হুসেন সাহীর আমলে বাংলার সাংস্কৃতিক জীবনের বিবরণ দাও।

অথবা হুসেন শাহী বংশের সাংস্কৃতিক কৃতিত্ব 

অথবা, বাংলার সাংস্কৃতিক জীবনে হুসেন শাহী রাজবংশের তাৎপর্য সংক্ষেপে আলোচনা করো

ভূমিকা: বাংলার স্বাধীন সুলতানি আমলে আলাউদ্দিন হোসেন শাহের রাজত্বকালে একাধিক কারণে স্মরণীয়। সামরিক কৃতিত্ব ও সাহিত্যের জন্য উজ্জ্বল হয়ে আছে। মূলত তিনটি কারণে হোসেন শাহী রাজত্ব খ্যাতি লাভ করেছে। প্রথমত এই সময় বাংলার সাম্রাজ্য সীমা বিস্তৃত হয়েছিল মধ্য যুগে আর কোন রাজবংশ বাংলা কে কেন্দ্র করে এত বড় রাজ্য গড়ে তুলতে পারিনি। দ্বিতীয়তঃ সাহিত্য-শিল্প মুদ্রা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এই ঐতিহাসিক তথ্য সুলভ হওয়ায় হোসেন শাহী বংশের ইতিহাস জানা সম্ভব হয়েছে। বাংলার অন্য কোন রাজবংশের এই সৌভাগ্য হয়নি। তৃতীয় সুলতান হোসেন শাহ ও তার পুত্র নকশা ছিলেন শ্রী চৈতন্য দেবের সমসাময়িক।

   হুসেন শাহী শাসকদের রাজত্বকালের রাজ্যের সীমানা সম্প্রসারণ সদর শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ ধর্ম সাহিত্য শিল্প এবং অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ বিকাশ বাংলার ইতিহাসে এই বিশিষ্ট করে রেখেছে।

 সাংস্কৃতিক জীবন :  হুসেন শাহী বংশের শাসকরা সাহিত্য ও শিল্পের প্রতি বিশেষভাবে অনুরক্ত ছিলেন। সাহিত্যের ক্ষেত্রে এই সময়ে একটি রেনেসাঁ বা নবজন্ম দেখা যায়। সংস্কৃত মহাকাব্য রামায়ণ ও মহাভারতের বঙ্গানুবাদ লৌকিক দেব দেবীর কাহিনী ও স্থানীয় সাহিত্যের বিকাশে আমাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ছিল। ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রভাবে যুগে পরিলক্ষিত হয়েছিল তবে ফারসি ও আরবি ভাষা অবহেলিত হয়নি।

  সকল ধর্মের প্রতি উদারতা ও সমন্বয় নীতি এযুগের সাংস্কৃতিক বিকাশ এর অন্যতম কারণ। বিজয় গুপ্ত হোসেন শাহ কে নিয়ে প্রতি তিলক যশোর রাজ খান বসু জগৎ ভূসন বলে উল্লেখ করেছেন। রূপ গোস্বামী সংস্কৃত রচনা করেন বিদগ্ধ মাধব ও ললিত মাধব কাব্য মালাধর বসু বাংলা অনুবাদ করেন ভগবত গীতা। হোসেন শাহের সেনাপতি পরাগল কার পৃষ্ঠপোষকতায় কবীন্দ্র পরমেশ্বর মহাভারতের অংশবিশেষ বঙ্গানুবাদ করেন। ছুটির খার পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ধ্যাকর নন্দী অশ্বমেধ পর্বের বঙ্গানুবাদ করেন। বিজয় গুপ্ত ও বিপ্রদাস পিপলাই এর মনসামঙ্গল ছিল উল্লেখযোগ্য। কয়েকজন মুসলিম পর্ণ্ডিত্ত হোসেন শাহের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিলেন।

   হুসেন শাহ রাজত্বকালে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হয়ে আছে শ্রীচৈতন্যের উত্থানের কারণে। সারা ভারত জুড়ে যে ভক্তি আন্দোলন কখন প্রচারিত হয়েছিল নবদ্বীপের চৈতন্য তার উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্ক। শ্রীচৈতন্য বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তন নগর সংকীর্তন সরকারি স্তরে বাধা পেয়েছিলেন এ তথ্য পাওয়া যায় না। ষোড়শ শতকে বাংলা সাহিত্যের বিকাশে শ্রীচৈতন্যের জীবনী কাব্যের বিশেষ অবদান আছে।

 তবে সর্বস্তরে সরকারি আমলারা এই নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছিলেন এ তথ্য মানতে নারাজ বহু ঐতিহাসিক। অনেক ক্ষেত্রে বৈষ্ণবদের উৎপাদন করা হতো। চৈতন্যের উড়িষ্যায় আশ্রয় গ্রহণ করতে হয়েছিল সম্ভবত এই কারণেই ডক্টর সুখময় মুখোপাধ্যায় এর মতে হোসেন শাহের বিদ্যা সাহিত্যের বাদলে ধর্মীয় পরায়ন ভারী নিদর্শন পাওয়া যায়।

 বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একটা পর্বকে হোসেন শাহী আমল বলা ও অযৌক্তিক । এ সময় যে স্বল্প সংখ্যক গ্রন্থ রচিত হয়েছিল তা বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেনি। এবং তার সৃষ্টির মূলে সুলতানের কোন প্রেরণা ছিল না। বৈষ্ণব পদাবলী বিকাশের সঙ্গেও হোসেন শাহের কোন যোগ ছিল না। হোসেন শাহের ধর্মীয় উদারতা ও হিন্দু মুসলমানের সমদর্শী তত্ত অতিরঞ্জিত। হিন্দুদের যোগ্য পদে নিয়োগের প্রথা অভিনব ছিল না। ইতিপূর্বে ইলিয়াস শাহী আমল থেকেই চলে আসছিল সবসময় দায়িত্বপূর্ণ পদের জন্য যোগ্য মুসলমান কর্মচারী না পাওয়া যাওয়াই হিন্দুদের নিয়োগ অনিবার্য হয়ে উঠলো। প্রশাসনিক সুবিধার্থে জন্য এ ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছিল।

মূল্যায়ন:

    হুসেন শাহী উৎকট রকমের হিন্দু বিদ্বেষী ও ধর্ম উন্মাদ ছিলেন না। তিনি নবদ্বীপে বৈষ্ণবদের ধর্মচর্চা বন্ধ করার চেষ্টা করেনি। এসময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অভাব ছিল না। শুধু তাই নয় হোসেন শাহী রাজত্বকালে মধ্যযুগের বাংলার নিজস্ব স্থাপত্যরীতি কেউ পৃষ্ট করার জন্য বিখ্যাত। সুলতান হোসেন শাহের আমলে নির্মিত ছোট সোনা মসজিদ, নুসরাত শাহের আমলে বড় সোনা মসজিদ ও কদম্রসুল মসজিদ এবং অসংখ্য সৌধ, সরাইখানা গোমতী দরজা প্রধান স্থাপত্য। আয়তনের বিশালতা ওম সূক্ষ্ম কারুকার্যের জন্য এগুলি বিখ্যাত। এভাবেই বাংলার ইতিহাসে হোসেন শাহী আমল এক অসামান্য সংস্কৃতিক নজির সৃষ্টি করেছে।

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Burhani traders pen raigad. Dm developments north west. Kantara varaha roopam songs lyrics in english and kannada songs lyrics.