কান্টের শর্তহীন আদেশ কি? এর বৈশিষ্ট্যসমূহ আলােচনা কর।

ভূমিকাঃ বিখ্যাত জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্টের চিন্তাধারায় আমরা বুদ্ধিবাদ বা বিচারবাদের সর্বশ্রেষ্ঠ। দার্শনিক বিচারধর্মী ব্যাখ্যা পাই। বুদ্ধিবৃত্তি জীব হিসেবে মানুষের মধ্যে একদিকে রয়েছে বুদ্ধিবৃত্তি এবং অন্যদিকে রয়েছে জীববৃত্তি। বুদ্ধিবৃত্তির কল্যাণেই মানুষ অপরাপর জীব থেকে পৃথক। তাই মানুষের উচিত বুদ্ধি বৃত্তিকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দেয়।

কান্টের শর্তহীন আদেশঃ আধুনিক নীতি দর্শনে কান্ট বুদ্ধিবাদ বা বিচারবাদের সব থেকে উল্লেখযােগ্য চিন্তবিদ। তার মতে, ‘সদিচ্ছা’ ছাড়া কোনাে কিছুই সৎ নয়। সদিচ্ছা হচ্ছে বুদ্ধি প্রসূত ইচ্ছা। তার মতে, মানুষের জীবন দু’টি ছকে বাঁধা, একটি হচ্ছে জীববৃত্তির ছক এবং অপরটি হচ্ছে বুদ্ধিবৃত্তির ছক। জীববৃত্তির নিয়ম অনুসারে মানুষের কাছে সুখই কাম্য এবং বুদ্ধিবৃত্তির নিয়ম অনুসারে মানুষ ইন্দ্রিয় সুখের পরিবর্তে বুদ্ধির উচ্চতর নিয়ম অনুসারে কাজ করে।

নিজ গুণে গুণান্বিত হিসেবে শর্তহীন আদেশঃ শর্তহীন আদেশ হচ্ছে এমন এক ধরনের আদেশ, যা তার নিজ গুণেই গৃহীত হয়। কান্টের মতে, সব বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন মানুষের দ্বারা গৃহীত হতে পারে এমন ধরনের যদি কোনাে আচরণের নীতি থাকে, তাহলে তাকে তার নিজ গুণেই অবশ্যই গৃহীত হতে পারে এবং তাকে অবশ্যই শর্তহীন আদেশ হতে হবে।

কর্তব্যের জন্য কর্তব্যঃ কান্ট বলেন যে, সেই কাজই ন্যায়, যা কর্তব্যের জন্য সম্পাদিত হয়। কর্তব্যের জন্য কর্তব্য হচ্ছে জীবনের প্রকৃত নিয়ম। কোনাে ফলাফলের দিকে না তাকিয়ে কেবল কর্তব্যের জন্য কর্তব্য করতে হবে। ভয় ভীতিকে উপেক্ষা করে সত্য কথা বলতে হবে এবং জগৎ যদি ধ্বংস হয়, তথাপি ন্যায়পরতাকে রক্ষা করতে হবে। তাই কান্টের মতে, নৈতিক নিয়ম শর্তহীন,আদেশ, যা প্রতিটি নৈতিক কর্তার জন্য অপরিহার্য এবং যার নিজস্ব মূল্য রয়েছে।

মানুষ নিজেই লক্ষ্য, পন্থা নয়ঃ কান্ট বলেন, “এমনভাবে কাজ করতে হবে, যাতে তুমি নিজেকে বা অপর কাউকে কোনাে সময় পন্থা বা উপায় হিসেবে মনে না করে সব সময় লক্ষ্য হিসেবে গণ্য কর।” মানুষ নিজেই লক্ষ্য এবং মানুষকে অন্য কোনাে লক্ষ্য হিসেবে গণ্য করা উচিত নয়।

লক্ষ্য রাজ্যের সদস্য হিসেবে মানুষঃ কান্ট বলেন, “লক্ষ্য রাজ্যের সদস্য হয়ে আচরণ বা কাজ কর।” এই সূত্র দ্বারা কান্ট মানুষের নিজস্ব মূল্য রয়েছে, এ কথাটি বুঝাতে চান। লক্ষ্য রাজ্যের সদস্য হিসেবে প্রতিটি মানুষই একদিকে শাসক ও অপরদিকে শাসিত। শাসক হিসেবে প্রত্যেক মানুষই তার নিজের উপর নৈতিক নিয়ম চাপিয়ে দেয় এবং শাসিত হিসেবে প্রত্যেক মানুষই নৈতিক নিয়মকে পালন করে থাকে।

সুনিশ্চিত হিসেবে নৈতিক আদেশঃ কান্টের মতে, যেহেতু নৈতিক আদেশ শর্তহীন, সেহেতু এ ব্যক্তির ইচ্ছার বাইরের কোনাে লক্ষ্যর বিবেচনা থেকে উদ্ভূত হতে পারে না। কেননা প্রতিটি বাহ্যিক লক্ষ্যই অভিজ্ঞতাপ্রসূত এবং তা কেবল শর্তসূচক আদেশেই পর্যবসিত হয়।

শর্তহীন হিসেবে নৈতিক আদেশঃ কান্টের মতে, ফলাফলের পরিবর্তে উদ্দেশ্যের উপরে কোনাে ঐচ্ছিক ক্রিয়ার ন্যায়ত্ব বা অন্যায় নির্ভর করে। তিনি উদ্দেশ্যের ন্যায়ত্বের মানদণ্ড সম্পর্কে বলেন যে, একটা কাজ ন্যায় বা সঠিক হতে পারে না, যদি না তা নৈতিক কর্তার দ্বারা গৃহীত কোনাে সাধারণ নীতির উপর ভিত্তি করে সম্পাদিত হয়।

বাধ্যবাধকতাপূর্ণ হিসেবে নৈতিক আদেশঃ নৈতিক কর্তা হিসেবে মানুষের মধ্যে কর্তব্য সম্পাদনের জন্য বাধ্যবাধকতার বােধ জেগে উঠে। ঔচিত্য বা বাধ্যবাধকতার এই বােধের সঙ্গে আমাদের পছন্দ বা অপছন্দ জাতীয় প্রবণতার কোনাে সম্পর্ক নেই। এটা হচ্ছে বুদ্ধির একটা নিছক নির্দেশ বা আদেশ, যার সঙ্গে অপরাপর বাহ্যিক বিবেচনার কোনাে সম্পর্ক নেই।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, তিনি মানুষকে নৈতিকতার ক্ষেত্রে বুদ্ধির কাছে আবেদন জানানাের কথা বলে মানুষের মর্যাদাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাই কান্ট তার নৈতিক মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে যেসব যুক্তি উপস্থাপন করেন, সেগুলাের নীতিবিদ্যার আলােচনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট মূল্য রয়েছে

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Dds benoni hip hop dance school enroll now 083 6102168. Just a moment.... ის.