এ ভেজা বাংলারি সবুজ করুণ ডাঙ্গায়।
হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে।
হয়তো শুনিবে এক লক্ষীপেঁচা ডাকিতেছে শিমুলের ডালে।
হয়তো খৈয়ের ধান সরাতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসে।
রূপসার ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক সাদা ছেঁড়া পালে
ডিঙ্গা বায় – রাঙ্গা মেঘে সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে,
দেখিবে ধবল বক; আমারে পাবে তুমি ইহাদের ভীড়ে।
আবার আসিব ফিরে কবিতার মূলভাব :
বাংলার বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি হাজার হাজার মানুষের মন ভরে দেয়। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অন্য যে কোন দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থেকে আলাদা। নদীমাতৃক বাংলাদেশের দুই পাশে শস্যক্ষেত্র, বাতাসে পাকা ধানের গন্ধ, শীতের কুয়াশা, শিমুলের ডালে বসে লক্ষ্মীপেঞ্চা, উঠোনের ঘাসে ধান ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শিশুরা, কিশোররা নদীর কর্দমাক্ত পালের মধ্যে সাঁতার কাটছে প্রকৃতি এগুলোই বাংলার মানুষের মন ভরিয়ে দেয়।
কবি জীবনানন্দ দাশ তার প্রিয় জন্মভূমির মায়া ত্যাগ করতে পারেন না। প্রিয় মাতৃভূমির সবুজ প্রকৃতি সব সময় কবির মনকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। তাই কবি তাঁর প্রিয় ধনসিন্দ্রীর তীরে ফিরে যেতে চেয়েছিলেন মৃত্যুর পরেও। কবির কাছে বাংলাদেশ সব দেশের সেরা। তাই কবি বাংলাদেশে ফিরে আসার আশা প্রকাশ করেছেন।
কবি জীবনানন্দ দাশ তার জন্মভূমি বাংলাদেশকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন। এই কারণে, তার স্বদেশের সবকিছু তার কাছে আশ্চর্যজনকভাবে সুন্দর হয়ে উঠেছে। তিনি তাঁর মৃত্যুর পরও বিভিন্ন ছদ্মবেশে বাংলার প্রকৃতিতে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন কারণ তিনি তাঁর জন্মভূমিকে ভালোবাসতেন। কখনও সে মূর্তির ছদ্মবেশে ফিরে আসতে চায়, কখনও সকালে কাকের মতো।
যে কোনো মূল্যে বাংলার মাটিতে ফিরতে হবে, এটাই কবির ইচ্ছা। কারণ, বাংলার সৌন্দর্য কবিকে যতটা মুগ্ধ করেছে, পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের সৌন্দর্য তা করতে পারেনি। উদ্দীপকের মামুনের ক্ষেত্রেও একই কাজ হয়েছে। তাই তিনি বাংলার মাটিতে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন। তাই আমরা বলতে পারি, একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক তার দেশকে ভুলতে পারে না।